ফারুক ছিদ্দিক
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়গুলো আপনার গুরুত্বের তালিকায় থাকবে বলে মনে করেন?
উত্তর: প্রথমত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, ই-নথি বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার ভবনে, হল ও বিভাগে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, ফাইলগুলো আটকা থাকে। সে জায়গায় পরিবর্তন আনব। সে জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজের গতি ও সামগ্রিক স্বচ্ছতা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয়ত বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার এবং আবাসিক হলগুলোর সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বড় কলেবর, তার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন, তাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সময়ে মানসম্মত সেবা প্রদান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ রিসোর্স আছে, তাতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেধার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সে জন্য মানসম্মত গবেষণার প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক্সট্রা কো-কারিকুলাম মানসম্মত, প্রয়োজননির্ভর ও গবেষণাধর্মী করে তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত একাডেমিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে যেমন আর্থিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জও আছে।
তৃতীয়ত, সুস্থ দেহ ও মনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে। এক্সট্রা কো-কারিকুলার (সহশিক্ষা) কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের একাধিক খেলাধুলার মাঠ রয়েছে, কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং খেলার মাঠ ও ক্রীড়াসামগ্রী আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিও-লিবারেল বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও জ্ঞান সৃজনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আমাদের যে রিসোর্স রয়েছে, তার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও বাড়ানো যাবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সম্পর্কোন্নয়ন ও যথোপযুক্ত সরকারি সহযোগিতা পেলে শিক্ষার মান আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারব, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রশ্ন: আপনার সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বেশি গুরুত্ব পাবে, নাকি একাডেমিক ফলাফল?
উত্তর: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ডে পাঁচজন সদস্য থাকেন। তাঁরা সার্বিক বিষয় দেখেন। একাডেমিক ফলাফলের বিষয়টিতে যেমন গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তেমনি একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি কো-কারিকুলার কার্যক্রমের দিকেও নজর রাখা হয়। কোনোটিকে বাদ দিয়ে কোনোটি নয়।
প্রশ্ন: পূর্বাচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ক্যাম্পাস করার পরিকল্পনার অগ্রগতি কত দূর?
উত্তর: পূর্বাচলে ৫২ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ও গবেষণানির্ভর ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। পূর্বাচলে আমরা এখনো জমি বুঝে পাইনি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করা হয়নি। আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করতে পারলে আশা করি আমরা কাজ শুরু করতে পারব। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিনীত আবেদন থাকবে, তিনি যেন এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি রাখেন।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটা প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। সেটির বর্তমান কী অবস্থা?
উত্তর: মাস্টারপ্ল্যান ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন কিংবা যখনই আমরা দেখা করেছি, তিনি সব সময় বলেছেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়’। আমিও সম্প্রতি যখন দেখা করি, তখনো তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি চান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের রূপান্তর, যাতে এ জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারে। যে সেবা সময়োপযোগী হবে, বৈশ্বিক ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে। মাস্টারপ্ল্যান তিনি দেখেছেন, কিছু সাজেশন দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ইমপ্রুভমেন্ট করা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথম ফেজের প্রকল্পও সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ধাপে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে।
প্রথম ধাপে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। গবেষণা ও ল্যাবরেটরির জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউট মিলে ৯৬টি এনটিটি রয়েছে। ৫৬টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে। মেডিকেল সেন্টারসহ অনেক সেবা প্রদানকারী অবকাঠামো আছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দেওয়ার জন্য এখন সেভাবে উপযুক্ত নয়। প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হল করার পরিকল্পনা রয়েছে, আবাসনসংকট সমাধানের জন্য। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি আধুনিক মানসম্পন্ন ক্লাসরুম ও হলরুম, আধুনিক লাইব্রেরির পরিকল্পনা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব অভ্যন্তরীণ রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো খোলা হবে। ফলে গ্রিন স্পেসও আমাদের বাড়বে। একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে পঠন-পাঠন, জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃজনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়বে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা নিরসন, গণরুম ও গেস্টরুম কালচার বন্ধ এবং শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?
মাকসুদ কামাল: দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখানে আসে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থীও এখানে ভর্তির সুযোগ পায়। আর্থিক অসচ্ছলতায় তাদের অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে না। এ কারণে তাদের হলে থাকতে হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় এতটাই মানবিক যে সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের আগলে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। ৩৯ বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হয়ে আসি, তখনো গণরুম কালচার ছিল। আমরা শুনেছি, তার আগেও এ কালচার ছিল। এখন অনেকটা কমে আসছে। মাস্টারদা সূর্য সেন হলে দুই মেয়াদে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। আবাসন সমস্যা সমাধান না হওয়ার কারণেই কথিত গণরুম-গেস্টরুম কালচার গড়ে ওঠে। আমি প্রাধ্যক্ষ থাকাকালে শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে সিট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় একটি ছাত্রী হল ও একটি ছাত্র হল নির্মাণ এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কারের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে, পাশাপাশি যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, তারা যদি হল ত্যাগ করে, তাহলে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আবাসন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন হয়। কিন্তু এরপরে আর নির্বাচন হয়নি। আপনি কি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন?
উত্তর: নেতৃত্বের বিকাশ ও সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠে। ম্যানেজেরিয়াল দক্ষতাও আসে। সেই বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক মতৈক্য। ভবিষ্যতে ছাত্রসংগঠনগুলো এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা সচেষ্ট থাকব। সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে এবং অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হলে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
প্রশ্ন: টিচিং ইভ্যালুয়েশনের জন্য একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরির কথা রয়েছে। সেটার অবস্থা কী?
উত্তর: ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং ইভ্যালুয়েশনের জন্য একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যেখানে ২১টি প্রশ্ন রয়েছে। একজন শিক্ষক যথাসময়ে শ্রেণিকক্ষে আসেন কি না, পাঠদান পদ্ধতি ইন্টার্যাকটিভ কি না, ক্লাস বিষয়বস্তুর ওপরে নির্দিষ্ট কি না, উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ যথাসময়ে হচ্ছে কি না—এমন অনেক প্রশ্ন সেখানে আছে। টিচিং ইভ্যালুয়েশনের কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দূরত্ব কমে যাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক কখনো অভিভাবক, কখনো বন্ধুর মতো হওয়া উচিত, যাতে জ্ঞানের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো ভীতি কাজ না করে। সহশিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। এতে সম্পর্কের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চক্রাকার বাসের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য চক্রাকার বাস এখনো আছে। তবে তার ফ্রিকোয়েন্সি কম। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে যতবার যাতায়াত দরকার, ততবার সেটা হয়ে উঠছে না। সে জন্য আমাদের বাসও কেনা প্রয়োজন। এর জন্য যে লজিস্টিকস সাপোর্ট দরকার—বাসের ড্রাইভার, সহযোগী থাকতে হবে। মেইনটেন্যান্স ও জ্বালানি খরচও আমাদের পেতে হবে। এ বিষয়টি এত দিন আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সরকারের বাইরেও আমাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, তাদের কাছে সহযোগিতা চাইব। চক্রাকার বাসের সংখ্যা ও ফ্রিকোয়েন্সি আরও বাড়ানো হবে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়গুলো আপনার গুরুত্বের তালিকায় থাকবে বলে মনে করেন?
উত্তর: প্রথমত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, ই-নথি বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার ভবনে, হল ও বিভাগে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, ফাইলগুলো আটকা থাকে। সে জায়গায় পরিবর্তন আনব। সে জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজের গতি ও সামগ্রিক স্বচ্ছতা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয়ত বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার এবং আবাসিক হলগুলোর সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বড় কলেবর, তার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন, তাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সময়ে মানসম্মত সেবা প্রদান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ রিসোর্স আছে, তাতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেধার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সে জন্য মানসম্মত গবেষণার প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক্সট্রা কো-কারিকুলাম মানসম্মত, প্রয়োজননির্ভর ও গবেষণাধর্মী করে তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত একাডেমিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে যেমন আর্থিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জও আছে।
তৃতীয়ত, সুস্থ দেহ ও মনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে। এক্সট্রা কো-কারিকুলার (সহশিক্ষা) কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের একাধিক খেলাধুলার মাঠ রয়েছে, কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং খেলার মাঠ ও ক্রীড়াসামগ্রী আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিও-লিবারেল বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও জ্ঞান সৃজনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আমাদের যে রিসোর্স রয়েছে, তার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও বাড়ানো যাবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সম্পর্কোন্নয়ন ও যথোপযুক্ত সরকারি সহযোগিতা পেলে শিক্ষার মান আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারব, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রশ্ন: আপনার সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বেশি গুরুত্ব পাবে, নাকি একাডেমিক ফলাফল?
উত্তর: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ডে পাঁচজন সদস্য থাকেন। তাঁরা সার্বিক বিষয় দেখেন। একাডেমিক ফলাফলের বিষয়টিতে যেমন গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তেমনি একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি কো-কারিকুলার কার্যক্রমের দিকেও নজর রাখা হয়। কোনোটিকে বাদ দিয়ে কোনোটি নয়।
প্রশ্ন: পূর্বাচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ক্যাম্পাস করার পরিকল্পনার অগ্রগতি কত দূর?
উত্তর: পূর্বাচলে ৫২ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ও গবেষণানির্ভর ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। পূর্বাচলে আমরা এখনো জমি বুঝে পাইনি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করা হয়নি। আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করতে পারলে আশা করি আমরা কাজ শুরু করতে পারব। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিনীত আবেদন থাকবে, তিনি যেন এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি রাখেন।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটা প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। সেটির বর্তমান কী অবস্থা?
উত্তর: মাস্টারপ্ল্যান ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন কিংবা যখনই আমরা দেখা করেছি, তিনি সব সময় বলেছেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়’। আমিও সম্প্রতি যখন দেখা করি, তখনো তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি চান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের রূপান্তর, যাতে এ জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারে। যে সেবা সময়োপযোগী হবে, বৈশ্বিক ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে। মাস্টারপ্ল্যান তিনি দেখেছেন, কিছু সাজেশন দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ইমপ্রুভমেন্ট করা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথম ফেজের প্রকল্পও সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ধাপে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে।
প্রথম ধাপে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। গবেষণা ও ল্যাবরেটরির জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউট মিলে ৯৬টি এনটিটি রয়েছে। ৫৬টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে। মেডিকেল সেন্টারসহ অনেক সেবা প্রদানকারী অবকাঠামো আছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দেওয়ার জন্য এখন সেভাবে উপযুক্ত নয়। প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হল করার পরিকল্পনা রয়েছে, আবাসনসংকট সমাধানের জন্য। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি আধুনিক মানসম্পন্ন ক্লাসরুম ও হলরুম, আধুনিক লাইব্রেরির পরিকল্পনা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব অভ্যন্তরীণ রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো খোলা হবে। ফলে গ্রিন স্পেসও আমাদের বাড়বে। একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে পঠন-পাঠন, জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃজনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়বে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা নিরসন, গণরুম ও গেস্টরুম কালচার বন্ধ এবং শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?
মাকসুদ কামাল: দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখানে আসে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থীও এখানে ভর্তির সুযোগ পায়। আর্থিক অসচ্ছলতায় তাদের অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে না। এ কারণে তাদের হলে থাকতে হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় এতটাই মানবিক যে সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের আগলে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। ৩৯ বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হয়ে আসি, তখনো গণরুম কালচার ছিল। আমরা শুনেছি, তার আগেও এ কালচার ছিল। এখন অনেকটা কমে আসছে। মাস্টারদা সূর্য সেন হলে দুই মেয়াদে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। আবাসন সমস্যা সমাধান না হওয়ার কারণেই কথিত গণরুম-গেস্টরুম কালচার গড়ে ওঠে। আমি প্রাধ্যক্ষ থাকাকালে শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে সিট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় একটি ছাত্রী হল ও একটি ছাত্র হল নির্মাণ এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কারের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়িত হলে, পাশাপাশি যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, তারা যদি হল ত্যাগ করে, তাহলে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আবাসন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন হয়। কিন্তু এরপরে আর নির্বাচন হয়নি। আপনি কি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন?
উত্তর: নেতৃত্বের বিকাশ ও সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠে। ম্যানেজেরিয়াল দক্ষতাও আসে। সেই বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। এ জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক মতৈক্য। ভবিষ্যতে ছাত্রসংগঠনগুলো এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা সচেষ্ট থাকব। সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে এবং অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হলে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
প্রশ্ন: টিচিং ইভ্যালুয়েশনের জন্য একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরির কথা রয়েছে। সেটার অবস্থা কী?
উত্তর: ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং ইভ্যালুয়েশনের জন্য একটি পরিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যেখানে ২১টি প্রশ্ন রয়েছে। একজন শিক্ষক যথাসময়ে শ্রেণিকক্ষে আসেন কি না, পাঠদান পদ্ধতি ইন্টার্যাকটিভ কি না, ক্লাস বিষয়বস্তুর ওপরে নির্দিষ্ট কি না, উত্তরপত্র মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ যথাসময়ে হচ্ছে কি না—এমন অনেক প্রশ্ন সেখানে আছে। টিচিং ইভ্যালুয়েশনের কাজটি সঠিকভাবে করতে পারলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দূরত্ব কমে যাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক কখনো অভিভাবক, কখনো বন্ধুর মতো হওয়া উচিত, যাতে জ্ঞানের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো ভীতি কাজ না করে। সহশিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। এতে সম্পর্কের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে চক্রাকার বাসের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য চক্রাকার বাস এখনো আছে। তবে তার ফ্রিকোয়েন্সি কম। পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে যতবার যাতায়াত দরকার, ততবার সেটা হয়ে উঠছে না। সে জন্য আমাদের বাসও কেনা প্রয়োজন। এর জন্য যে লজিস্টিকস সাপোর্ট দরকার—বাসের ড্রাইভার, সহযোগী থাকতে হবে। মেইনটেন্যান্স ও জ্বালানি খরচও আমাদের পেতে হবে। এ বিষয়টি এত দিন আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সরকারের বাইরেও আমাদের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে, তাদের কাছে সহযোগিতা চাইব। চক্রাকার বাসের সংখ্যা ও ফ্রিকোয়েন্সি আরও বাড়ানো হবে।
বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) আজ সোমবার ঢাকার নিশাতনগরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিন শিন গ্রুপ এবং ইপিলিয়ন গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এই সহযোগিতা
১ ঘণ্টা আগেপরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শিক্ষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। শুধু শিক্ষার্থীরা না বহু সংগঠন ঢাকা শহরে আন্দোলন করছে। তাঁরা রাস্তা দখল করে আন্দোলন করছে, এর সমাধান কী করে হবে, আমি তো একা সমাধান করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের আহ্বান করছি, তোমাদ
৩ ঘণ্টা আগেপ্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর থাইল্যান্ড প্রকৃতিপ্রেমী মেধাবীদের জন্য উচ্চশিক্ষার এক অনন্য গন্তব্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তিতে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। দেশটির এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (এআইটি) রয়েল থাই স্কলারশিপ ২০২৫ সেরকমই একটি বৃত্তি।
১৩ ঘণ্টা আগেছাত্রজীবনে মনোযোগ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গুণ। যা শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সফলতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ভঙ্গ করার অন্যতম কারণ
১৩ ঘণ্টা আগে