খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিবন্ধীদের স্কুল

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ৩০
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ০২

চারপাশে দোকান, গাড়ির গ্যারেজ। এর মাঝেই জীর্ণ দোতলা একটি ভবন, দরজা-জানালাও নড়বড়ে। ভবনের সামনে খানিকটা খোলা জায়গা। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, এটি বিদ্যালয়। রাজধানীর বিজয়নগরের এই বিদ্যালয় বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৬ সালে সরকারি করার পর নাম হয় ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুল। শিক্ষক, ল্যাব ও অবকাঠামোর অভাবে বিদ্যালয়টি চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে।

বধির হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১২ জন। অথচ শিক্ষকের পদ ২৭টি। এ নিয়ে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়নও এখনো সম্ভব হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সারা দেশে এই একটি স্কুলই পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি আরেকটি স্কুল রয়েছে, তবে সেটি চলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এ ছাড়া জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীনে সারা দেশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৪টি এমপিওভুক্ত স্কুল রয়েছে। তবে এসব স্কুলই নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীন স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের বেতন ছাড়া সরকারি আর কোনো বরাদ্দ আসে না। ফলে স্কুলের খরচ চালাতে দাতা খুঁজতেই অনেকটা সময় পার করতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

ইস্কাটন গার্ডেন রোডে রয়েছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীন রমনা অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হতে পারে ডাউন সিনড্রোম, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুরা। এ স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিতি থাকে ষাটের কম। স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্কুলভ্যান থাকা খুব জরুরি। কারণ, আমাদের স্কুলগুলোতে যারা পড়ে, তাদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের প্রতিদিন স্কুলে আনা অভিভাবকদের জন্য কঠিন।’

ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তাঁর সন্তান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। স্কুলে আনলে একটু খুশি থাকে। তবে ওকে নিয়ে বাসে ওঠা যায় না বলে আসা-যাওয়ায় দিনে দুই-আড়াই শ টাকা লাগে। খরচ কুলাতে প্রায়ই স্কুল কামাই দিতে হয়।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সব স্কুলেই শিক্ষকসংকট। শিক্ষা সরঞ্জামের জন্যও তাকিয়ে থাকতে হয় দাতাদের দিকে। সুইড বাংলাদেশ ল্যাবরেটরি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিম্মি সামাদ বলেন, ‘অটিস্টিক স্কুল নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। আমাদের স্কুলে ১৪০ শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক ১৫ জন।’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ডিজঅ্যাবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) উপদেষ্টা স্বপ্না রেজা বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। বিবিএস বলছে, তাদের সংখ্যা ৪০ লাখ ৩৩ হাজার। সমাজসেবা বলছে আরেক তথ্য। তবে সংখ্যা যেটাই হোক, দেশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের স্কুলের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যেগুলো আছে, সেগুলোও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পায় না। এদিকে সরকারের আরেকটু নজর দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত