Ajker Patrika

হৃদয়-পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে...

গুঞ্জন রহমান
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২১: ৪৫
হৃদয়-পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে...

খালিদের প্রতিটি গানই সুরুচির পরিচায়ক। সেই যে ৮০-র পরপর শুরু করলেন গান গাওয়া। ‘চাইম’ ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট হিসেবে তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে সুন্দর কথা আর হৃদয় ছোঁয়া সুরের জন্য। কীর্তনখোলার পারের ছেলে খালিদ নিজেকে বলতেন গাঁয়ের ছেলে। তাঁর ব্যান্ড চাইমও লোকগানের প্রতি বিপুল আগ্রহী ছিল। চাইমের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটিই তো লোকজ ধাঁচের, ‘নাতি খাতি বেলা গেইলো, শুতি পারলাম না, আহারে সদরুদ্দির মা।’ এই গানটি কোনো চিরায়ত বাংলা লোকগান, নাকি তাঁদের নিজেদেরই (বা চাইমের জন্য অন্য কারও লেখা বা সুর করা) গান, তা আমার জানা নেই। রিলিজ হওয়ার সময় অ্যালবাম কভারে নিশ্চয়ই সে তথ্য লেখা ছিল, আমার এখন আর মনে পড়ছে না। কিন্তু গানের বাণী চিরায়ত লোকগীতিরই প্রমাণ রাখে।

‘বড় চাচার গরু ছুটে লাউয়ের জাংলা খাইলো 
চাচা আইসে খালি খালি চাচীরে কেন্ মাইল্লো 
সময় কইরে বাড়ির কেউ তো চোহি দ্যাকলো না! 
আহারে সদরুদ্দির মা…’

কথাগুলো গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত চর্চার এক শাশ্বত নিদর্শন। আবার কীর্তনখোলা নদী নিয়ে অপূর্ব সুন্দর একটি গানও সে সময় উপহার দিয়েছিল চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অপরূপ এক নমুনা তাঁরা উপস্থাপন করেছিলেন উচ্চশিক্ষা নামের একটি গানে।  

পড়ালেখা শেষ করে বেকারত্বের যুগে মোরা 
এ কেমন অভিশাপ বলো 
কেউ নেতা বনে যায়
কেউ প্রেমের তরী বায়
ডিমোশনে হয় টলোমলো
এ কেমন অভিশাপ বলো...

এ রকম কথার এবং কীর্তন আঙ্গিকের প্যারোডি সুরে তৈরি সেই গান সেকালে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিল মননশীল যেকোনো মানুষকে।

আবার, বাংলার নারীদের চিরায়ত দুঃখ শরীরের কালো রং নিয়েও যুগোপযোগী গান করেছিলেন চাইম ব্যান্ডের খালিদ। ‘কালো মাইয়া কালো বইলা কইরো না কেউ হেলা...।’ এ রকম কথার সেই গান এক দুঃসহ সামাজিক সংকটের কথা তরুণ শ্রোতাদের ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আরেকটি গান, ‘ও আমার হাঁসের ছাও রে...’ গ্রামীণ জীবনের আরেক নিত্য ঘটনা তুলে এনেছে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে। এসব হলো ব্যান্ড মিউজিকের ভরা যৌবনে বাংলা লোকজ সংগীতকে দেয়া চাইমের অবদান, খালিদ সাইফুল্লাহ্‌র অবদান।

খালিদ চলে গেলেন তাঁর আবেগমাখা দরাজ গলার গানগুলো রেখে। এক জীবনে বারবার ঘুরেফিরে শোনার জন্য যা যথেষ্টসোলস, ফিডব্যাক ও মাইলসের পরেই গড়ে ওঠে চাইম নামের ব্যান্ডটি। বিটিভির ব্যান্ড শোতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে রাতারাতি সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দলটি। সে সময়েই নজর কাড়েন খালিদ, তাঁর দরাজ কণ্ঠ আর স্টাইলিশ পারফরমেন্সের জন্য। জিনস, টি–শার্ট, কেডস, সানগ্লাসের সঙ্গে লম্বা চুলের গেটআপে নিজের একটা পারফেক্ট রকস্টার ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি। সেই তিরাশি-চুরাশির দিকে তাঁর স্টাইলিশ পারফরম্যান্স অনুকরণ করতেন সমকালীন অনেক ব্যান্ড তারকা। কেবল দর্শনধারীই নন, তিনি ছিলেন প্রকৃত গুণবিচারীও। সে কালে সোলসের তপন চৌধুরী ও নাসিম আলী খান, ফিডব্যাকের মাকসুদ আর চাইমের খালিদ—   এঁরাই ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের আইকনিক ভোকাল। মনে রাখতে হবে, জেমস তখনো নজর কাড়তে পারেননি, আইয়ুব বাচ্চু সেভাবে গাইতে শুরুই করেননি, পার্থ বড়ুয়া এলেন আরও পরে, মাইলসের হামিন ও শাফিন তখনো বাংলা গান করছেন না। কোনো প্রকার ফাঁকি ঝুঁকিহীন, একেবারে তৈরি গলায় গান করতেন খালিদ। কণ্ঠে যেমন ছিল আবেগ, তেমনি ছিল জোর। অনেক চড়ুইয়ে উঠে যেতে পারতেন সাবলীলভাবে, নাকি সুর লাগাতেন না, গাইতেন শুদ্ধ উচ্চারণে, স্পষ্ট স্বরে।

নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যখন মিক্সড অ্যালবামের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকল, খালিদের যেন পুনর্জন্ম দেখলাম আমরা। একের পর এক মিক্সড অ্যালবাম, খালিদের কণ্ঠে একের পর এক হিট সিংগলস। তখনকার সময়ে জনপ্রিয় সব ব্যান্ডের ভোকালিস্টদের নিয়ে মিক্সড অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হলেও, দশ বারোটা গান থেকে হিট করত দুই-তিনটি, বড়জোর। সেই দু-তিনটির মধ্যে খালিদের একটি গান থাকত। আর, সেকাল থেকে আজ প্রায় তিন দশক পরের অবস্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, দুই-তিনটিও নয়, বড় জোর একটি করে গানই টিকে আছে, যে গানটি খালিদের গাওয়া। সরলতার প্রতিমা, যদি হিমালয় হয়ে, কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে, আবার দেখা হবে/এখনই শেষ দেখা নয়, হয়নি যাবার বেলা, আকাশনীলা ইত্যাদি গানগুলো সবই কালোত্তীর্ণ, ক্রমশ এগিয়ে চলেছে কালজয়ী বাংলা গান হওয়ার পথে। এগুলো সবই বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামে গাওয়া।

যে কথাটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানের কথা ও সুরে দারুণ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। গানগুলোর খুব কমই তাঁর লেখা বা সুর করা। কিন্তু তিনি লিরিক বুঝতেন, সুর চিনতেন। তাই দশ-বারোজন শিল্পীর জন্য করা দশ বারোটা গান থেকে ঠিকঠাক বেছে নিতে পারতেন নিজের জন্য সেরা গানটাই। কিংবা কে জানে, গানের কম্পোজারেরাই হয়তো তাঁর জন্য আলাদা করে রাখতেন তাঁর সেরা কাজটা।

‘সে যে হৃদয় পথের রোদে একরাশ মেঘ ছড়িয়ে/ হারিয়ে গেল নিমেষেই...’ ভেবে দেখুন তো, প্রেম ভেঙে যাওয়ায় প্রেমিকাকে দোষারোপ করার, তাকে রীতিমতো ভিলেন বানিয়ে দেয়ার গাজোয়ারির কালে তিনি কত নান্দনিকভাবে তুলে ধরলেন ভালোবাসা হারানোর কথা! প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করার জনপ্রিয় চর্চার কালেই তিনি স্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলেন, ‘নীরা, ক্ষমা করো আমাকে/ এতটুকু সুখ তোমায় পারিনি দিতে!’ এমনটাই কি হওয়া উচিত নয় সকল ক্ষেত্রে? আবার দেখুন, ভালোবাসা হারানোর দুঃখকে কী অদ্ভুতভাবে তিনি বর্ণনা করলেন একটিমাত্র বাক্যে, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে এ হৃদয়ে, সে কিছুই নয়!’ কিংবা, ‘যাবার বেলায় শুধু সান্ত্বনা, নয় কান্না/ আবার দেখা হবে, এখনই শেষ দেখা নয়’ এভাবেও তো সম্পর্কের ইতি টানা যায়। ‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা/ তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা’–এভাবেই বুঝি কমপ্লিমেন্ট দিতে হয় প্রেয়সীকে।

খালিদের গাওয়া প্রতিটি গানের কথা ও সুরে দারুণ সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়খালিদ চলে গেলেন ষাট বছর বয়সে। মধ্যম গড় আয়ুর দেশে ষাট বছর তেমন বেশি না হলেও খুব কম বয়স নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত জানাশোনা থেকে উপলব্ধি করি, তিনি হয়তো আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। সঞ্জীব চৌধুরীর মতো তিনিও বুঝি অপচয় করে গেলেন নিজের যোগ্যতাকে, প্রতিভাকে, জীবনটাকেই।

শেষ দশ বছরে তেমন একটা গান করেননি। নতুন গান ছিল কি না, আমার শোনা হয়নি। তাঁর জীবনযাপনও খুব সুশৃঙ্খল ছিল না। প্রবাসে স্থায়ী ঠিকানা গড়েছিলেন। তবু দেশে ছুটে আসতেন বারবার। গান করতে চাইতেন। নতুন কিছু করতে চাইতেন। থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটা হয়তো ভালো, কিন্তু সে তো আমজনতার ক্ষেত্রে। একজন শিল্পীর জন্য, বাঙালি শিল্পীর জন্য কি ওই ভিনদেশ, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক বাতাবরণ খুব অনুকূল? প্রবাস-জীবনে জীবিকার চিন্তা হয়তো তাঁর ছিল না। কিন্তু মনের খোরাক কি ডলার গুনে মেটে? তাই হয়তো দেশে আসতেন বারবার গানের টানে। সে গান করা হতো না। এ দেশে যে গানের পরিবেশটাই গেছে বদলে! এখানে এখন রুচিমান গায়কের কোথায় স্থান? উদ্ভট কিছু করতে পারা তো খালিদের মতো শিল্পীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। যে অভিমানে নিজেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিলেন সাদি মহম্মদ, সেই একই অভিমান হয়তো একটু অন্যভাবে ছিল খালিদের মনেও। নয়তো এমন দরাজ কণ্ঠে বছরের পর বছর কোনো গান শোনা যায়নি কেন? দু’জনের মৃত্যু দুইভাবে হলেও, আমার কাছে তা এই অসময় যাত্রাকে অভিন্ন যাত্রাই মনে হয়।

খালিদ চলে গেলেন তাঁর আবেগমাখা দরাজ গলার গানগুলো রেখে, এক জীবনে বারবার ঘুরেফিরে শোনার জন্য যা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ ক’জন আইকনিক শিল্পীকে হারাল আমাদের গানের জগৎ। আমাদের আধুনিক বাংলা গানের জগতে কেবল শূন্যতাই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক। সে শূন্যতা পূরণ হচ্ছে কতটুকু? আরেকজন সুরুচিবান খালিদ সাইফুল্লাহ্ আসবেন আর কবে?

লেখক: কবি, গল্পকার, গীতিকার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘রাক্ষস’-এর গল্প বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে সুস্মিতাকে

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘রাক্ষস’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের। এ মাসের শুরুতেই শোনা গিয়েছিল এমন খবর। জানা গিয়েছিল দেশের বাইরে রাক্ষস সিনেমার দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ে যোগ দেবেন তিনি। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে গত বুধবার বিএফডিসিতে রাক্ষস সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় উপস্থিত হলেন নায়িকা। জানালেন রাক্ষসের গল্পই তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাক্ষস সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কারণ জানিয়ে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্মাতা হৃদয়ের কাছ থেকে গল্পটা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গল্পের জন্যই এ সিনেমায় যুক্ত হওয়া। কারণ এই গল্পে নায়িকার অনেক কিছু করার আছে। চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে নিজের ২০০ ভাগ দিয়ে চেষ্টা করব।’

প্রথমবার ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি ভীষণ এক্সাইটেড, এই প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি, সিনেমায় অভিনয় করছি। এই দিনটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল। অনেকবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। ভালো একটি টিমের সঙ্গে প্রথমবার বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করতে চলেছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

ঢাকাই সিনেমায় কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে করলেও সবার সহায়তায় সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করতে চান সুস্মিতা। পেতে চান বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসা। সুস্মিতা বলেন, ‘যখন সিনেমায় নাম লেখাই তখন কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাউকেও চিনতাম না। অডিশন দিয়ে অনেক কষ্ট করে সিনেমায় এসেছি। ওটাও যেমন আমার জন্য কঠিন ছিল, তেমনি এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রথম কাজটা চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু এখানে এসে টিমের সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জটা উতরে যেতে পারব। তাঁরা একবারের জন্য আমাকে মনে করতে দিচ্ছে না যে আমি অন্য দেশ থেকে এসেছি। আমি এ দেশের দর্শকদের ভালোবাসা নিতে এসেছি, আশা করছি অনেক ভালোবাসা পাব।’

ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছেন সুস্মিতা। পড়াশোনায়ও ছিলেন খুব ভালো। তাই পরিবারের চাওয়া ছিল আগে পড়াশোনা শেষ হবে, তারপর অন্য কাজ। মা-বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন সুস্মিতা। পড়াশোনা শেষে বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু চাকরিটা করা হয়নি। তিনি হেঁটেছেন ছোটবেলার স্বপ্নের দিকে, অভিনেত্রী হতে।

২০২১ সালে ‘প্রেম টেম’ সিনেমা দিয়ে টালিউডে অভিষেক হয় সুস্মিতার। এরপর কাজ করেছেন ‘চেঙ্গিজ’, ‘মানুষ’সহ একাধিক সিনেমায়। এবার নাম লেখালেন ঢাকাই সিনেমায়। রুপালি পর্দায় নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সুস্মিতা বলেন, ‘প্রেম টেম সিনেমার সুস্মিতা আর রাক্ষসের সুস্মিতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। চার বছর হয়ে গেছে প্রেম টেম সিনেমার। এই সময়ে অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে আমার কাজে, ব্যক্তিত্বে। আশা করছি পর্দায় সেটা বুঝতে পারবেন সবাই।’

রাক্ষস সিনেমায় সুস্মিতার বিপরীতে আছেন সিয়াম আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় সিনেমার অ্যানাউন্সমেন্ট টিজার। ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে ভয়ংকর এক সিয়ামকে দেখা গেল। ফ্লোরের চারদিকে রক্তের ছোপ, রক্তমাখা সাদা স্যুট পরা সিয়ামের এক হাতে চায়নিজ কুড়াল অন্য হাতে পিস্তল। কামড়ে ধরে আছেন একটি গোলাপ। হাতের অস্ত্র উঁচিয়ে বাথটাবে পড়ে থাকা একটি মৃত বাঘের দিকে গুলি ছুড়লেন।

টিজার দেখে বোঝাই যাচ্ছে বরবাদ সিনেমার মতো রাক্ষসেও ভরপুর অ্যাকশন, ভায়োলেন্স দেখাবেন নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়। নির্মাতা জানালেন, এ সিনেমায় একটি প্রেমের গল্প আছে, যে প্রেমের কারণে সিয়াম অভিনীত চরিত্রটি রাক্ষস হয়ে ওঠে। এতে আরও অভিনয় করছেন বাপ্পারাজ, আলীরাজ প্রমুখ। সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রিয়েল অ্যানার্জি প্রোডাকশনের ব্যানারে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শুটিং। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের রোজার ঈদে মুক্তি পাবে রাক্ষস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় দুই কনসার্টে গাইলেন আতিফ আসলাম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এ মাসে ঢাকায় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী আতিফ আসলামের দুটি কনসার্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শঙ্কা জেগেছিল অনুমতি নিয়ে। স্থগিত হওয়ার শঙ্কা আছে জেনে দুটি কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে যৌথভাবে ১৩ ডিসেম্বর একটি কনসার্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেইন স্টেজ ও স্পিরিটস অব জুলাই। তাতেও হয়নি শেষরক্ষা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয় সেই কনসার্ট। তবে কনসার্ট বাতিল হলেও ঢাকায় এসেছেন আতিফ আসলাম। একের পর এক প্রাইভেট কনসার্টে গান শোনাচ্ছেন তিনি।

গতকাল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) আয়োজিত ‘মিউজিক বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ শীর্ষক কনসার্টে গান শোনান আতিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত এ কনসার্টে প্রবেশের সুযোগ ছিল শুধু এআইইউবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের। বহিরাগতদের প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি।

আতিফের কনসার্ট ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল এআইইউবিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কনসার্ট দেখতে মাঠে প্রবেশ করতে ছিল দীর্ঘ লাইন। বেলা ২টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হলেও সকাল থেকেই কনসার্টের স্থলে ভিড় করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তিল ধরার জায়গা ছিল না মাঠে। আতিফও নিরাশ করেননি তাঁদের। গেয়ে শোনান তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো। আতিফের আগে এই কনসার্টে গান শোনান দেশের সংগীতশিল্পী মিনার রহমান।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘দ্য ফাইনাল নোট’ শিরোনামের আরেকটি কনসার্টে গান শোনান আতিফ আসলাম। ওই কনসার্টে শুধু গুলশান ক্লাবের সদস্যরাই আমন্ত্রিত ছিলেন। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকায় আতিফের ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রিকেট খেলায় মেতেছেন তিনি।

এর আগে পাকিস্তানের আলী আজমত ও ব্যান্ড কাভিশের কনসার্ট বাতিল হলেও তাঁরাও বাংলাদেশে এসেছিলেন। শোনা গেছে, তাঁরাও ঢাকায় একাধিক প্রাইভেট কনসার্টে পারফর্ম করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এ সপ্তাহের ওটিটি: ‘সাবা’সহ মুক্তির তালিকায় যেসব সিনেমা-সিরিজ

প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পাচ্ছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।

বিনোদন ডেস্ক
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সাবা (বাংলা সিনেমা)

  • মুক্তি: হইচই (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মেহজাবীন চৌধুরী, মোস্তফা মনওয়ার, রোকেয়া প্রাচী
  • গল্পসংক্ষেপ: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সাবা। বাবা গত হয়েছে। মা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মেয়ে সাবা। পরিবার আর মায়ের সেবায় নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে উঠতে পারেনি সাবা। অর্থের টানাটানিতে দিনরাত এক করে মাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা তার।

রাত আকেলি হ্যায়: দ্য বানসাল মার্ডারস (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, রাধিকা আপ্তে, চিত্রাঙ্গদা সিং
  • গল্পসংক্ষেপ: ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া ক্রাইম থ্রিলার ‘রাত আকেলি হ্যায়’ সিনেমার সিকুয়েল এটি। ইন্সপেক্টর জটিল যাদব এবার ফিরছে নতুন মামলা নিয়ে। কানপুরের ধনী ও প্রভাবশালী বানসাল পরিবারে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পড়ে জটিল যাদবের ওপর। ঘটনার অন্তরালের লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জাল উন্মোচন করে সে।

মিসেস দেশপান্ডে (হিন্দি সিরিজ)

  • মুক্তি: জিওহটস্টার (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মাধুরী দীক্ষিত, প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি, সিদ্ধার্থ চান্দেকর
  • গল্পসংক্ষেপ: ফরাসি থ্রিলার ‘লা ম্যান্টে’র অনুপ্রেরণায় তৈরি এ সিরিজে মাধুরীকে দেখা যাবে একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২৫ বছর সাজা হয় মিসেস দেশপান্ডের। তার খুন করার ধরন কপি করছে আরেকজন। তাকে ধরতে পুলিশ সহায়তা নেয় মিসেস দেশপান্ডের।

এমিলি ইন প্যারিস সিজন ৫ (ইংরেজি সিরিজ)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৮ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: লিলি কুপার, ফিলিপাইন লেরয়-বিউলিউ, অ্যাশলে পার্ক
  • গল্পসংক্ষেপ: চতুর্থ সিজনে এমিলি কুপারের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক কিছু অমীমাংসিত ছিল। সেসব প্রশ্ন ও কৌতূহল নিয়েই শুরু হচ্ছে পঞ্চম সিজন। এবার শুধু প্যারিসে নয়, এমিলির জার্নি বিস্তৃত হবে রোম শহরেও।

থাম্মা (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: প্রাইম ভিডিও (১৬ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: আয়ুষ্মান খুরানা, রাশমিকা মান্দানা, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
  • গল্পসংক্ষেপ: ভৌতিক গল্পের এ সিনেমার শুরুতে পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে গিয়ে বিপদে পড়ে অলোক নামের এক সাংবাদিক। পথ ভুলে পৌঁছায় এমন এক ডেরায়, যেখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির বাস। সেখানেই অলোকের দেখা হয় মানুষরূপী এ প্রেতাত্মার সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এ সপ্তাহের সিনেমা

আজ থেকে হল মাতাবে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’

বিনোদন ডেস্ক
আজ থেকে হল মাতাবে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’

অ্যাভাটার সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ মুক্তি পেয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। প্রথম পর্বের মতো এটি নিয়েও দর্শকদের উন্মাদনা ছিল অবাক করার মতো। আয় করেছিল ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তিন বছর ধরে দর্শকের কৌতূহল অ্যাভাটারের তৃতীয় পর্ব নিয়ে। সেই অপেক্ষা ফুরাল এত দিনে। আজ ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে মুক্তি পাবে ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সেও আজ থেকে দেখা যাবে সিনেমাটি।

অ্যাভাটারের তৃতীয় পর্বে নতুন অনেক কিছু যুক্ত করেছেন জেমস ক্যামেরন। এসেছে নতুন গোষ্ঠী, নতুন চরিত্র। ভিলেন হিসেবে দেখা যাবে ভারাং নামের একটি চরিত্রকে। অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংযোজন বলা হচ্ছে এ চরিত্রকে। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন ‘গেম অব থ্রোনস’খ্যাত অভিনেত্রী ওনা চ্যাপলিন। জানা গেছে, ভারাং হলো অ্যাশ পিপল গোত্রের নেত্রী, আগ্নেয়গিরিতে যে গোত্রের বসবাস। যারা অবিশ্বাস্য কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে। এ কারণে ভারাং অনেক কঠোর। নিজের জাতির জন্য সে যেকোনো কিছু করতে পারে।

নির্মাতা জানিয়েছেন, প্যান্ডোরার ভিন্ন এক দিক উঠে এসেছে অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশে। নাভি জাতি মানেই ভালো, আর মানুষ জাতি মানেই খারাপ—এই সরল অঙ্কের বাইরে তিনি যেতে চেয়েছেন এই পর্বে। জেমস ক্যামেরন বলেন, ‘এ পর্বের কেন্দ্রে থাকবে অ্যাশ জাতি। নাভি জাতিকে ভিন্ন এক দিক থেকে দেখিয়েছি। কারণ, আগের পর্বগুলোতে শুধু তাদের ভালো দিকই দেখিয়েছি। আর নেতিবাচক চরিত্রে দেখিয়েছি মানুষ জাতিকে। অ্যাভাটার থ্রিতে চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টে যাবে।’

দ্য ওয়ে অব ওয়াটারের ঘটনার পরপরই শুরু হয় ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশের গল্প। জ্যাক সুলি (স্যাম ওয়ার্থিংটন) ও নিতিরি (জো সালদানা) বড় সন্তানের মৃত্যুশোক সামলাতে সামলাতে নতুন বিপদের মুখে পড়ে। অ্যাশ উপজাতির নেতা ভারাং পুরোনো শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নাভিদের ওপর আক্রমণ চালায়। পরিবার, জনগোষ্ঠী ও গ্রহ রক্ষার লড়াই—এটাই রয়েছে কাহিনির কেন্দ্রে।

হলিউডের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভিজ্যুয়ালের দিক থেকে আগের দুই পর্বকে ছাড়িয়ে গেছে ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ। বিশেষ করে শেষ ৩০ মিনিটের যুদ্ধের দৃশ্যে গ্রাফিকস দর্শকদের নিয়ে যাবে অন্য জগতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত