তারকাদের ত্যাগের গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২২, ১৩: ২৮
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২২, ১৫: ০৩

কোরবানি মানে ত্যাগ। তারকারা অনেকেই আছেন যারা প্রতিবছর কোরবানি দিয়ে থাকেন। তাঁদের বাস্তব জীবনে ত্যাগের আরও অনেক গল্প আছে।

গানের জন্য আইনজীবী হতে পারিনি: আঁখি আলমগীর
আমি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে ল’তে ভর্তি হয়েছিলাম। বার-অ্যাট-ল’তে। সেকেন্ড ইয়ার পার হয়ে যখন থার্ড ইয়ারে উঠি, তখন আমার অ্যালবাম তুমুল হিট, প্রতিদিন শো। কাজ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। ক্লাস মিস হতে থাকে। আমাকে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ডেকে বললেন, তুমি যেকোনো একটি করো। তোমার প্রোগ্রামে যেতে হয় নিয়মিত। গান রেকর্ডিং থেকে শুরু করে তোমার অনেক ব্যস্ততা। তুমি আসলে পড়াশোনাটা ঠিকমতো করতে পারছ না। তুমি ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, আমরা চাই না তুমি দায়সারা রেজাল্ট করো। আমরা চাই তুমি ভালো রেজাল্ট করো।’ তখন ব্যাপারটি এমন হলো আমার যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। গান গেয়ে গায়িকা হব নাকি পড়াশোনা করে আইনজীবী হব। তখন আমি পড়াশোনাটা ছেড়ে দিই। গানটা বেছে নিই। আমার পরিবারেরও স্বপ্ন ছিল আমি যেন আইনবিদ্যায় পড়াশোনা করে ভালো কিছু করি। কিন্তু গানকে ভালোবেসে তাদের ইচ্ছেটা রাখতে পারিনি। আমারও ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল। আমার স্বপ্নও পূরণ করতে পারিনি। একটার জন্য একটা ত্যাগ করতে হলো। এখন অনেককে দেখি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসেন। কিংবা কাউকে লইয়ারের পোশাক পরা দেখলে আফসোস হয়। গানে অনেক খ্যাতি পেয়েছি। এখনো পরিবারেরও আফসোস রয়ে গেছে। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ বলে মনে করি।’

2অনেক দান করেছি বাসায় মৌসুমীকেও বলিনি: ওমর সানী
আমার ত্যাগের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। আমি সারা জীবনই ত্যাগ করে যাচ্ছি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন পরিবার সবার জন্যই ত্যাগ করেছি। নির্দিষ্ট কোনো উদাহরণ দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে যার জন্য ত্যাগ করেছি তাকে ছোট করা হবে। আর এখানেই আমি নিজেকে অনেক বড় মনে করি। জীবনে যত ত্যাগ করেছি, কাউকে বলিনি। অনেক দান করেছি, বাসায় মৌসুমীকেও বলিনি। আমি শুধু আমার কাজটা করে যেতে চেয়েছি। অন্যদের বলে বেড়ালে ত্যাগের মহিমা নষ্ট হয়। কোরবানির মধ্য দিয়ে যে ত্যাগ করতে শেখানো হয়, সেটা আমরা কয়জনে বুঝি? সবাই শুধু ভোগ করতে চায়। ত্যাগ করে তার মহত্ত্ব সবার কাছে বলে বেড়াতে চায়।

3অভিনয়ের জন্য নিউইয়র্কের সুখী জীবন ছেড়েছি: নিপুণ
অভিনয়ের জন্য আমরা নিউইয়র্কের সুখী জীবন ছেড়ে চলে এসেছি। সেখানে আমি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম। মাথায় মিডিয়ার পোকা চাপাতে সব ছেড়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে যাই। প্রথম দিকে বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বেশ কষ্ট হয়ে যায়। দিন যত যায় মানানসই হয়ে গেছি। তবে মেয়ের জন্য খারাপ লাগে। ওকে বাইরে পড়াতে হচ্ছে। ওর কাছাকাছি থাকতে পারছি না। এটা তো আমার জন্য সবচেয়ে বড় ত্যাগ।

4শুধু গানের কথা ভেবেছি: কনা
গায়িকা হয়ে তো জীবনের অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। আমি সব সময় মানুষের ভালোবাসার পেছনে ছুটছি। পরিবারের কথা না ভেবে শুধু গানের কথা ভাবছি। মানুষকে কথা দেওয়ার কারণে নানা সময় পরিবারের অনেক অনুষ্ঠান মিস করেছি। এ রকম ছোটখাটো ত্যাগ অনেক আছে। একটা ত্যাগের কথা বলা যায়। আমি সাধারণত পরিবারের বাইরে ঈদ করি না। ২০১২ সালে এক ঈদ বাহরাইনে করেছিলাম। মোটেও ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু সেখানকার মানুষ এত আগ্রহ নিয়ে আপ্যায়ন করেছিল, না করতে পারিনি। মানুষের ভালোবাসার জন্যই এই ত্যাগ। অন্য কোনো কারণ হলে দেশের বাইরে পরিবার ছাড়া ঈদ করতে যেতাম না।

5আমার ঘড়ি বিক্রির টাকায় একজনের প্রেম সফল হলো: আমিন খান
সে অর্থে বলতে গেলে প্রিয় কিছু ত্যাগ করতে পারিনি এখনো। বাস্তবিকে চাইলেই সবকিছু ত্যাগ করা সম্ভব হয় না। মানুষকে টুকটাক সাহায্য করি। অনেক সময় মানুষের জন্য কিছু করতে মন চায়। কিন্তু পারি না নানা বাধ্যবাধকতার কারণে। আবার ত্যাগ করেছি, এটাও বলা যায়! চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে পুরো জীবনটা ত্যাগ করেছি। আমরা তারকা হয়ে মোটেও ভালো নেই। স্বাভাবিক জীবনটা আমরা খুব মিস করি। ইচ্ছে হলেই আমরা ঘোরাঘুরি করতে পারি না। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা খেতে পারি না। এই যে আমাদের জন্য একটা বাধা। এটাই তো ত্যাগ। তবে একটা ত্যাগের কথা মনে এলে এখনো হাসি পায়। আমার এক বন্ধু প্রেম করে বিয়ে করবে। টাকা দরকার। তখন তো আমরা কলেজে পড়ি। উপার্জন শুরু করিনি। আমার কাছে এল সাহায্য চাইতে। আমি কী করব! আমার কাছেও টাকা নেই। আমার খুব পছন্দের একটা দেয়ালঘড়ি ছিল বাসায়। ঘড়িটা বাসা থেকে চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। যখন ধরা খেলাম। তখন ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবার থেকে তো গালমন্দ করা হচ্ছিল। আমি মনে মনে হাসছিলাম। যে আমার চুরি করা ঘড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে একজনের প্রেম সফল হলো। 

AFRAN-NISHOঅভিনয়ের জন্য পরিবার থেকে দূরে এলাম: আফরান নিশো
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে। পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। ভাই, বোন হই- হুল্লোড় করে বেড়ে ওঠা। বাবা-মায়ের আদর-শাসনে বেড়ে উঠেছি। ছোটবেলা থেকে ভাবনা ছিল আর যা হোক এই পরিবার ছেড়ে কখনো যাব না। এক টেবিলে একসঙ্গে বসে ভাত খাব। বাবা-মায়ের সঙ্গে এভাবেই থাকব। কিন্তু বাস্তবতার জন্য থাকতে পারিনি। এখন আমি থাকি উত্তরা। স্ত্রী ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে থাকি। বাস্তবতা বলতে, বেশির ভাগ শুটিংই হয় উত্তরা। প্রতিদিন ওখান থেকে যাওয়া-আসা করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। তাই পরিবার থেকেও বলছে উত্তরাতে বাসা নে। তবু চেষ্টা করি সময় পেলেই বাসায় যেতে। ওই এলাকার মানুষজনও তো আমার পরিচিত। সেখান থেকে উত্তরায় অনেকেই আমাকে চেনে। কিন্তু আমি চিনি না। কিছুটা একা থাকি। নাটকের জন্য আমার পরিবারকেই ত্যাগ করতে হলো। অভিনয়ের জন্য পরিবার থেকে দূরে এলাম। ইচ্ছে করলেও আমার শুটিং স্পট আমার বাসার কাছে নিতে পারি না। এ ছাড়া চলার পথে তো অনেককেই অনেক ধরনের হেল্প করি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমি এমন কিছু করিনি যার জন্য অন্যের ক্ষতি হোক। অনেক সময়ই অনেক কাজ করিনি, হয়তো অন্যজনের ক্ষতি হতো। আমি সরে আসতাম, ভাবতাম আজ না হয়েছে আমার জন্য কাল হবে।

7সিনেমাকে ভালোবেসে ব্যবসা ছেড়ে দিলাম: সাইমন সাদিক
আমার গার্মেন্টস ব্যবসা ছিল। সারা দিন সেই ব্যবসা নিয়েই থাকতাম। বিভিন্ন মানুষজন আসতেন। কোনো একসময় আমার গুরু পরিচালক জাকির হোসেন রাজু স্যারের সঙ্গে দেখা হলো। রাতারাতি আমার সব বদলে গেল। সিনেমায় নাম লেখানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলাম। গার্মেন্টস ব্যবসা আস্তে করে ছেড়ে দিতে হলো। সেটা আমার একটা পার্মানেন্ট ব্যবসা ছিল। হয়তো আজকের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম। কিন্তু সিনেমাকে ভালোবেসে ব্যবসা ছেড়ে দিলাম। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগ ও সিদ্ধান্ত বলতে পারি। তা ছাড়া, বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজনদের পাশে তো সব সময়ই থাকার চেষ্টা করি। সেগুলো বলতে চাই না। সেগুলো যদি ওনারা মানুষের কাছে বলে, ভালো লাগবে।

8চারপাশের মানুষদের ত্যাগ দেখে অবাক হই: মেহ্জাবীন চৌধুরী
ছোটখাটো কত ত্যাগই তো করা হয়। কিন্তু উল্লেখ করার মতো ত্যাগ এখনো আমার করা হয়নি বলে মনে করি। ত্যাগ হলো একটা সিদ্ধান্ত। এখনো এ রকম বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। চারপাশের মানুষদের ত্যাগ দেখে অবাক হই। তাদের স্যালুট জানাই। মানুষের ভালোবাসার জন্য আমি অনেক কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তবে আমার পরিবারের একটা ত্যাগের কথা সারা জীবন মনে থাকবে। আমার পুরো পরিবার দুবাই থাকত। সেখান থেকে তারা বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছে শুধু আমার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে। আমার বোন এ দেশে লেখাপড়া করছে আমার কারণে। না হলে ওখানেই স্থায়ী হতো। তাদের জীবনমান হয়তো আরও ভালো হতো। এসব নিয়ে আমার পরিবার কোনোভাবেই অতৃপ্ত নয়। কিন্তু আমি বুঝি তারা কত বড় ত্যাগ করেছে আমার জন্য।   

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত