পরামর্শ: কর্মশালায় উপস্থাপনার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

নাজমুস সাকিব খান
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ২১

বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিজ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে হয়।  পোস্টার ও মৌখিক উপস্থাপনায় অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা ভীতি কাজ করে। শিক্ষার্থীরা যেন ভীতিমুক্ত এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এসব আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারে এ জন্য পরামর্শ দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান।

পোস্টার উপস্থাপনা
যেকোনো গবেষণা প্রস্তাবনা কিংবা ফলাফল উপস্থাপনের জন্য পোস্টার উপস্থাপনা খুবই জনপ্রিয় একটা মাধ্যম। পোস্টার উপস্থাপনার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। পোস্টারের শিরোনাম খুব বড় হলে কিংবা জটিল শব্দের প্রয়োগে প্রথমে যেকোনো পোস্টার গ্রহণযোগ্যতা হারায়। শিরোনাম হতে হবে সহজ, প্রাঞ্জল ও প্রচলিত শব্দের গাঁথুনিতে। পোস্টারটির প্রথম লক্ষ্যই থাকবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং আগ্রহ তৈরি করা। খুব বেশি জটিল কথা বা ছবি ব্যবহারে দর্শক এবং পোস্টার পরীক্ষকদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। এর চেয়ে যথাসম্ভব সহজ করে মূল বিষয়বস্তু বোধগম্য এবং চোখে পড়ার মতো ছবি ব্যবহার করে শ্রোতাদের পোস্টারের বর্ণনা করা প্রয়োজন। পোস্টারের সাইজ, রং এবং অক্ষরের ফন্টের ক্ষেত্রে খুবই যত্নশীল হতে হবে। এমন লেখা দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই যে লেখা দর্শকেরা পড়ার একটুও আগ্রহ পাবে না। পোস্টারে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স অবশ্যই থাকতে হবে। তবে চেষ্টা রাখতে হবে যেন খুব কম রেফারেন্স ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো উপস্থাপন করা যায়।

মৌখিক উপস্থাপনা
নিজের গবেষণা প্রস্তাবনা কিংবা ফলাফল বেশ কিছুটা সময় নিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার আরেকটি উপায় হচ্ছে ওরাল প্রেজেন্টেশন কিংবা মৌখিক উপস্থাপন। এখন মৌখিক উপস্থাপন বলতেই মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে তথ্য উপস্থাপনকে বোঝায়। সুতরাং সাবলীল মৌখিক উপস্থাপনের পাশাপাশি তথ্যসমৃদ্ধ স্লাইড তৈরি করা খুবই জরুরি। স্লাইডে অতিরিক্ত লেখার কোনো প্রয়োজন নেই। গৎবাঁধা লেখার চেয়ে এখানে বুলেটপয়েন্টে লেখা, ফ্লোচার্ট, বিভিন্ন রকম ডায়াগ্রামের মাধ্যমে সূচনা বক্তব্য, গবেষণাপদ্ধতি কিংবা প্রণালি এবং ফলাফল যথাযথ উপস্থাপন সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। স্লাইড সংখ্যা বেশি হলে যে উপস্থাপন সুন্দর হবে, ব্যাপারটা এমন না। এর থেকে জরুরি প্রাণবন্তভাবে সীমিত এবং প্রয়োজনীয় স্লাইডের মাধ্যমে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন। উপস্থাপনের সময় দর্শকদের সঙ্গে চোখের ভাববিনিময় খুবই জরুরি। শুধু স্লাইডের দিকে তাকিয়ে থেকে বিষয়বস্তু উপস্থাপনে দর্শকেরা একসময় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে তথ্যসমৃদ্ধ স্লাইড উপস্থাপনের পাশাপাশি শ্রোতাদের মনোযোগের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। মৌখিক উপস্থাপনার মাতৃভাষা কিংবা ইংরেজিতে হোক, এ ক্ষেত্রে প্রাঞ্জল এবং বহুল প্রচলিত শব্দচয়ন ব্যবহারের বিকল্প নেই। স্লাইড তৈরিতে কিছু বিষয় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন স্লাইডে অতিরিক্ত অ্যানিমেশন ব্যবহার না করা। যেকোনো সময় তৈরি করা অ্যানিমেশন সফটওয়্যারজনিত ত্রুটির জন্য সঠিকভাবে উপস্থাপিত না-ও হতে পারে। সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে স্লাইডগুলোর পিডিএফ ভার্সন জরুরি সময়ের জন্য সংরক্ষিত রাখা। এ ক্ষেত্রে অ্যানিমেশন কাজ না করলেও প্রেজেন্টেশন বাধাগ্রস্ত হবে না।

প্রেজেন্টেশনের শেষে কৃতজ্ঞতা স্লাইট থাকাটা জরুরি, সঙ্গে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স। উপস্থাপনের সময় কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেন বাদ না পড়ে যায় সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। প্রেজেন্টেশনের শেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপস্থাপন যদি সাবলীল, প্রাণবন্ত এবং তথ্যবহুল হয়, তবে প্রশ্ন-উত্তর পর্বও খুব স্বতঃস্ফূর্ত হবে বলে আশা করা যায়। তথ্যসমৃদ্ধ ওরাল প্রেজেন্টেশনের পর শ্রোতাদের আগ্রহ তৈরি হয় প্রশ্ন করার। ফলে উপস্থাপকের উপস্থাপনের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থাপককে খুব মনোযোগসহকারে প্রশ্নগুলো শুনতে হবে উত্তর দিতে তাড়াহুড়ো না করে একটু সময় নিয়ে ভেবে উত্তর দেওয়া শ্রেয়। যদি প্রশ্নের উত্তর তৎক্ষণাৎ দেখা সম্ভব না হয়, এ ক্ষেত্রে বিচলিত না হয়ে প্রশ্নকর্তাকে আশ্বস্ত করা প্রয়োজন যে তথ্য স্বল্পতার জন্য উপস্থিত প্রশ্নোত্তর দেওয়া সম্ভব না হলেও পরে অবশ্যই এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ওরাল প্রেজেন্টেশনের সার্থকতা নির্ধারিত হয় শ্রোতাদের সফল অংশগ্রহণের ওপর। এ জন্য উপস্থাপকের আন্তরিকতার বিকল্প নেই।

কর্মশালা
কোনো বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জনের জন্য বিষয়ভিত্তিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এ জন্য দেশ-বিদেশে কর্মশালার সময়সূচির হালনাগাদ তথ্য জানতে হবে। কর্মশালায় অংশগ্রহণের মূল দায়িত্ব হচ্ছে প্রশিক্ষণ পর্বে খুবই মনোযোগের সঙ্গে অংশগ্রহণ। প্রশিক্ষণের সময় খুঁটিনাটি তথ্য কিংবা দিকনির্দেশনা নোটবুকে টুকে রাখা, প্রয়োজনে ছবি তুলে রাখা। কর্মশালার একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব দলগত কাজ। সম্মিলিত এই প্রচেষ্টায় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়। দলের সদস্যদের মূল্যবান মতামত লিপিবদ্ধ করা হয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। দলগত কাজে একজন নির্বাচিত নেতা থাকেন, যিনি আলোচনার লক্ষ্য, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ করণীয় লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কর্মশালার শেষ পর্যায়ে প্রতিটি দল তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা উপস্থিত অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করে। এ ক্ষেত্রে পোস্টার কিংবা মৌখিক যেকোনোভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। কর্মশালায় অংশগ্রহণের সনদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় যেকোনো বিষয়ে মানসম্মত তথ্যবহুল পোস্টার কিংবা মৌখিক উপস্থাপনার প্রস্তুতি এবং সফলভাবে সম্পাদনের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নানা রকম কর্মশালায় অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেমিনার ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ হোক আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে স্বতঃস্ফূর্ত।

  • মনে রাখা জরুরি
  • নিত্যনতুন বিষয়ে আগ্রহ ধরে রাখা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়াশোনা।
  • প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা।
  • দৈনন্দিন লেখার অভ্যাস তৈরি করা।
  • যথাসম্ভব কনফারেন্স, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ।
  • ওয়াল প্রেজেন্টেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
  • কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখা।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত