বাবার গান সংরক্ষণেই সব ব্যস্ততা

শিহাব আহমেদ। 
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩, ০৯: ২৫
আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ১১: ১৭

১৯৯৩ সালে ‘উল্কা’ সিনেমায় প্লেব্যাকের মধ্য দিয়ে গানের ভুবনে পথচলা শুরু উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার, প্রযোজক, পরিচালক, সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কন্যা কণ্ঠশিল্পী দিঠি আনোয়ারের। আজ সংগীতজীবনে পথচলার ৩০ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। ক্যারিয়ারের দীর্ঘ এই পথচলা ও সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে দিঠির সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ।

আজ সংগীতজীবনের ৩০ বছর পূর্ণ করলেন। কেমন লাগছে? 
১৯৯৩ সালের ২০ মে শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে প্রথম সিনেমার গানের জন্য ভয়েস দিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে ৩০ বছর হয়ে গেল। এতটা বছর টিকে থাকাটা সত্যিই আনন্দের। আব্বু (গাজী মাজহারুল আনোয়ার) বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি আছেন তাঁর গানের মধ্য দিয়ে সবার মনে-প্রাণে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে।

প্রথম রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 
খুব ভয়ংকর। আমি প্রথম গান করেছিলাম ‘উল্কা’ সিনেমায়। খুব ছোট ছিলাম। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে বলেই হয়তো এত ছোট বয়সে এমন সুযোগ পেয়েছিলাম। বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন সেদিন। আমার প্রথম রেকর্ডিং উপলক্ষে অনেক গুণী মানুষকে দাওয়াত দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন শ্রুতি রেকর্ডিং স্টুডিওতে রাজ্জাক আঙ্কেল, কবরী ম্যামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সংগীত পরিচালক ছিলেন সত্য সাহা। পারফেক্ট না হলে তিনি ওকে বলতেন না। সবকিছু মিলিয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। গানটি ঠিকভাবে গাইতে পারছিলাম না। সবাই মিলে সাহস দিলেন। ১৮তম টেকে গানটি শেষ করতে পেরেছিলাম। গানটির কথা ছিল ‘মায়ের কোলে জন্ম নিয়ে বাবার পিঠে বড় হলাম।’ সেদিন আরেকটি দ্বৈত গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে ছিলেন পলাশ।

বিশেষ এই দিনটি উদ্‌যাপনের কোনো পরিকল্পনা আছে? 
আজ সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমার আম্মা, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীসহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে আব্বুর লেখা কিছু কালজয়ী গান শোনাব। পাশাপাশি তাঁর কিছু অপ্রকাশিত গানও পরিবেশন করব। আমার সঙ্গে অপু, ইউসুফও গাইবে। এমন একটি দিনে আব্বুকে খুব মিস করব। আসলে প্রতি মুহুর্তেই তাঁকে খুব মিস করি।

৩০ বছরের ক্যারিয়ারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
আমি মূলত শখের বশে গানের জগতে এসেছিলাম। শুরুটা আট বছর বয়সে হলেও গানকে কখনোই খুব সিরিয়াসলি নিতে পারিনি। বাবা বলতেন, আগে পড়ালেখা। তাঁর কথামতোই আমার সমস্ত মনোযোগ ছিল পড়ালেখায়। এরপর যখন বিয়ে হলো, তখন বাবার উপদেশ ছিল আগে সংসার। তাই, বিয়ের পর ১০ বছর গান থেকে দূরে ছিলাম। ২০১৩ সালে আবারও গানে ফিরি। বলা যায়, সেকেন্ড ইনিংস শুরু করি। এরপরও যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি, আমি সন্তুষ্ট। কারণ, আমি প্রতিযোগিতা পছন্দ করি না। নিজের মতো করেই এগিয়ে যেতে চাই।

শুরুর আর বর্তমান সময়ের মধ্যে কী পার্থক্য আছে বলে মনে করেন? 
অনেক পার্থক্য। আমার গানের সংখ্যা কম হলেও এ পরিবেশটার সঙ্গে খুব পরিচিত। আগে একটি সিনেমার গানের জন্য অনেক পরিকল্পনা হতো। শ্রোতাদের সুন্দর একটি গান উপহার দেওয়ার জন্য বারবার সিটিং হতো, আলোচনা হতো। এখন তো এসব উঠেই গেছে। এখন আমরা যাই, সংগীত পরিচালক যেভাবে বলেন সেভাবে ভয়েস দিয়ে চলে আসি। বেশির ভাগ সময়ে যিনি গান লিখেছেন তাঁর সঙ্গে দেখাই হয় না। এখন যেভাবে গান তৈরি হয়, সেই ধরনটা আমার পছন্দ নয়। ফেলে আসা দিনগুলো তাই স্বপ্নের মতো মনে হয়।

বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে? 
আমার বাবাকে নিয়ে। তাঁর গান সংরক্ষণেই আমার সব ব্যস্ততা। বাবা বেঁচে থাকতেই ২০২১ সালে তাঁর গান নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল। সেখানে ২৫০টি গানের লিরিক ও ৫০টি গানের সৃষ্টির কথা রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর আরও দুটি বই বের হয়েছে। তাঁর লেখা ২০ হাজার গানের মধ্যে ৫ হাজারের মতো গান সংগ্রহ করতে পেরেছি। ইচ্ছা আছে সব গান সংরক্ষণ করার। এ ছাড়া ডিজিটাল আর্কাইভের কাজ শুরু করেছি। এখানে আমাদের সঙ্গে রয়েছে আইপিডিসি আমাদের গান। তারা পুরো একটি সিজন বাবার গান নতুনভাবে সংগীতায়োজন করে প্রকাশ করছে। এই কাজটি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত