Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

গবেষণা বাড়াতে রিসার্চ সেল তৈরির কাজ চলছে

গবেষণা বাড়াতে রিসার্চ সেল তৈরির কাজ চলছে

ড. এস এম আবদুল আওয়াল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ষষ্ঠ উপাচার্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি অধ্যাপনা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ড. এস এম আবদুল আওয়ালের দেশি-বিদেশি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে। তিনি পাবিপ্রবিতে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন

দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী কাজ করেছেন?

নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা ইতিমধ্যে অনেক কাজ করেছি। শিক্ষকের সমস্যা কাটানোর জন্য বিভাগগুলোতে অতিথি শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের আচরণবিধি তৈরি করেছি। রাত ৮টা পর্যন্ত মেডিকেল ও লাইব্রেরির সময় বাড়িয়েছি। জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া ছাত্র-ছাত্রী হলের সমস্যার সমাধান, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান বাড়ানোর চেষ্টা, মসজিদে মেয়েদের অজুর জায়গা করে দেওয়া, দেশবরেণ্য স্কলারদের অতিথি করে নবীনবরণের আয়োজন করা এবং জুলাইয়ে শহীদদের স্মরণে ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক ও ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। দুটি আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ কয়েকটি নতুন ভবনের কাজ শেষ হলেও সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না কেন?

আবাসিক সংকট ও ক্লাসরুমের সংকট কাটানোর জন্য আমাদের কয়েকটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ। সেগুলো দ্রুত চালু করার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। তবে ভবনগুলো ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না করে ভবনগুলো খুলে দিতে পারি না। ভবনগুলোর সব ধরনের কাজ সঠিকভাবে শেষ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি অ্যাসেসমেন্ট কমিটি কাজ করছে। এ কমিটির প্রতিবেদন পেলে বিবেচনা করে ভবনগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতিসহ সব ধরনের রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। নির্বাচিত সরকার এলে ক্যাম্পাসে রাজনীতির পরিবেশ কেমন থাকতে পারে?

ক্যাম্পাসে এখন রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। আমি চাই, নির্বাচিত সরকার এলেও এই আদেশ বহাল থাকুক। তা বহাল থাকলে খুব দ্রুত ভালো কিছু হবে। তবে এটা নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ওপর। আমরা মনে করি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনীতি বন্ধ থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গল। ছাত্ররা আমাদের এখন যেভাবে সহযোগিতা করছে, নির্বাচিত সরকার আসার পরও এমন সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই ধারা বজায় রাখা সহজ হবে।

বিগত সরকারের সময় ছাত্রলীগের হাতে অনেক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয়ে অভিযোগও দিয়েছেন। ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিচারের বিষয়ে প্রশাসন কী ভাবছে?

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নির্যাতনের শিকার অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি, তারা কাজ করছে। তবে বিগত প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আচরণবিধি তৈরি করেনি। সে জন্য আমরা আগে আচরণবিধি তৈরি করছি। তারপর সেটি রিজেন্ট বোর্ডে পাস হবে। রিজেন্ট বোর্ডে আচরণবিধি পাস হওয়ার পর যাঁদের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাঁদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমাবর্তন হয়নি। সমাবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে কি?

আমরা অবশ্যই সমাবর্তনের উদ্যোগ নেব। যেহেতু সমাবর্তন একটি বড় আয়োজন, তাই সময়টা এ মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা এর আয়োজন করতে পারব।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?

আপাতত কিছু ভাবছি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদের বিষয়ে কথা বলা নেই। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যুক্ত করতে হবে। সময় হলে এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিন্তা করবে।

শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে আপনাদের কোনো ভাবনা আছে কি?

নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। রিজেন্ট বোর্ড তৈরি হলে এটা রিজেন্ট বোর্ডে তোলা হবে। আশা করি, রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা প্রশস্ত করার বিষয়ে কোনো কাজ করা হচ্ছে কি?

এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সে জন্য জায়গার বিষয়ে এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধরে রাখার জন্য কী করণীয় বলে মনে করেন?

আমি মনে করি, সহনশীলতা। আমাদের এই প্রজন্ম খারাপ একটা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে।

এই প্রজন্ম একটা জিনিস খুব তাড়াতাড়ি পেতে চায়। আমাদের এই তাড়াতাড়ি পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের সম্পদ সীমিত।

তাই আমরা চাইলেই দেশের মানুষকে রাতারাতি সব দিতে পারব না। তাই কোনো ভালো জিনিস পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সময় দিতে হবে। একই সঙ্গে এই আন্দোলনের স্পিরিট ধরে রাখার জন্য শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা জরুরি। পাঠ্যপুস্তক, পত্রিকা এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে তাঁদের আত্মত্যাগের গল্পগুলো তুলে ধরতে হবে। তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।

আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনাগুলো কী?

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী দিনে উচ্চশিক্ষায় ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামুখী করা আমাদের বড় লক্ষ্য। শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষিত বেকার না হয়, সেই কারণে তাদেরকে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বৃদ্ধির জন্য একটি রিসার্চ সেল তৈরির কাজ চলছে। দেশের এবং বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে গবেষণা বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।

দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ‘সেল ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন’ খোলা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ‘সেল ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট’ খোলা নিয়ে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়: জারাকে সারজিসের জবাব

কিছুদিন আগে মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে—সারজিসকে ডা. তাসনিম

‘সারজিস নাগরিক পার্টি করতে পারলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না’

চীনের আগে ভারত সফরে যেতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস: দ্য হিন্দুকে প্রেস সচিব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত