অনলাইন ডেস্ক
ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে ওঠে আসা ত্রিশোর্ধ্ব যুবক মুনাওয়ার ফারুকী। খুব ছোট বেলায় তাঁর মা আত্মহত্যা করেছিলেন। মা হারানোর মানসিক ধকল না কাটতেই ২০০২ সালে যখন একটু বড়, মারাত্মক ট্রমার সম্মুখীন হন। গুজরাটের ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বীভৎসতা তাঁর শৈশবের মানসপটে গেঁথে যায়।
নিজের কষ্টকে চাপা দিয়ে মানুষকে হাসাতে চেয়েছেন তিনি। এই পথে কোনো কিছুই তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। গুজরাটের যন্ত্রণার অধ্যায় পেছনে ফেলে মুম্বাইয়ে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে তিনি পরিচিত। কিন্তু সেই যাত্রাও মসৃণ হয়নি। ২০২১ সালে ‘হিন্দুবিরোধী’ কমেডি করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যে অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেটার সঙ্গে তাঁর কমেডির ন্যূনতম কোনো সংযোগ ছিল না। তারপরও তাঁকে ৩৫ দিনের মতো কারাগারে থাকতে হয়েছিল। তবে কোনো বাঁধাই মুনাওয়ার ফারুকীকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ভারতের সবচেয়ে বড় রিয়্যালিটি শো বিগ বস সিজন-১৭ এর চূড়ান্ত বিজয়ী হয়েছেন তিনি; জিতে নিয়েছেন ৫০ লাখ রুপি।
এক সময়, তাঁর তেমন কোনো অনুসারী ছিল না, বরং বিপুল পরিমাণ বিদ্বেষী ছিল। তবে বিদ্বেষীদের সংখ্যার চেয়ে নিশ্চয়ই এখন ফারুকীর ভক্তের সংখ্যা অনেক বেশি। তার খানিকটা প্রমাণ যেন পাওয়া যায়, বিগ বস জেতার পর তিনি যখন তাঁর নিজের এলাকা মুম্বাইয়ের ডুংরিতে ফিরেছেন তখন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল হাজারো মানুষ।
তবে এই অর্জনের পথটা মুনাওয়ার ফারুকীর জন্য মসৃণ ছিল না, তাই উঠে এসেছে তাঁর নিজের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, তাঁর শৈশব ছিল বিয়োগান্ত ঘটনায় পরিপূর্ণ। একেবারেই শিশু অবস্থায় মা আত্মহত্যা করেন। ২০০২ সালে মুখোমুখি হতে হয় গুজরাট দাঙ্গার। সে সময় পরিস্থিতি এতটাই কঠিন ছিল যে, একবার তিনি টানা ১২ দিন কারফিউয়ের কারণে ঘর থেকেই বের হতে পারেননি।
যাই হোক, একটু বড় হয়ে আর দশটার তরুণের মতোই স্বপ্নের শহর মুম্বাইয়ে চলে আসেন মুনাওয়ার ফারুকী। কিন্তু পরিণত বয়সের আগেই এমন সব কাজ করে তাঁকে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে যা খুব একটা প্রচলিত নয়। বিগ বসের সেটে এসেও ফারুকী তাঁর অতীত জীবনের বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাননি বরং ক্রমাগত নিজের আন্ডারডগ অস্তিত্বকে একটু একটু করে বিকশিত করেছেন। এমনভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে সাধারণ মানুষও স্বপ্ন দেখতে পারে।
বিগ বসের সেটে মুনাওয়ার তাঁর সহ-প্রতিযোগীদের খানিকটা খোঁচা দিয়েই বলেন, ‘আমি ডুংরি থেকে এসেছি। বিগ বসে ভোট না পেলে আপনাকে সেট থেকে বের করে দেওয়া হবে, কিন্তু আমাদের ছোট্ট বাড়িতে ঘুমের মধ্যে যদি আপনি এক ইঞ্চি বাড়তি নড়াচড়া করেন তবে আপনাকে ঘর থেকেই বের করে দেওয়া হবে।’
সহ-প্রতিযোগীদের খোঁচা দিলেও আমজনতার সঙ্গে মুনাওয়ারের যোগাযোগ করার ক্ষমতা অসাধারণ এবং এটিই মূলত তাঁর স্ট্যান্ড কমেডির ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মঞ্চে মুনাওয়ার ফারুকী যেন, একজন তরুণ কলেজছাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি তাঁর দাঙ্গা কবলিত জীবন নিয়ে, ভারতে মুসলমানদের নিয়ে প্রচলিত মনোভাব নিয়ে খোঁচা দিয়ে পারফর্ম করেছেন। তাঁর র্যাপ গানেও একই ধরনে বিষয়বস্তুগুলো উঠে এসেছে। জীবনে ধাক্কা খেয়েছেন কিন্তু মুনাওয়ার ভেঙে পড়েননি।
নিজের অতীতের বিষয়ে মুনাওয়ার ফারুকী খুবই সাহসী। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার অতীতকে আমার কাজে তুলে ধরি মূলত, আমার অতীত নিয়ে আমি কতটা গর্বিত তা প্রকাশ করার জন্য। এটা কখনই সহানুভূতি অর্জনের জন্য নয় কিংবা শুধু মানুষকে বলার জন্য নয় যে, আমি কত কষ্ট করে এত দূর এসেছি।’
নিকট অতীতে মুনাওয়ার ফারুকীর জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা বোধ হয় বিনা কারণে জেলে যাওয়া। ২০২১ সালে মুনাওয়ার ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে স্ট্যান্ডআপ কমেডির জন্য ১৪টি শহর সফরের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ইন্দোরে যান মুনাওয়ার ফারুকীরা। কিন্তু শো শুরুর আগেই তাঁকে ও আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, ‘হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত হানার’ অভিযোগে। অথচ তিনি সে ধরনের কোনো কমেডিই করেননি। পরে পুলিশও বলেছে, তাদের কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। তারপরও বিনা কারণে, মুনাওয়ার ফারুকী ৩৫ দিনে কারাগারে ছিলেন।
ঘটনাটি ফারুকীকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছিল। একপর্যায়ে তিনি তাঁর স্ট্যান্ডআপ কমেডি, র্যাপ গান দুটোই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। আক্ষেপ করে তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ঘৃণাই জিতল, হেরে গেল এক শিল্পী। এখানেই সব শেষ।’
এর দুই মাস পর জীবনকে নতুন মোড় দিতে মুনাওয়ার ফারুকী অংশ নেন টিভি শো ‘লক আপে’। বলিডউ অভিনেত্রী ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত কঙ্গনা রনৌত উপস্থাপিত এই শোর বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হন মুনাওয়ার। এই শোতে বিজয়ী হওয়ার ঘটনা মুনাওয়ারের জীবনকে নয়া মোড় দেয়। যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। সেই শো শেষ হওয়ার পর কঙ্গনা ‘মুসলিম’ মুনাওয়ারের ব্যাপক প্রশংসা করেন।
সেই শো সত্যিকার অর্থেই মুনাওয়ারের জীবন ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর কর্মজীবন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। সেই সময়ের পর তিনি দারুণ কিছু র্যাপ তৈরি করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্পটিফাই ও ইউটিউবে তাঁর গানের লাখ লাখ শ্রোতা দেখা যায়। তাঁর ইনস্টাগ্রাম আবারও সবার সামনে ফিরে আসে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপার, তিনি আবারও স্ট্যান্ডআপ কমেডিতে ফিরে আসেন। বিগ বসের সেটেও মুনাওয়ার ফারুকী তাঁর স্বভাবসুলভ চপলতা, প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রেখেছিলেন।
যাই হোক, বিগ বস জয় মুনাওয়ার ফারুকীর জীবনকে যেন আপাত পূর্ণতা দিয়েছে। অন্তত বিশ্লেষকেরা তাই মনে করেন। তাদের মত, দর্শক মুনাওয়ার ফারুকীকে স্বভাবসুলভ চপলতা, প্রাণচাঞ্চল্য ও সরস কমেডির জন্যই পছন্দ করেছে। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, ভারতের জন মানুষের একটা বড় অংশই মনে করে—ফারুকীর জীবনের গল্প, তাঁর কমেডির ঢঙ তাদের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়।
অনেকে বলছেন, ফারুকী যেভাবে নিজেকে ভারতের ‘সবচেয়ে ঘৃণিত’ তরুণ থেকে ‘প্রিয়তম’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অপ্রচলিত যে উপায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। আসিম আলীর মতে, ‘এটি তাঁর জীবনকে সংগ্রামের একটি ধারায় আবদ্ধ করেছে দিয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন, গণমাধ্যমে পক্ষপাতদুষ্ট আক্রমণের শিকার হয়েছিলে। কিন্তু তারপরও ভারতে একজন তারকা হিসেবেই নিজের অবস্থান অর্জন করে নিয়েছেন।’ তবে ফারুকীর হয়ে সবাই খুশি নয়। জনপ্রিয় হিন্দি টিভি চ্যানেলের এক উপস্থাপক ফারুকীর জয়কে ‘উদ্বেগজনক, কষ্টদায়ক এবং হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফারুকীর এই জয় কেবল তাঁর একার নয়। এই জয় তাঁর মুম্বাইয়ের এলাকা ডুংরিও দরিদ্রদের জয়। তবে এসব ছাপিয়ে অনেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা তুলেছেন। অনেকে তাঁর দাম্পত্য জীবন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য নিজের প্রেমহীন দাম্পত্যের কথা স্বীকার করেছেন। যাই হোক, ব্যক্তির জীবনে উত্থান-পতন, ইতিবাচক-নেতিবাচক গল্প জড়িয়ে থাকে। মুনাওয়ারেরও আছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমি কখনোই বিতর্কিত হতে চাইনি, তাঁরাই আমাকে এমন বানিয়েছে। আমি তো কমেডি নিয়েই সুখী ছিলাম।’
বিবিসি থেকে অনূদিত
ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে ওঠে আসা ত্রিশোর্ধ্ব যুবক মুনাওয়ার ফারুকী। খুব ছোট বেলায় তাঁর মা আত্মহত্যা করেছিলেন। মা হারানোর মানসিক ধকল না কাটতেই ২০০২ সালে যখন একটু বড়, মারাত্মক ট্রমার সম্মুখীন হন। গুজরাটের ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার বীভৎসতা তাঁর শৈশবের মানসপটে গেঁথে যায়।
নিজের কষ্টকে চাপা দিয়ে মানুষকে হাসাতে চেয়েছেন তিনি। এই পথে কোনো কিছুই তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। গুজরাটের যন্ত্রণার অধ্যায় পেছনে ফেলে মুম্বাইয়ে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে তিনি পরিচিত। কিন্তু সেই যাত্রাও মসৃণ হয়নি। ২০২১ সালে ‘হিন্দুবিরোধী’ কমেডি করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যে অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেটার সঙ্গে তাঁর কমেডির ন্যূনতম কোনো সংযোগ ছিল না। তারপরও তাঁকে ৩৫ দিনের মতো কারাগারে থাকতে হয়েছিল। তবে কোনো বাঁধাই মুনাওয়ার ফারুকীকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ভারতের সবচেয়ে বড় রিয়্যালিটি শো বিগ বস সিজন-১৭ এর চূড়ান্ত বিজয়ী হয়েছেন তিনি; জিতে নিয়েছেন ৫০ লাখ রুপি।
এক সময়, তাঁর তেমন কোনো অনুসারী ছিল না, বরং বিপুল পরিমাণ বিদ্বেষী ছিল। তবে বিদ্বেষীদের সংখ্যার চেয়ে নিশ্চয়ই এখন ফারুকীর ভক্তের সংখ্যা অনেক বেশি। তার খানিকটা প্রমাণ যেন পাওয়া যায়, বিগ বস জেতার পর তিনি যখন তাঁর নিজের এলাকা মুম্বাইয়ের ডুংরিতে ফিরেছেন তখন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল হাজারো মানুষ।
তবে এই অর্জনের পথটা মুনাওয়ার ফারুকীর জন্য মসৃণ ছিল না, তাই উঠে এসেছে তাঁর নিজের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, তাঁর শৈশব ছিল বিয়োগান্ত ঘটনায় পরিপূর্ণ। একেবারেই শিশু অবস্থায় মা আত্মহত্যা করেন। ২০০২ সালে মুখোমুখি হতে হয় গুজরাট দাঙ্গার। সে সময় পরিস্থিতি এতটাই কঠিন ছিল যে, একবার তিনি টানা ১২ দিন কারফিউয়ের কারণে ঘর থেকেই বের হতে পারেননি।
যাই হোক, একটু বড় হয়ে আর দশটার তরুণের মতোই স্বপ্নের শহর মুম্বাইয়ে চলে আসেন মুনাওয়ার ফারুকী। কিন্তু পরিণত বয়সের আগেই এমন সব কাজ করে তাঁকে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে যা খুব একটা প্রচলিত নয়। বিগ বসের সেটে এসেও ফারুকী তাঁর অতীত জীবনের বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাননি বরং ক্রমাগত নিজের আন্ডারডগ অস্তিত্বকে একটু একটু করে বিকশিত করেছেন। এমনভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে সাধারণ মানুষও স্বপ্ন দেখতে পারে।
বিগ বসের সেটে মুনাওয়ার তাঁর সহ-প্রতিযোগীদের খানিকটা খোঁচা দিয়েই বলেন, ‘আমি ডুংরি থেকে এসেছি। বিগ বসে ভোট না পেলে আপনাকে সেট থেকে বের করে দেওয়া হবে, কিন্তু আমাদের ছোট্ট বাড়িতে ঘুমের মধ্যে যদি আপনি এক ইঞ্চি বাড়তি নড়াচড়া করেন তবে আপনাকে ঘর থেকেই বের করে দেওয়া হবে।’
সহ-প্রতিযোগীদের খোঁচা দিলেও আমজনতার সঙ্গে মুনাওয়ারের যোগাযোগ করার ক্ষমতা অসাধারণ এবং এটিই মূলত তাঁর স্ট্যান্ড কমেডির ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। মঞ্চে মুনাওয়ার ফারুকী যেন, একজন তরুণ কলেজছাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি তাঁর দাঙ্গা কবলিত জীবন নিয়ে, ভারতে মুসলমানদের নিয়ে প্রচলিত মনোভাব নিয়ে খোঁচা দিয়ে পারফর্ম করেছেন। তাঁর র্যাপ গানেও একই ধরনে বিষয়বস্তুগুলো উঠে এসেছে। জীবনে ধাক্কা খেয়েছেন কিন্তু মুনাওয়ার ভেঙে পড়েননি।
নিজের অতীতের বিষয়ে মুনাওয়ার ফারুকী খুবই সাহসী। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার অতীতকে আমার কাজে তুলে ধরি মূলত, আমার অতীত নিয়ে আমি কতটা গর্বিত তা প্রকাশ করার জন্য। এটা কখনই সহানুভূতি অর্জনের জন্য নয় কিংবা শুধু মানুষকে বলার জন্য নয় যে, আমি কত কষ্ট করে এত দূর এসেছি।’
নিকট অতীতে মুনাওয়ার ফারুকীর জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা বোধ হয় বিনা কারণে জেলে যাওয়া। ২০২১ সালে মুনাওয়ার ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে স্ট্যান্ডআপ কমেডির জন্য ১৪টি শহর সফরের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ইন্দোরে যান মুনাওয়ার ফারুকীরা। কিন্তু শো শুরুর আগেই তাঁকে ও আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, ‘হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত হানার’ অভিযোগে। অথচ তিনি সে ধরনের কোনো কমেডিই করেননি। পরে পুলিশও বলেছে, তাদের কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। তারপরও বিনা কারণে, মুনাওয়ার ফারুকী ৩৫ দিনে কারাগারে ছিলেন।
ঘটনাটি ফারুকীকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছিল। একপর্যায়ে তিনি তাঁর স্ট্যান্ডআপ কমেডি, র্যাপ গান দুটোই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। আক্ষেপ করে তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ঘৃণাই জিতল, হেরে গেল এক শিল্পী। এখানেই সব শেষ।’
এর দুই মাস পর জীবনকে নতুন মোড় দিতে মুনাওয়ার ফারুকী অংশ নেন টিভি শো ‘লক আপে’। বলিডউ অভিনেত্রী ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত কঙ্গনা রনৌত উপস্থাপিত এই শোর বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হন মুনাওয়ার। এই শোতে বিজয়ী হওয়ার ঘটনা মুনাওয়ারের জীবনকে নয়া মোড় দেয়। যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। সেই শো শেষ হওয়ার পর কঙ্গনা ‘মুসলিম’ মুনাওয়ারের ব্যাপক প্রশংসা করেন।
সেই শো সত্যিকার অর্থেই মুনাওয়ারের জীবন ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর কর্মজীবন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। সেই সময়ের পর তিনি দারুণ কিছু র্যাপ তৈরি করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্পটিফাই ও ইউটিউবে তাঁর গানের লাখ লাখ শ্রোতা দেখা যায়। তাঁর ইনস্টাগ্রাম আবারও সবার সামনে ফিরে আসে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপার, তিনি আবারও স্ট্যান্ডআপ কমেডিতে ফিরে আসেন। বিগ বসের সেটেও মুনাওয়ার ফারুকী তাঁর স্বভাবসুলভ চপলতা, প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রেখেছিলেন।
যাই হোক, বিগ বস জয় মুনাওয়ার ফারুকীর জীবনকে যেন আপাত পূর্ণতা দিয়েছে। অন্তত বিশ্লেষকেরা তাই মনে করেন। তাদের মত, দর্শক মুনাওয়ার ফারুকীকে স্বভাবসুলভ চপলতা, প্রাণচাঞ্চল্য ও সরস কমেডির জন্যই পছন্দ করেছে। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিম আলীর মতে, ভারতের জন মানুষের একটা বড় অংশই মনে করে—ফারুকীর জীবনের গল্প, তাঁর কমেডির ঢঙ তাদের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়।
অনেকে বলছেন, ফারুকী যেভাবে নিজেকে ভারতের ‘সবচেয়ে ঘৃণিত’ তরুণ থেকে ‘প্রিয়তম’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অপ্রচলিত যে উপায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। আসিম আলীর মতে, ‘এটি তাঁর জীবনকে সংগ্রামের একটি ধারায় আবদ্ধ করেছে দিয়েছে। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন, গণমাধ্যমে পক্ষপাতদুষ্ট আক্রমণের শিকার হয়েছিলে। কিন্তু তারপরও ভারতে একজন তারকা হিসেবেই নিজের অবস্থান অর্জন করে নিয়েছেন।’ তবে ফারুকীর হয়ে সবাই খুশি নয়। জনপ্রিয় হিন্দি টিভি চ্যানেলের এক উপস্থাপক ফারুকীর জয়কে ‘উদ্বেগজনক, কষ্টদায়ক এবং হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফারুকীর এই জয় কেবল তাঁর একার নয়। এই জয় তাঁর মুম্বাইয়ের এলাকা ডুংরিও দরিদ্রদের জয়। তবে এসব ছাপিয়ে অনেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা তুলেছেন। অনেকে তাঁর দাম্পত্য জীবন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য নিজের প্রেমহীন দাম্পত্যের কথা স্বীকার করেছেন। যাই হোক, ব্যক্তির জীবনে উত্থান-পতন, ইতিবাচক-নেতিবাচক গল্প জড়িয়ে থাকে। মুনাওয়ারেরও আছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমি কখনোই বিতর্কিত হতে চাইনি, তাঁরাই আমাকে এমন বানিয়েছে। আমি তো কমেডি নিয়েই সুখী ছিলাম।’
বিবিসি থেকে অনূদিত
গত বছরের শেষ দিকে ‘নীলচক্র’ সিনেমার খবর দিয়েছিলেন আরিফিন শুভ। এতে শুভর বিপরীতে অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। শুটিং শেষে মুক্তির জন্য প্রস্তুত সিনেমাটি। ট্রেন্ডি ও সমসাময়িক গল্পে নীলচক্র বানিয়েছেন মিঠু খান।
২ ঘণ্টা আগেগত মার্চে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে দুই মাসের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যায় ব্যান্ড সোলস। সেই সফরে ছিলেন না ভোকাল নাসিম আলী খান। সেই সময় গুঞ্জন উঠেছিল, সোলসের সঙ্গে ৪৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন কণ্ঠশিল্পী নাসিম।
২ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ১৫ বছর বিটিভির কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন সংগীতশিল্পী আগুন। অনুষ্ঠানের নাম ‘আগুন ঝরা সন্ধ্যা’। এরই মধ্যে দুটি পর্বের শুটিং সম্পন্ন হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেপারিশ্রমিক বিষয়ক জটিলতার কারণে ‘পুষ্পা টু: দ্য রুল’ সিনেমায় আইটেম গানে পারফর্মের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন শ্রদ্ধা কাপুর। এবার খবর পাওয়া গেল, ‘ওয়ার ২’ সিনেমার আইটেম গানে নাচবেন তিনি।
১৪ ঘণ্টা আগে