কওমি মাদ্রাসাকে মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ১৯

কওমি মাদ্রাসাকে ভবিষ্যতে মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘একটা রূপান্তর সময়সাপেক্ষ বিষয়, তাই ইতিমধ্যে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমেও কওমি মাদ্রাসাকে মূল ধারায় আনতে পারছি না, তবে ভবিষ্যতে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’ 

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্যরা অংশ নেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে বাইরে রয়ে গেছে। তবে দেশের আলিয়া মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুলসহ অন্যান্য মাদ্রাসা—সবই কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন কারিকুলামে আমরা শিক্ষার্থীদের শেখানো নয়, পথ দেখানোর চেষ্টা করছি। তাঁরাই আইডিয়া তৈরি করে নিজেদের পথ খুঁজে বের করবে।’ 

ব্লেন্ডেড এডুকেশন ও শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর বিষয়ে আমরা এখনো আগাতে পারিনি। এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করার অনেক জায়গা আছে।’ 

আগামী বছর থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের আওতায় আসবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। 

দীপু মনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এই সময়ে ছয়টি গবেষণা হয়েছে। ১০২টি দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই কারিকুলাম পরিমার্জনে বেশ কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে অনুমোদন দিয়েছেন। নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসু ও কৌতূহলী করে তুলবে। যা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে। 

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘নতুন যে কারিকুলাম শুরু করতে যাচ্ছি সেটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও অবগত রয়েছেন। আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব—এটাই আমাদের লক্ষ্য। নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর-এর চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, ‘নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে একটি পরিবর্তনের যাত্রায় আমরা রয়েছি। পরিবর্তনের যাত্রা তো আমাদেরকেই শুরু করতে হবে।’ এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

আব্দুল হালিম বলেন, ‘যখন আমরা এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছি তখন বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তারা তৃতীয় গ্রেডের জন্য আন্দোলন করছেন। আসলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সম্মান বাড়ানোর প্রয়োজন।’ 

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। অনেকেই শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করলেও পরবর্তীতে অন্য ক্যাডারে চলে যান। তাই মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে তাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার বিষয়ে জোরদার দিতে হবে। 

দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, রূপান্তরের কাজটি খুব প্রয়োজন। পৃথিবী দ্রুত পাল্টে গেছে কিন্তু শিক্ষাটা এখনো পাল্টায়নি। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। 

মতবিনিময় সভার এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত