Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা বানাব

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছিলেন। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।

ইলিয়াস শান্ত
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩৬

প্রশ্ন: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অবস্থা কেমন দেখছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে বলেই আপনারা আজ আমাকে এখানে দেখছেন। কারণ, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। ফলে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমার এ পদে আসার কথা ছিল না। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে মরুভূমির মতো দেখেছি। একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বড় বড় প্রশাসনিক পদের কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলে দেব। সে কারণে প্রক্টর-প্রভোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।

প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রামকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছিল বলেই বিগত যে কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় ছিল, তার অবসান হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো বৈধ উপায়ে এ সরকারের পতনের সম্ভাবনা বা পথ ছিল না। এমনকি দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ অপছন্দ করলেও বিগত সরকারের পতনের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কারণ, তারা সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই দরজা বন্ধ করে ফেলেছিল। আমরা শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানাই, তারা এটা অনুধাবন করতে পেরেছে। তারা তাদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বাধার সেই প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে। যুগে যুগে যখন জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে, শিক্ষার্থীরাই ত্রাণকর্তা হিসেবে এ জাতিকে রক্ষা করেছে।

প্রশ্ন: প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর চবিতে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: অচল ক্যাম্পাস এখন সচল হয়েছে, এটি সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক মাস হয়েছে, তাই এখনই চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময় আসেনি। তবে আমরা এই সময়ের মধ্যে যেসব কাজ করেছি, এটাকে অর্জন বলব না। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘মব জাস্টিস’ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আপনাকে জানাতে চাই, চবিতে একসময় জোবাইক সেবা চালু ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে জোবাইকের ম্যানেজমেন্টের লোকজন পালিয়ে যান। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়েছে। আমরা আবার জোবাইক চালু করব। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান চবিতে জোবাইক সেবা দেবে। এটার কার্যক্রম শিগগির চালু হবে। এ ছাড়া আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর রেলের শিডিউল বাড়ানো হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হচ্ছে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উৎকর্ষপূর্ণ একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত রাজনৈতিক চর্চা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার পরিবেশ আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমাদের শিক্ষার মান অনেকটা ধসে পড়েছে। আমি একে হার্ভার্ড কিংবা এমআইটির মতো হয়তো করতে পারব না, তবে দেশের প্রথম সারির একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে পড়াশোনার উন্নত পরিবেশ থাকবে; পাশাপাশি মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত থাকবে। এ কাজে অনেক বাধা আছে। তবে সেসব বাধা আমাদের অতিক্রম করেই সফল হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সবগুলো এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। উল্লেখযোগ্য কিছু বলতে বললে বলব, প্রতিটি আবাসিক হলে ওয়াশিং মেশিন দেব। এটাতে শিক্ষার্থীরা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে জামাকাপড় ধুতে পারবে। লাইব্রেরিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সময় নিয়ে পড়ালেখা করে। লাইব্রেরির আশপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। সে জন্য আমরা চিন্তা করেছি, ভেন্ডিং মেশিন বসাব। এ মেশিন থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীরা চা-কপি, স্ন্যাকস খেতে পারবে।

আমি নিয়োগ পাওয়ার পর ইউজিসির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ করেছে। তাঁরা আমাদের দুটি নির্মাণাধীন হলের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন। একটা বঙ্গবন্ধু হল, অন্যটি অতীশ দীপঙ্কর হল। পরিদর্শন শেষে আমার সঙ্গে ইউজিসি প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে আমি তাঁদের বলেছি, আমি আপনাদের কাজে সন্তুষ্ট নই। তাঁরা এর কারণ জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনাদের যে টাকা ছাড়ের প্রক্রিয়া, এটা খুবই লেনদি প্রসেস। আমি মিলিটারি স্টাইলে কাজ করতে চাই। আপনাদের টাকা ছাড়ের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে আমার কাজে বাধা হয়। তখন তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি কী চাই? আমি বলেছি, আমার জন্য কিছু লাগবে না, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পারলে কিছু করেন। আমার একজন শিক্ষার্থীকে বই কিনতে হলে ১৩ মাইল দূরে আন্দরকিল্লায় যেতে হয়। আমার শিক্ষককে বই কিনতে হলে ১৪ মাইল দূরে বাতিঘরে যেতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে আমরা একটা অন-ক্যাম্পাস বুকস্টোর ও স্যুভেনির শপ করতে চাই। এটা বিগত উপাচার্যদের আমি বলেছি। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। পরে তারা (ইউজিসি) এ প্রকল্পের জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট দিয়েছে। আমি শুনেছি, আমাদের এ প্রজেক্ট ইউজিসিতে প্রশংসিত হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ টাকার ছাড় পাব। আমাদের জায়গার অভাব নেই। টাকা পেলে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব।

প্রশ্ন: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট নিয়েছে। গত ডিসেম্বরে আপনারাও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ডোপ টেস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভালো। তবে কিছু শিক্ষার্থীকে মাদকাসক্ত অবস্থায় আমরা হলে পেয়েছি। তাদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও ছিল। এ পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগের জায়গা থেকে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ হাতে নিই। আমাদের মেডিকেলে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। নির্ভরযোগ্য আমেরিকান কিট দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগ প্রায় শেষের পথে। এখন দু-একটি হল হয়তো বাকি রয়েছে। আবাসিক হলে যারা থাকবে, তাদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছি। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তাকর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসব। আমরা মনে করি, সাফলাইন চেইনে হাত দিতে পারব না। আমরা ডিমান্ড দুর্বল করে দেব। এ উদ্যোগের মাধ্যমে কী বার্তা দিচ্ছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত খুব কম শিক্ষার্থীকে ডোপ টেস্টে পজিটিভ পেয়েছি। পজিটিভ পাওয়া গেলেও শতভাগ নিশ্চিত নই যে ওই শিক্ষার্থী মাদক নিয়েছে। পজিটিভ শিক্ষার্থী শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো ওষুধ খাচ্ছে কি না, সেটাও আমরা পরীক্ষা করব। ওষুধের মধ্যে অ্যালকোহল রয়েছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। এরপর যদি কোনো শিক্ষার্থীর নিশ্চিত মাদক-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলেও তাকে জেলে পাঠাব না। তখন আমরা এমন শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেন্টারে রাখব। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস তৈরি করা; শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া নয়। শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি আছে বলে আমরা মনে করি না। সর্বোপরি আমরা তাদেরকে সংশোধনের দিকে নিয়ে যেতে চাই। এটা তো আমরা মাদকের ডিমান্ড দুর্বল করে দিলাম। সাফলাইন চেইন ভেঙে দিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা আমাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রশ্ন: শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য নিয়ে চবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন হীরকজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের সে লক্ষ্য কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমরা শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে পরিনি, এটা সত্য। আমাদের বর্তমানে ২৮-২৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৭-৮ হাজার আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। অন্য শিক্ষার্থীরা কটেজে থাকে, অনেকে শহর থেকে আসে। যারা আবাসন সুবিধার বাইরে রয়েছে, তাদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা তাদের জন্য কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বর্তমানে দুটি হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। দ্রুততম সময়ে এ হল দুটি উদ্বোধন করতে পারব বলে শিক্ষার্থীদের আমি আশ্বাস দিয়েছি। এতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবে। এ ছাড়া শামসুন নাহারের নামে পুরোনো একটি হল পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা এর সংস্কারকাজ শুরু করেছি। এই সংস্কারকাজ সম্পন্ন হলে আরও ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এ ছাড়া ইউজিসিতে আরও দু-তিনটি হলের চাহিদা দিয়েছি। এ চাহিদা কার্যকর হলে আমাদের বড় অংশের শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করতে আরও অনেক হলের প্রয়োজন রয়েছে।

আবাসন সংকট নিরসনে আমাদের বিকল্প চিন্তা রয়েছে। ধরুন, একটা হলে ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই ৫০০ শিক্ষার্থীর সিঙ্গেল বেডে আমরা দ্বিতল খাটের চিন্তাভাবনা করছি। পরীক্ষা করে দেখব। এটা কার্যকর করা গেলে ১ হাজার শিক্ষার্থী না হলেও অন্তত ৯০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ধরনের খাটগুলো আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে আমাদের প্রকৌশলীদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। এটা প্রথমে যেকোনো একটি হলে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখব। এক হলে সফল হলে বাকি হলগুলোতে পর্যায়ক্রমে এটা কার্যকর করা হবে।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত সময়ে সেটা নিশ্চিত হয়নি। এখন আবাসিক হলগুলোর পরিস্থিতি কী?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আগে দখলদারত্বের পরিবেশ ছিল। মেধার ভিত্তিতে কোনো আবাসন বণ্টনের ব্যবস্থা ছিল না। দখলদারত্বের পাশাপাশি হলগুলো ছিল টর্চার সেল, টাকা না দিয়ে খাওয়া, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি—আমরা এসব নেতিবাচক সংস্কৃতি আপনাদের সহায়তায় জাদুঘরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এখন হলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে আমরা হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছি। ভবিষ্যতে শুধু মেধাকে গুরুত্ব দেব না, আবাসন বণ্টনের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক সচ্ছলতাসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় আমলে নেব।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মান উন্নত করা যায়?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আবাসিক হলে আমরা শিক্ষার্থীদের পাঁচ তারকা হোটেলের মানের খাবার সরবরাহ করতে পারব না। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আপনি ঠিকই বলেছেন, খাবারে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায় বলে আমরাও অভিযোগ পাই। এ জন্য আমি নিজে একটা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। সেটা হলো হলগুলোতে ‘সাডেন ভিজিট’। শুধু ক্যানটিনে নয়, সাডেন ভিজিট কর্মসূচি আমি একাডেমিক ক্ষেত্রেও করে থাকি। সাডেন ভিজিটে আমার চোখে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে সেটা মার্জিতভাবে নোটিশ করি। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ক্যানটিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে খেতে বসি। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের দায়িত্বের প্রতি দায়বদ্ধ হচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। হলের খাবারের মানোন্নয়নে আমাদের আরও পদক্ষেপ রয়েছে। আশা করছি, খাবারের মান দিন দিন উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: চীনের সহায়তায় চবিতে নির্মিত হতে যাচ্ছে ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। এ স্টেশন কীভাবে কাজ করবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতটা সুফল পাবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এই প্রজেক্ট আমাদের এক ওশানোগ্রাফারের। আমি এখানে এসে প্রজেক্টি সম্পর্কে জানতে পারি। পরে তিনি আমাকে জানালেন, আমার এ প্রজেক্টে আপনাকে চীনে যেতে হবে। আমি যেহেতু সোশ্যাল সায়েন্সের মানুষ, তাই শুরুতে আমি এ প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। আমরা চীনের সেকেন্ড ইনস্টিটিউটে গিয়ে এ প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দেখেন বঙ্গোপসাগরে আমাদের বিশাল এলাকার মালিকানা রয়েছে। চবিতে এ প্রজেক্টের কাজ সফলভাবে চালু করতে পারলে এ স্টেশন থেকে বঙ্গোপসাগরের সফল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এখান থেকে আমরা ফিশিং জোন চিহ্নিত করতে পারব। আমাদের সমুদ্র গবেষণা বিরাট অবদান রাখবে। ওশানোগ্রাফিতে আমাদের যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের কাজের বড় একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ স্টেশনের কাজ সফলভাবে শেষ হলে মহাশূন্যে পাঠানো চীনের স্যাটেলাইট থেকে সেকেন্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমন্বয় করে ডেটা সংগ্রহ করতে পারব। আবহাওয়ার বার্তাও আমরা এ স্টেশন থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করতে পারব। সম্প্রতি চীনের একটি গবেষক দল আমাদের এখানে এসে স্টেশনের স্থান পরিদর্শন করে গেছে। ইতিমধ্যে স্টেশনের স্থানের মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে।

প্রশ্ন: কবে নাগাদ স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে এ স্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিয়ে আমরা শুরু থেকে সচেতন। ফলে এখন পর্যন্ত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রনেতারা আমার সঙ্গে দেখা করে কিছু দাবি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, তাঁদের সব দাবি পূরণ করা সম্ভব। তবে ক্যাম্পাসকে নেতা তৈরির কারখানা নয়, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যদি প্রশ্ন করেন, তাহলে দলীয় রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে কি না—এর জবাবে আমি বলব বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাজনীতি করে, চবি শিক্ষার্থীরাও সেভাবে রাজনীতি সচেতন হবে। তবে দলীয় প্রভাব বিস্তারের নামে ক্যাম্পাসে সহিংসতা, গণরুম-গেস্টরুমের রাজনীতি আমাদের অপছন্দ। আমরা এমন সংস্কৃতিকে সব সময় নিরুৎসাহিত করি।

প্রশ্ন: প্রায় ৩৪ বছর ধরে চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চাকসু নিয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: চাকসু নিয়ে আমাদের পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক। আমরা চাকসু নির্বাচন দেব। সে কারণে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এই কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কমিটি আমাদের জানাবে, চাকসু নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, কখন হবে, কতটা গ্রহণযোগ্য হবে—এসব বিষয়। এর বাইরে চাকসু নিয়ে আপাতত আর কিছু বলতে চাই না।

প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আপনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চবিতে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমি তুচ্ছ, বর্ণহীন একজন শিক্ষক। উপাচার্য হওয়ার আগে আশপাশের দু-চারজন ছাড়া ক্যাম্পাসের আর কেউ আমাকে চিনতেন না। কর্মজীবনের ৪০টি বছর আমি এখানে কাটিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে আমার বিচরণ শ্রেণিকক্ষকেন্দ্রিক, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ছিল। আমি তাদের যত্নের সঙ্গে পড়িয়েছি। ফলে শিক্ষার্থীরা আমাকে স্মরণ করে। এখনো দেশ-বিদেশ থেকে ফোন করে খোঁজখবর নেয়। আরেকটা কথা বলবে, দু-একটা বই আমি লিখেছি। এ ছাড়া মনে হয়, আমার নিজের কোনো বিশেষ কৃতিত্ব নেই।

ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার
ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার

প্রশ্ন: শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনি একজন গবেষকও। সমসাময়িক রাজনীতি, দুর্নীতি, ধর্ম, নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। আপনার গবেষণাকর্ম কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার বিপ্লবে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছে। এ অর্জনে আমাদের লেখালেখি, গবেষণার পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। দেখেন, আমরা তো রাস্তায় নেমে আন্দোলন করিনি, আমরা আমাদের লেখনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের পক্ষে লিখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যেও আমাদের লেখনী চলেছে।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: রাতারাতি আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে হার্ভার্ড-এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠান বানাতে পারব না। প্রথমে আমাদের শিক্ষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে শুধু গবেষণা নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষার্থীদের কী অবদান রয়েছে, অবকাঠামো—এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে যেন আমরা সমানতালে এগিয়ে যেতে পারি, সে জন্য কাজ চলছে।

এ ক্ষেত্রে আপনাকে বলব, আমরা শিক্ষকদের থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমাদের কিছু শিক্ষক অনেক আর্টিকেল লেখেন। কিন্তু সেটা অনলাইনে পাওয়া যায় না, তাঁরা সেটা অনলাইনে প্রকাশ করেন না। তাঁরা যদি নিজেদের আর্টিকেল অনলাইনে নিয়মিত প্রকাশ করতেন, তাহলে আমরা সামগ্রিক একটা স্কোর পেতাম। কিন্তু তাঁদের এ অসহযোগিতার ফলে আমরা স্কোর হারাচ্ছি। তবে আশাহত হচ্ছি না। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আমাদের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। ভবিষ্যতে আমাদের র‍্যাঙ্কিংয়ে আরও উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: বিগত প্রশাসনের অধীনে নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এখন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: পেছনে কী হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবছি না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়োগনীতি পুনর্বিন্যস্ত করেছি। গত ৪ জানুয়ারি নতুন নিয়োগ নীতিমালা পাস হয়েছে। আগে শুধু ভাইভার নাটক করে এখানে শিক্ষক নিয়োগ হতো। আগে থেকে নাটক ঠিক করা থাকত, পরে রিহার্সেল দেওয়া হতো। এখন আমরা ওই রাস্তা থেকে সরে এসেছি। নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে লিখিত পরীক্ষা নেব, প্রেজেন্টেশন নেব, এরপর ভাইভা নেব। এ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বলি, আগে একটা ভাইভা দিয়ে এখানে অনেকে শিক্ষক হয়ে যেতেন। দেখেন, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হতেও এখন প্রিলি-ভাইভা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। আর এখানে একটা ভাইভা দিয়ে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যেতেন। আমি ভিসি থাকতে সেটা হতে দেব না।

প্রশ্ন: বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমাদের যেসব ফ্যাকাল্টি রয়েছে, তার মধ্যে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওশানোগ্রাফি, ফরেস্ট্রি, সয়েল সায়েন্স, ন্যানোটেকনোলজি ও ফিশারিজে দুর্দান্ত গবেষণাকর্ম চলছে। এসব ফ্যাকাল্টির কিছু শিক্ষক পৃথক পৃথকভাবে চমৎকার গবেষণার কাজে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আমার পর্যবেক্ষণে আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্সও অন্য ফ্যাকাল্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো করছে। আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেল রয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্মের জন্য সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করেন।

প্রশ্ন: বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের নামে চবিতে একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। এ কেন্দ্রটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। গবেষণাকেন্দ্রটি আরও সক্রিয় করা যায় কীভাবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এ গবেষণাকেন্দ্রের উদ্যোগে একটি গবেষণা মেলা করা হয়। এ মেলায় আমাদের সব শিক্ষকের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করা হয়। এ মেলায় সব শিক্ষকের পাশাপাশি ইয়াং ফ্যাকাল্টিরাও অংশ নেন। এ ছাড়া এ গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো আমরা এখন প্রকাশ্যে বলছি না। অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। অধ্যাপক জামাল নজরুল আর ড. ইউনূস—দুজনই তো আমাদের রত্ন। ইউনূসের সঙ্গে জামাল নজরুলের নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। এ গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে আমাদের বিশেষ যে পরিকল্পনা রয়েছে, তার সঙ্গে এটাকে আরও কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেটা করা হবে।

ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার
ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার

প্রশ্ন: ড. জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে চবির নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সে জন্য শিক্ষার্থীরা জামাল নজরুলের স্মরণে তাঁর নামানুসারে বৃত্তি চালুর দাবি জানিয়েছেন...

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বৃত্তি চালু করা, তাঁকে নিয়ে আরও কী কী কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। আমরা কাজ করব।

প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারবার। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন...

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সমাবর্তন আয়োজন সামনে রেখে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছি। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁকে জানিয়েছি, ‘আমাদের সিন্ডিকেটে সর্বসম্মত একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে চবি ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে চাই।’ চবির পরবর্তী সমাবর্তনে আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেব। আগামী বর্ষা শুরু হওয়ার আগে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৪
ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালন করা হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাহসী জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি এবং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ৩১ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে ৩১ ডিসেম্বর থেকে। যা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফি জমা দেওয়া যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকা সাপেক্ষে জিপিএ উন্নয়ন পরীক্ষার্থীসহ আবশ্যিক ও নৈর্বাচনিক বিষয় ও বিষয়গুলো এক থেকে চার বিষয়ে ২০২৫ সালে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ২০২৬ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য বিষয় ও বিষয়গুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবরে সাদা কাগজে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশ করবে।

আরও বলা হয়, বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফরম পূরণ করা যাবে ২০২৬ সালের ১২ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা হারে বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফি জমা দেওয়া যাবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আরও বলা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) ২ হাজার ৪৩৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে ২ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ হিসেবে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।কোনো শিক্ষার্থীর নবম ও দশম শ্রেণির মোট ২৪ মাসের বেশি বেতন নেওয়া যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) স্থায়ী ক্যাম্পাসের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট ২০২৫’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল এবং ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, যা ‘প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিক’ খ্যাত—আইসিপিসির এই রিজিওনাল পর্বটি ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ বিইউবিটি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, বিইউবিটি এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করার গৌরব অর্জন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিইউবিটির উপাচার্য ড. এ বি এম শওকত আলী উপস্থিত সাংবাদিকদের এবং এই আয়োজনের গর্বিত স্পনসরদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হলো সারা দেশ থেকে বাংলাদেশের সেরা প্রোগ্রামারদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের মেধা বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া।’

শওকত আলী আরও জানান, এবারের আয়োজনে সারা বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। মোট ৩১৩টি টিমের ৯৩৯ জন মেধাবী প্রোগ্রামার এই চূড়ান্ত পর্বে লড়বেন, যা বাংলাদেশে আইসিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য মো. শামসুল হুদা এফসিএ।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তুলে ধরেন আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর আরসিডি (RCD) এবং বিইউবিটির সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাইফুর রহমান এবং আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ও এনএসইউর ইসিই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল লায়েস এম এস হক।

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিচারক (২০০৩-২০১৮) শাহরিয়ার মঞ্জুর এবং বিইউবিটির প্রকৌশল ও ফলিতবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুন্সী মাহবুবুর রহমান। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিইউবিটির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: তিন দিনেও প্রকাশ করা হয়নি ব্যালট নম্বর, প্রচারে নেমে বিপাকে প্রার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদের ‎আসন্ন নির্বাচনে ক্যাম্পাসে প্রচার শুরু হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। তফসিল অনুযায়ী টানা ১৩ দিন চলবে এই প্রচার। তবে প্রচার শুরুর পর তিন দিন পার হলেও প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা।

‎‎তফসিল সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর। প্রচারণার ১৩ দিন সময়ের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচারণায় বাধার অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা।

‎‎শিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেল’ থেকে ভিপি প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যালট নম্বর না থাকায় প্রচার ও পেপার ছাপাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নাম সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

‎ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেল’ থেকে জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচার ব্যাহত হচ্ছে এবং এতে নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। দ্রুত ব্যালট নম্বর প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

‎স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা দায়িত্বহীন। প্রার্থিতা ও আচরণবিধি-সংক্রান্ত অভিযোগে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার পাশাপাশি ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় প্রচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কোনো পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

‎‎এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলছে। প্রার্থীদের নাম সংশোধনের জন্য আমাদের কাছে আবেদন এসেছে অনেকগুলো। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নাম সংশোধন বা নিকনেম রাখার জন্য কাজ করছি। ফলে আমাদের কিছুটা সময় বেশি লাগছে।’

‎এর আগে ৪ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই তফসিল অনুযায়ী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৪ ডিসেম্বর প্রত্যাহারকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভোট গ্রহণের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর, ভোট গণনা ৩০ ডিসেম্বর (ভোট গ্রহণ শেষে) এবং ফলাফল ঘোষণা ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত