কেন করবেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

মাহবুব এ রহমান
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ৪৬
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ২৭

যাঁর হাত ধরে ক্যাম্পাসের হালচাল উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে, তিনিই ক্যাম্পাস সাংবাদিক। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উল্লেখযোগ্য একটি ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাস পুরোনো। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তিনি আবার সাংবাদিক। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন—সবকিছুই অন্য শিক্ষার্থীর মতোই চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার পূর্ণ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে করছেন সাংবাদিকতার মতো একটা কঠিন কাজও। এটা কিন্তু খুব একটা হালকা ব্যাপার নয়। সাংবাদিকতা এমন একটা পেশা, যেখানে ভুল করার সুযোগ সীমিত। তাই ক্যাম্পাস সাংবাদিককে পূর্ণকালীন সাংবাদিক থেকে কম করে দেখার সুযোগ নেই। বড় ক্যাম্পাসগুলোতে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের ব্যস্ততা কিন্তু পূর্ণকালীন সাংবাদিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই তো পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা যাঁরা চালিয়ে যেতে পারেন, তাঁরা এগিয়ে থাকবেন অন্যদের থেকে—এটাই স্বাভাবিক।

এক্সট্রা কারিকুলাম
একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পরে তাঁর সামনে উন্মুক্ত হয় অবারিত সুযোগ। এক মুক্ত জ্ঞানের আঙিনা। স্কুল-কলেজের সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে মেলে মুক্ত আকাশে ডানা মেলার সুযোগ। সৃজনশীল ও দূরদর্শী শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিজেদের মেলে ধরতে অংশ নেন নানা এক্সট্রা কারিকুলামে, যা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে বেশ সহায়ক হয়। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা একটা চমৎকার এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটি। তাই ক্যাম্পাসে অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলামে অংশ নেওয়ার মতো আগ্রহী শিক্ষার্থী নিজেকে যুক্ত করতে পারেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়।

তৈরি হয় কথা বলার দক্ষতা
আমরা অনেকেই পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে অনেক কথা বলতে পারি। কিন্তু বেশি মানুষের সামনে কথা বলা বা নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ দ্বিধায় পড়ে যাই। অনেক জড়তা কাজ করে। একজন সাংবাদিককে প্রতিনিয়ত মিশতে হয় মানুষের সঙ্গে। তাদের কথা শোনার পাশাপাশি বলতেও হয়। এভাবে করে তৈরি হয় কথা বলার দক্ষতা। একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা ও ওয়েব পোর্টালে প্রতিনিধি নিয়োগ দিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিভি চ্যানেলগুলো তাদের ওয়েব পোর্টালের প্রতিনিধিও দিত। কিন্তু ইদানীং দেশের কিছু বেসরকারি নিউজ চ্যানেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধি দিচ্ছে। যারা ক্যাম্পাসের খবরাখবর তুলে ধরছেন টিভি চ্যানেলে। পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন তৈরির পাশাপাশি করছেন লাইভও। এরই ফাঁকে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক শিখছেন প্রমিত উচ্চারণে কথা বলার দক্ষতা। হয়ে উঠছেন বাকপটু।

মানিয়ে চলার চমকপ্রদ মনোভাব
সাংবাদিকতা এমন একটা কাজ, যেখানে অন্তর্মুখিতার সুযোগ কম। নানা শ্রেণির, নানা পেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, চলতে হয়, কথা বলতে হয়। সর্বোপরি মানুষকে পড়তে-জানতে হয়। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক এসবের বাইরে নন। তাঁকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মনমানসিকতার, নানা চিন্তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিশতে হয়। নিজের চিন্তার বিপরীত মানুষের সঙ্গেও সময় কাটাতে হয়। ক্যাম্পাসে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। সংবাদ যখন কোনো পক্ষের বিপরীতে যায়, তখন তারা সাংবাদিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।

এটা হতে পারে কোনো ছাত্রসংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কোনো শিক্ষক দ্বারাও। তাতে কিন্তু একজন প্রকৃত ক্যাম্পাস সাংবাদিক দমে যান না। এমন ধাক্কা সামলে তিনি বরং পাক্কা হয়ে ওঠেন। এসব ঝড় সামলে তাঁর মধ্যে তৈরি হয় যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার চমকপ্রদ মনোভাব।

বাস্তবভিত্তিক চিন্তা ও বোধের বিকাশ
একজন সাংবাদিকের দেখার চোখ আর দশজন সাধারণ মানুষ থেকে ভিন্ন। সাদা চোখে যা দেখা যায়, তা সব সময় সত্য হয় না। সাংবাদিকদের অনেক ঘটনার পেছনের ঘটনা তুলে আনতে হয়। কাজ করতে গিয়ে হয় বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা যাঁরা করেন, তাঁদের ক্যাম্পাসকে দেখার চোখ ভিন্ন। ধরা যাক, ক্যাম্পাসে কোনো একটা ইস্যুতে একটা আন্দোলন চলছে। হতে পারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট অথবা কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের। একজন সাংবাদিক আন্দোলনের ‘ভাষা’ দেখে বুঝতে পারেন এই আন্দোলনের হিডেন মিনিং। অন্য শিক্ষার্থীরা হয়তো সাধারণভাবে আন্দোলনই দেখেন। কিন্তু সব সময় তা হয় না, যা সাংবাদিকেরা বুঝতে পারেন। সাংবাদিকদের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসকে মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়। ক্যাম্পাসের কোথা কী হচ্ছে, খোঁজ রাখতে হয়। কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় মুখোমুখি হতে হয় কঠিন পরিস্থিতির। সেগুলোকে কাটিয়েও উঠতে হয় সততা ও কৌশল দিয়ে। অনেক বাস্তবতা উন্মোচিত হয় সাংবাদিকদের সামনে, যা তাঁদের বাস্তবভিত্তিক চিন্তা ও বোধের বিকাশে সহায়তা করে।

নেটওয়ার্কিংয়ে চমৎকার সুযোগ
ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করতে গেলে সম্পর্ক তৈরি হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা মানুষের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ নানা পর্ষদের মানুষ চেনেন একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিককে। প্রশাসনিক পদের ব্যক্তিরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষক-স্কলারদের সঙ্গেও গড়ে ওঠে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সম্পর্ক। অর্থাৎ চমৎকার একটা নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়। সেসব সম্পর্ক পথচলায় নানাভাবে সহযোগিতা করে। শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, ক্যাম্পাসের বাইরে এমনকি পড়াশোনা শেষে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও এই নেটওয়ার্কিং দারুণভাবে কাজে লাগে।

বাড়ে সাংগঠনিক দক্ষতা
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে সাংবাদিকদের আছে বিভিন্ন সংগঠন, যেমন—সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটি—এমন ভিন্ন ভিন্ন নামে আছে সাংবাদিক সংগঠন। কোনো ক্যাম্পাসে একটা আবার কোনো ক্যাম্পাসে একাধিক। এসব সংগঠনের সদস্য থেকে শুরু করে নেতৃত্ব যাঁরা দেন, তাঁরা সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজ করেন সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সাংগঠনিক চর্চার ফলে বাড়ে সাংগঠনিক দক্ষতা, তৈরি হয় নেতৃত্বগুণ।

লেখক: সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত