ধারাবাহিক সাফল্যে এগিয়ে যাচ্ছে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ

আব্দুর রাজ্জাক খান
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ২০
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৫০

আগামী প্রজন্মকে বিশ্বমানের নাগরিক, মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন ও থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কলেজটি মানসম্মত পাঠদান ও সফলতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাদির মোল্লা এবং অধ্যক্ষ মো. মাহমুদুল হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান

আব্দুল কাদির মোল্লাকোয়ালিটির ক্ষেত্রে কোনো আপস করি না
আব্দুল কাদির মোল্লা, প্রতিষ্ঠাতা

প্রশ্ন: শিল্প খাতে আপনি একজন সফল ব্যক্তিত্ব। কখন মনে হলো শিক্ষা খাতে অবদান রাখা প্রয়োজন?  
আব্দুল কাদির মোল্লা: আমি নিজে শিক্ষাবঞ্চিত হয়েছি। তাই আমার কর্মজীবনের প্রথম থেকে বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবে শিল্পক্ষেত্রে আসার আগেই উপার্জনের একটি অংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা ভাবি। ১৯৯৫ সাল থেকে এটি শুরু করি।

প্রশ্ন: আপনি ‘শিক্ষা বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত, কীভাবে সম্ভব হয়েছে? 
আব্দুল কাদির মোল্লা: আমি মূলত ব্যবসায়ী। শিক্ষা খাতে কতটুকু করতে পেরেছি, তা জানি না। তবে বলা যায়, নরসিংদী জেলাসহ বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, যানবাহনের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়াসহ শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এমনকি বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করেছি এবং করছি। এর ফলে আমাকে ভালোবেসে তাঁরা ‘শিক্ষা বন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। 

প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর ঈর্ষণীয় ফল বয়ে আনছে। এর পেছনে কারণ কী? 
আব্দুল কাদির মোল্লা: প্রতিটি ক্ষেত্রে কলেজটি শৃঙ্খলিত। আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কলেজটি পরিচালিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবাইকে নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়। অসংখ্য ক্লাস ও পরীক্ষা হয়। আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রাখে কলেজ কর্তৃপক্ষ। দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা করে বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্য শিক্ষকেরা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করেন। এককথায় শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিষ্ঠানটি বদ্ধপরিকর।
 
প্রশ্ন: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়? 
আব্দুল কাদির মোল্লা: আমরা কোয়ালিটির ক্ষেত্রে কোনো আপস করি না। একজন শিক্ষকই পারেন ভালো মানুষ গড়তে। শিক্ষক জাতির বিবেক। যাঁরা জাতি গঠন করবেন, তাঁদের কোয়ালিটিতে ঘুণ থাকলে সেটা জাতি গঠনে অন্তরায় হবে। তাই অভিজ্ঞতা, পড়ানোর কৌশল, পরীক্ষা, ভাইভা—ইত্যাদি বিষয়ে যাঁরা উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই শিক্ষক হিসেবে এই কলেজে নিয়োগ পান। মেধা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা যাচাইপূর্বক মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকদেরই এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
 
প্রশ্ন: কলেজটি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 
আব্দুল কাদির মোল্লা: কলেজটি আমার প্রাণ; আমার স্বপ্ন। অহর্নিশ এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমি ভাবি; প্রোথিত রাখি হৃদয়ে। এই নশ্বর পৃথিবীতে আমি একদিন থাকব না, থাকবে আমার কর্ম। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার নামের প্রতিষ্ঠানটি আলোর মিছিল নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সগৌরবে। 

মো. মাহমুদুল হাসানসফলতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য
মো. মাহমুদুল হাসান, অধ্যক্ষ

প্রশ্ন: দেশের সেরা কলেজের কাতারে আসার পেছনে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের মূলমন্ত্র কী? 
মো. মাহমুদুল হাসান: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিজের গুণগত মান উন্নত করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল কাদির মোল্লা যেকোনো পর্যায়ে কলেজের মান রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তিনি এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। পাশাপাশি তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় একঝাঁক তরুণ মেধাবী নিবেদিত শিক্ষক সার্বক্ষণিক শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করে লক্ষ্যপূরণে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলেই আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ দেশের অন্যতম সেরা কলেজের তালিকায় আসতে পেরেছে। 

প্রশ্ন: আপনাদের এই কলেজের বিশেষত্ব কী বলে আপনি মনে করেন? 
মো. মাহমুদুল হাসান: শৃঙ্খলা, নিবিড় পরিচর্যা, সময়োপযোগী পদক্ষেপ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গভর্নিং বডির প্রচেষ্টার ফলেই কলেজটি আলোকিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রশ্ন: পাঠদানে কী কী মৌলিক বিষয় অনুসরণ করা হয়? 
মো. মাহমুদুল হাসান: সব শিক্ষার্থীকে শ্রেণিবিন্যস্ত করে মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয় এখানে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক তদারকি ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখাই আমাদের কাজ। অর্থাৎ এই কলেজের প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভর্তির পর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচর্যার অধীনে থাকে, যা কলেজের বড় বিশেষত্ব। 

প্রশ্ন: পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম কতটুকু গুরুত্ব দেন? 
মো. মাহমুদুল হাসান: সহশিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে কলেজটি যথেষ্ট সজাগ ও সচেতন। কলেজটিতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোভার স্কাউট, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, আইটি ক্লাব, আর্ট ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, ফটোগ্রাফি ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট ক্লাব, গ্লোবাল এডুকেশন ক্লাব ইত্যাদি পরিচালিত হচ্ছে। 

প্রশ্ন: কলেজ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 
মো. মাহমুদুল হাসান: প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় বিশ্বাস করেন, সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই চূড়ান্ত সফলতা—    এই মূলমন্ত্র সামনে রেখে ৮৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। সেই সংখ্যা এখন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, দেশসেরা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সফলতা শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত