রাহুল শর্মা, ঢাকা
বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল শিক্ষাঙ্গন। শুরুটা হয়েছিল নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে। এরপর পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন, শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বছরজুড়ে অস্থির ছিল শিক্ষাঙ্গন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত গড়ায় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। পতন ঘটে আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামল। দেশে গঠিত হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। বিতর্ক দিয়ে শুরু হওয়া ২০২৪ সালের ইতি ঘটে আন্দোলন আর অনিশ্চয়তায়। বছরের শেষে এসে শুরু হয় বৈষম্যের প্রতিবাদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের আন্দোলন। বছর শেষে এসেও নতুন বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চিতই ছিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা খাতের জন্য ২০২৪ সাল ঘটনাবহুল বছর। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পুরো বছর শিক্ষাঙ্গন ছিল অস্থির। এতে স্বাভাবিকভাবেই শিখন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের উচিত এ ঘাটতি পূরণে কার্যক্রম ব্যবস্থা নেওয়া।’
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা
গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে চিরাচরিত পাঠ্যসূচি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিও বদলে যায়। বাদ দেওয়া হয় দশম শ্রেণির আগে সব পাবলিক পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া পাঠদান শুরু, চিরায়ত পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়ায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এর মাঝে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে যুক্ত হওয়া ‘শরিফার গল্প’ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
গত ১৯ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব পাঠ্যবই থেকে গল্পের ওই পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হলে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এরপর তদন্ত কমিটির সুপারিশে গল্পটি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সময়মতো বই না পাওয়া, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা, বইয়ে নানা ভুলত্রুটি নিয়ে সারা বছরই ছিল আলোচনা-সমালোচনা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, ফের চালু হবে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম।
শিক্ষক আন্দোলন ও শিক্ষক লাঞ্ছনা
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে জুনের শেষদিক থেকে আন্দোলনে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পয়লা জুলাই থেকে পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এতে এক মাসের বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তালা ঝুলে। শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে ৩ আগস্ট স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আন্দোলনের মুখে অনেক শিক্ষককে পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অনেক শিক্ষক লাঞ্ছনারও শিকার হন। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডগুলোসহ শিক্ষা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিল করা হয়। কোটা বাতিলে সরকারের সেই প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ৬ জুন তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে দীর্ঘ প্রচার-প্রচারণা শেষে ৩০ জুন থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শুরু হয় কোটাসংস্কারের আন্দোলন। এ আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান।
এর মাঝে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হন। একই দিন মারা যান আরও ৬ জন। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। জেলা-উপজেলায়ও আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন সাধারণ মানুষ। ১৭ জুলাই রাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়, ইন্টারনেট সেবাও শাটডাউন করে সরকার। এরপর দফায় দফায় কারফিউ জারি করলেও তা ভেঙে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।
১৬ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শেখ হাসিনার পতনের ‘একদফা’ ঘোষণা করা হয়। ৪ আগস্টও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকেন। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় লাখো জনতা। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর নানা ঘটনাচক্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারে জায়গা পায় শিক্ষার্থীদের দুজন প্রতিনিধি।
এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর থেকে পূর্ণ সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। ৩০ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এই আন্দোলনে সরকার পতনের পর পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হলে বাধা হয়ে দাঁড়ান শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁরা বাকি পরীক্ষাগুলো না নিয়ে ফল প্রকাশের জন্য ২০ আগস্ট মিছিল নিয়ে জোর করে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর সরকার বাধ্য হয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা করে। একই সঙ্গে এসএসসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানায়। ফল ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীদের একাংশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে অটোপাসের দাবি করে। এতে কোনো ফল না আসায় সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করে।
চলতি বছরের বই নিয়েও অনিশ্চয়তা
চলতি বছরের পাঠ্যবই ছাপার জন্য দরপত্র আহ্বানসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সরকার পতনের পর আগের সব টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এনসিটিবির চেয়ারম্যান, সচিবসহ বিভিন্ন শীর্ষপদে আনা হয় পরিবর্তন। এরপর নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা নতুনভাবে শুরু করেন বই ছাপানো প্রক্রিয়ার কাজ। ফলে পাঠ্যবই সংশোধন, টেন্ডার প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ার কারণে এবার বছরের প্রথম দিন সব বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে চলা বই উৎসবও বাতিল করে সরকার।
বছর শেষেও শিক্ষকদের আন্দোলন
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৪ সাল। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নেমেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, ডিএস পুলে মেধার ভিত্তিতে সকল ক্যাডার থেকে নিয়োগ, সকল ক্যাডারে সমতা তৈরি করে বৈষম্য নিরসন করার দাবিতে নতুন বছরের ৩ জানুয়ারি ১৬ হাজার সরকারি শিক্ষক প্রতিবাদ কর্মসূচি ডেকেছে।
বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল শিক্ষাঙ্গন। শুরুটা হয়েছিল নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে। এরপর পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন, শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বছরজুড়ে অস্থির ছিল শিক্ষাঙ্গন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত গড়ায় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। পতন ঘটে আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামল। দেশে গঠিত হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। বিতর্ক দিয়ে শুরু হওয়া ২০২৪ সালের ইতি ঘটে আন্দোলন আর অনিশ্চয়তায়। বছরের শেষে এসে শুরু হয় বৈষম্যের প্রতিবাদে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের আন্দোলন। বছর শেষে এসেও নতুন বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চিতই ছিল।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা খাতের জন্য ২০২৪ সাল ঘটনাবহুল বছর। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পুরো বছর শিক্ষাঙ্গন ছিল অস্থির। এতে স্বাভাবিকভাবেই শিখন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমাদের উচিত এ ঘাটতি পূরণে কার্যক্রম ব্যবস্থা নেওয়া।’
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সমালোচনা
গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন এনে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে চিরাচরিত পাঠ্যসূচি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিও বদলে যায়। বাদ দেওয়া হয় দশম শ্রেণির আগে সব পাবলিক পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া পাঠদান শুরু, চিরায়ত পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেওয়ায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এর মাঝে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে যুক্ত হওয়া ‘শরিফার গল্প’ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
গত ১৯ জানুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব পাঠ্যবই থেকে গল্পের ওই পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হলে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এরপর তদন্ত কমিটির সুপারিশে গল্পটি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সময়মতো বই না পাওয়া, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা, বইয়ে নানা ভুলত্রুটি নিয়ে সারা বছরই ছিল আলোচনা-সমালোচনা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, ফের চালু হবে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম।
শিক্ষক আন্দোলন ও শিক্ষক লাঞ্ছনা
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে জুনের শেষদিক থেকে আন্দোলনে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পয়লা জুলাই থেকে পাঠদান ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এতে এক মাসের বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তালা ঝুলে। শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে ৩ আগস্ট স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আন্দোলনের মুখে অনেক শিক্ষককে পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অনেক শিক্ষক লাঞ্ছনারও শিকার হন। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডগুলোসহ শিক্ষা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিল করা হয়। কোটা বাতিলে সরকারের সেই প্রজ্ঞাপন ২০২৪ সালের ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ৬ জুন তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে দীর্ঘ প্রচার-প্রচারণা শেষে ৩০ জুন থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শুরু হয় কোটাসংস্কারের আন্দোলন। এ আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যান।
এর মাঝে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হন। একই দিন মারা যান আরও ৬ জন। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। জেলা-উপজেলায়ও আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন সাধারণ মানুষ। ১৭ জুলাই রাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়, ইন্টারনেট সেবাও শাটডাউন করে সরকার। এরপর দফায় দফায় কারফিউ জারি করলেও তা ভেঙে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।
১৬ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শেখ হাসিনার পতনের ‘একদফা’ ঘোষণা করা হয়। ৪ আগস্টও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকেন। ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় লাখো জনতা। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর নানা ঘটনাচক্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারে জায়গা পায় শিক্ষার্থীদের দুজন প্রতিনিধি।
এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর থেকে পূর্ণ সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। ৩০ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরেই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এই আন্দোলনে সরকার পতনের পর পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হলে বাধা হয়ে দাঁড়ান শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁরা বাকি পরীক্ষাগুলো না নিয়ে ফল প্রকাশের জন্য ২০ আগস্ট মিছিল নিয়ে জোর করে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর সরকার বাধ্য হয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা করে। একই সঙ্গে এসএসসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানায়। ফল ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীদের একাংশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে অটোপাসের দাবি করে। এতে কোনো ফল না আসায় সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করে।
চলতি বছরের বই নিয়েও অনিশ্চয়তা
চলতি বছরের পাঠ্যবই ছাপার জন্য দরপত্র আহ্বানসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু সরকার পতনের পর আগের সব টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এনসিটিবির চেয়ারম্যান, সচিবসহ বিভিন্ন শীর্ষপদে আনা হয় পরিবর্তন। এরপর নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা নতুনভাবে শুরু করেন বই ছাপানো প্রক্রিয়ার কাজ। ফলে পাঠ্যবই সংশোধন, টেন্ডার প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ার কারণে এবার বছরের প্রথম দিন সব বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে চলা বই উৎসবও বাতিল করে সরকার।
বছর শেষেও শিক্ষকদের আন্দোলন
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৪ সাল। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নেমেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, ডিএস পুলে মেধার ভিত্তিতে সকল ক্যাডার থেকে নিয়োগ, সকল ক্যাডারে সমতা তৈরি করে বৈষম্য নিরসন করার দাবিতে নতুন বছরের ৩ জানুয়ারি ১৬ হাজার সরকারি শিক্ষক প্রতিবাদ কর্মসূচি ডেকেছে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ২০২৪-২৫ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করা হবে।
১২ ঘণ্টা আগে২০২৬ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মূলত বদল এসেছে বাংলা বিষয়ে। ২০২৫ সালে যারা দশম শ্রেণিতে উঠেছে, তারা এই সিলেবাস অনুসরণ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে এসএসসির সংশোধিত সিল
১৪ ঘণ্টা আগেশিক্ষাজীবনে লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের প্রত্যয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে মাইলস্টোন কলেজ দক্ষিণখানে। এ সময় ফুলেল শুভেচ্ছায় আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত একাদশ শ্রেণির নবীন ছাত্রছাত্রীদের।
২ দিন আগেএখানে একজন থেকে শুরু করে সর্বাধিক চারজনের মধ্যে কথোপকথন হয়। আলোচনা চলতে থাকে সামাজিক ও একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে। বিষয়বস্তুর জটিলতা সহজ থেকে ক্রমেই বাড়ে। কথোপকথন প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে। এ সময় প্রশ্নপত্র ও রেকর্ডিং—উভয়ই প্রস্তুত থাকে।
২ দিন আগে