Ajker Patrika

অদম্য জান্নাতুল ফেরদৌসের গল্প

সুদীপ চাকমা
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬: ০৯
অদম্য জান্নাতুল ফেরদৌসের গল্প

জন্মের পর ভুল চিকিৎসায় হারিয়েছেন শ্রবণশক্তি। এখন কানে মেশিন লাগিয়ে কোনোরকমে কথা শুনলেও বলতে পারেন না ঠিকমতো। কিন্তু এসব শারীরিক সমস্যা কোনো বাধাই হতে পারেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের জীবনে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা। স্বপ্ন—স্নাতক শেষ করা। পাশাপাশি কাজ করতে চান প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে।

জান্নাতুল স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারায় যোগাযোগ করেন মোবাইল ফোনে লিখে। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে। বাবা মো. সহিদুল ইসলাম চাকরিজীবী। মা খাদিজা আক্তারও শিক্ষক। পরিবারের তিন বোনের মধ্যে সবার বড় জান্নাতুল। তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। 

জান্নাতুলের স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়া। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫.২৫ নম্বর পেয়ে বেসরকারি এক ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ায় পড়াশোনা শেষ করা সম্ভব হয়নি। একই শিক্ষাবর্ষে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে হন ৩৫০তম। পরে সেখানেই ভর্তি হন।

শুধু যে শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁকে কষ্ট করতে হয়, তা-ই নয়। তিনি একজন মা, সিঙ্গেল মাদার। বিয়ের পরপরই তাঁর কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান, তখন তিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাই সে বছর নিয়মিত পড়াশোনায় ছেদ পড়ে। এখন সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকেন। সন্তান কিছুটা বড় হলে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন। 

কীভাবে সামলাচ্ছেন সবকিছু? জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে লেখেন, ‘জন্মের সময় আমার কানের পর্দা নষ্ট হয়। এ জন্য দুই কানে শুনি না। ৬ বছর বয়সে কানে মেশিন ব্যবহার শুরু করি এবং অস্পষ্ট করে কথাও বলা শুরু করি। পড়াশোনায় হাতেখড়ি মা-বাবার হাত ধরে। এখন পর্যন্ত সবকিছু পরিবার, বান্ধবী ও ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় সামলাচ্ছি। অনেক সময় মনে হয় ভার্সিটি ছেড়ে দিই।’ 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো শিক্ষাক্ষেত্রকে সর্বজনীন করতে পারিনি। বিশেষ করে দৃষ্টি কিংবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা যাদের আছে, যারা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা যাদের রয়েছে, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট কোনো পড়াশোনার পদ্ধতি না থাকায় দু-একজন ছাড়া মেধা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। সে জন্য আমাদের চোখ কান খোলা রাখতে হবে এবং আমরা সব সময়ই চেষ্টা করব তাদের সম্মান রক্ষা করে সহযোগিতা করার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত