Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /যেদিন রুপালী পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছিল ‘দ্য গডফাদার’

অনলাইন ডেস্ক
‘দ্য গডফাদার’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য গডফাদার’ ছবির দৃশ্য

হলিউডের ইতিহাসে ‘দ্য গডফাদার’ একটি অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্র আজও সেরা সিনেমাগুলোর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এবং লেখক মারিও পুজোর যৌথ প্রয়াসে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি শুধু এক দুর্দান্ত গ্যাংস্টার গল্পই নয়, বরং পারিবারিক বন্ধন, ক্ষমতা এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের এক গভীর বিশ্লেষণ। সিনেমার বিখ্যাত সংলাপ ‘আই অ্যাম গনা মেইক হিম অ্যান অফার হি কান্ট রিফিউজ’ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

‘দ্য গডফাদার’ তৈরি হয়েছে মারিও পুজোর লেখা একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে। পুজো যখন মাত্র ১০০ পৃষ্ঠা লিখেছিলেন, তখনই প্যারামাউন্ট পিকচার্স ৮০ হাজার ডলারের বিনিময়ে বইটির স্বত্ব কিনে নেয়। এরপর নির্মাতা আলবার্ট রুডিকে প্রস্তাব দেওয়া হয় চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করার জন্য।

তবে দুই বছর আগেই ‘দ্য ব্রাদারহুড’ নামে একটি মাফিয়া চলচ্চিত্র বানিয়ে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল প্যারামাউন্ট। তাই তারা কম বাজেটে একটি সহজ গ্যাংস্টার মুভি বানাতে চেয়েছিল। তবে কপোলার কল্পনায় এটি ছিল ভিন্ন কিছু। তিনি ইতালীয়-মার্কিন সংস্কৃতির গভীরে গিয়ে মাফিয়া পরিবার ও তাদের সম্পর্ককে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।

প্রথম দিকে কপোলা সিনেমাটি বানাতে খুব আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু তার প্রোডাকশন কোম্পানি ‘আমেরিকান জোইট্রোপ’ আর্থিক সংকটে পড়লে সহকর্মী জর্জ লুকাস তাকে কাজটি নিতে বলেন। শেষ পর্যন্ত কপোলা রাজি হন এবং বইটি ভালোভাবে পড়ে প্রয়োজনীয় নোট তৈরি করেন, যা পরিচিত ‘দ্য গডফাদার নোটবুক’ নামে।

তবে প্যারামাউন্ট শুরু থেকেই কপোলার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। বিশেষ করে অভিনেতা নির্বাচনে কপোলাকে বেশ লড়াই করতে হয়।

ভিটো কর্লিয়নির চরিত্রে কপোলার প্রথম পছন্দ ছিলেন মার্লন ব্র্যান্ডো। কিন্তু স্টুডিও তাকে নিতে চাইছিল না। কারণ ব্র্যান্ডো তখন বদমেজাজি ও বিশৃঙ্খলা জীবনাচরণের জন্য বিতর্কিত ছিলেন। তবে কপোলার প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তিনটি শর্তে ব্র্যান্ডোকে নেওয়া হয়— প্রথমত তাকে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়, তাকে স্ক্রিন টেস্ট দিতে হবে আর তৃতীয়ত বাজেটের অতিরিক্ত কোনো খরচ তার কারণে করা যাবে না।

ব্র্যান্ডো স্ক্রিন টেস্টে মুখে তুলার বল ব্যবহার করে ভিটো কর্লিয়নির চেহারার আদল তৈরি করেন, যা দেখে স্টুডিও মুগ্ধ হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে চূড়ান্ত করা হয়।

মাইকেল কর্লিয়নির চরিত্রে কাকে নেওয়া হবে তা নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়। স্টুডিও চেয়েছিল রবার্ট রেডফোর্ড, রায়ান ও’নিল বা জ্যাক নিকলসনের মতো অভিনেতাদের। কিন্তু কপোলার পছন্দ ছিল তুলনামূলক অপরিচিত আল পাচিনো। যদিও স্টুডিও প্রথমে তাকে নিতে চায়নি, তবে এক বিশেষ দৃশ্যের পর তার অভিনয়ে সবাই মুগ্ধ হয়।

প্যারামাউন্ট চেয়েছিল ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে চলচ্চিত্রের নির্মাণ শেষ করতে। তাই তারা চেয়েছিল গল্পের সময়কাল ১৯৪০-৫০-এর পরিবর্তে ১৯৭০-এর দশকে করা হোক। কিন্তু কপোলা এটির ঘোর বিরোধিতা করেন এবং গল্পের মৌলিকত্ব রক্ষায় সফল হন।

চলচ্চিত্রটি শুটিংয়ের সময়ও কপোলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে বলে শোনা যায়। স্টুডিও তার পরিচালনা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল এবং তাকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু মার্লন ব্র্যান্ডো হুমকি দেন, যদি কপোলাকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তিনিও সিনেমা ছাড়বেন। ফলে কপোলা টিকে যান এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাজ শেষ করেন।

শুটিংয়ের সময় সিনেমাটোগ্রাফার গর্ডন উইলিস কম আলো ব্যবহার করেন, যা পরবর্তীতে মুভিটির পরিচিত ভিজ্যুয়াল স্টাইল হয়ে ওঠে। মার্লন ব্র্যান্ডোর বয়স কম দেখানোর জন্য বিশেষ মেকআপ এবং আলো-আঁধারির খেলা ব্যবহার করা হয়।

১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৫ মার্চ ‘দ্য গডফাদার’ মুক্তি পায় এবং তখনকার সর্বাধিক আয় করা চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। এটি সমালোচকদের কাছেও বিপুল প্রশংসিত হয়। সেবছর ১০টি ক্যাটাগরিতে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা এবং সেরা অ্যাডেপটেড স্ক্রিনপ্লের জন্য জিতে নেওয়া পুরস্কার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন ফেডারেল সংস্থার

‘মদের বোতল’ হাতে বৈষম্যবিরোধী নেতা-নেত্রীর ভিডিও, সদস্যপদ স্থগিত

ভারত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিকশাচালকের সঙ্গে তর্ক, বাংলাদেশিকে ফেরত

আকরামদের প্রথম খবর দেওয়া হয়েছিল, তামিম আর নেই

১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলো এক পরিবারের সেই উমানাথপুর গ্রাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত