আমেরিকান দূতাবাসের মুখোমুখি হওয়ার আগে জানতে হবে

হাবিবুর রহমান রাব্বি
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১০: ২০

শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকার নিয়ে বিভিন্ন জনের জল্পনা-কল্পনার শেষ থাকে না। অনেকের মতে, এটা করা যাবে, ওটা করা যাবে না, এ কারণে ভিসা হয়নি—এ রকম নানা মতামত দেখা যায়। তবে ভিসা হওয়া বা না হওয়া কোনো একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না। আর ভিসা না পাওয়ার মূল কারণ ভিসা অফিসার আপনার সঙ্গে শেয়ার করবেন না। আপনার ভিসার আবেদন রিজেক্ট হলে ২১৪-বি নামক একটি লেটার প্রদান করা হয়, যেখানে লেখা থাকে আপনি ভিসা অফিসারকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। অর্থাৎ ভিসা অফিসারের কাছে আমেরিকাতে পড়তে যাওয়ার কারণ আপনি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। এসব কারণে বিভিন্ন জনের কাছে ভিসা আবেদন বাতিলের বিভিন্ন ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন কিছু ভুল ধারণা এবং এর সঠিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব।

  • অনেকের ধারণা, দূতাবাসে ফরমাল পোশাক পরে যাওয়া লাগবে অথচ দূতাবাসে ফরমাল পোশাক পরা লাগবে, এ রকম কোনো বিষয়ই নেই। ফরমাল বলতে আমরা বুঝি স্যুট, শু অথবা এ রকম একটি অফিশিয়াল আউটফিট নিয়ে যাওয়া। তবে ভিসা হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে পোশাকের বিষয় জড়িত নয়। অফিসাররা আপনার যোগ্যতা এবং আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য দেখবেন। আপনার পোশাক তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সাজেশন হচ্ছে, আপনি যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটা ফরমাল হোক অথবা ক্যাজুয়াল পোশাক হোক; যেমন টি-শার্ট ও জিনস—সেটি পরতে পারেন। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী পোশাক পরে যাওয়ার পরামর্শ রইল। কারণ, এতে আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।
  •  প্রশ্নের উত্তর কতটুকু ব্যাখ্যামূলক হতে হবে, এটি নিয়েও বিভিন্ন জনের প্রশ্ন থাকে। আপনাকে জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের উত্তরের ব্যাখ্যা প্রশ্নের গভীরতার ওপর নির্ভর করবে। যদি শুধু আপনার নাম জানতে চায়, তাহলে শুধু আপনার নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। প্রশ্নের উত্তর হয়তো এক লাইনের মধ্যে শেষ করা যাবে। যদি আপনার স্পনসরের পেশা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে সেটা কিছুটা ব্যাখ্যামূলক হবে, তবে তা-ও কয়েক লাইনের মধ্যে শেষ করা উচিত। উত্তরের দৈর্ঘ্যের চেয়েও উত্তরটি কতটা যৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • যদি নিজস্ব অর্থায়নে আমেরিকা যেতে চান, তাহলে স্পনসরের প্রশ্নে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আপনার স্পনসর খরচ বহনে কতটা সামর্থ্যবান, সেটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই স্পনসরের পেশা আপনার পড়তে যাওয়ার খরচ বহনের মতো সামর্থ্যবান হতে হবে।
  •  ব্যাংক স্টেটমেন্টে কত টাকা রাখতে হবে, সেটি নিয়েও পরিষ্কার ধারণা থাকে না অনেকের। ব্যাংকে মূলত আপনার i20 ফরমে উল্লিখিত মোট খরচের দেড় থেকে দুই গুণ বেশি টাকা দেখাতে হয়। অর্থাৎ আপনার i20 ফরমে যদি মোট খরচ ২০ হাজার ডলার দেখানো হয়, সে ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ডলার দেখালেই হবে।
  • যদি টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ফুল ফান্ড ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে ভিসা হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেশি। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি জার্নালে রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশ করা, জিআরই এবং আইইএলটিএস টেস্টে ভালো স্কোর তোলা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে ফান্ডিংয়ের জন্য ই-মেইল করতে হয়। ফুল ফান্ড দেখলে ভিসা অফিসারের কাছে আপনার সম্পর্কে অনেক পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে, এর প্রভাব আপনি ইন্টারভিউতেই দেখতে পাবেন।

ভিসা হওয়া না-হওয়ার সঙ্গে পোশাকের বিষয় জড়িত নয়। অফিসাররা আপনার যোগ্যতা এবং আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য দেখবেন। আপনার পোশাক তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

পরিশেষে, অনেকের মতে এই কাউন্টারে ভিসা কম হয়, ওই অফিসার ভিসা দেন না, দিনের শুরুতে ভিসা কম হয়—এ রকম নানা শোনা যায়, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। ভিসা অফিসার দেখবেন আপনি জেনুইন স্টুডেন্ট কি না, পড়ালেখা করতে যাওয়া আপনার মূল উদ্দেশ্য কি না, আপনার স্পনসরের সামর্থ্য আছে কি না আপনার পড়ালেখার খরচ বহন করার। আপনার প্রোফাইল ভালো হলে এবং আপনি ভিসা অফিসারকে কথার মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার ভিসা হওয়ার আশা রাখতে পারেন।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত