বাঁশির সুরে বর্ষার আবাহন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

দুদিন আগেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু গরম কাটেনি; বরং ভ্যাপসা গরম ভাবটা যেন গায়ে লাগছে আরও বেশি। গতকাল শনিবার দিনভর আকাশ ভারী থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়েনি প্রশান্তির শীতল ফোঁটা। রাজধানীবাসী তাই বৃষ্টি নামার অপেক্ষায়। বৃষ্টির জন্য এমন অপেক্ষা সঙ্গী করেই শুরু হলো বর্ষা ঋতু। গতকাল ছিল আষাঢ়ের প্রথম দিন। 

বর্ষার প্রথম দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বসেছিল বর্ষা উৎসব। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার শপথে সেই উৎসবে হাসান আলীর বাঁশির লোকজ সুরে এল বর্ষার আহ্বান। 

ভোরে শুরু হয় উৎসব। পঞ্চকবির গান, আবৃত্তি, পাঠ ও সম্মেলক নৃত্যে সেজেছিল উৎসবটি। শিল্পী সাজেদ আকবর পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘বহু যুগের ও পার হতে আষাঢ় এল’, সালমা আকবরের কণ্ঠে শোনা যায় কবিগুরুর ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি শোনান নজরুলসংগীত ‘বরষা ঐ এলো বরষা’, অণিমা রায় শোনান রবীন্দ্রসংগীত ‘নীল-অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় সম্‌বৃত অম্বর’ এবং নবনীতা জাইদ চৌধুরী শোনান আধুনিক গান ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’। একক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন আবিদা রহমান সেতু, শ্রাবণী গুহ রায়, স্নিগ্ধা অধিকারী, রত্না সরকার, ফেরদৌসী কাকলী।

সম্মেলক গানে বর্ষার আহ্বানে গান পরিবেশিত হয়। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে লোকসংগীত ‘গাঙ্গে যাইতাছে দেখো ভাই’। বহ্নিশিখা পরিবেশন করে নজরুলসংগীত ‘রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্‌ কে বাজায়’, সুরবিহার পরিবেশন করে লোকসংগীত ‘এসো শ্যামল সুন্দর’। পঞ্চভাস্বর, সীমান্ত খেলাঘর আসর, সুরনন্দনের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন বর্ষার গান।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ ছিল আবৃত্তিপর্বে। ত্রপা মজুমদার পাঠ করেন ইন্দ্রানী সমাদ্দারের কবিতা ‘বৃষ্টি’। নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি শোনান জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকা’। নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয়, স্পন্দন, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি অব ফাইন আর্টস, কথক নৃত্য সম্প্রদায়। 

শুধু নাচ, গান আর আবৃত্তিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না উৎসব; কথন পর্বে প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী বলেন, ‘বর্ষার এক আলাদা ব্যাপার আছে। তীব্র বৈশাখের পরে যখন বর্ষা আসে, তখন সবাই শান্তির নিশ্বাস ফেলে। আমাদের শস্য, গাছপালা আর ফলন—যার কথা বলি না কেন, তার সবটাই বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষার আকাশ যেমন কবিমনে প্রভাব ফেলে, তেমনি আমাদের চিত্রশিল্পীদের ক্যানভাসেও বর্ষা প্রকাশিত হয়েছে আলাদা অনুভবে।’

বর্ষা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে নগরে গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও প্যানেল মেয়র শহীদুল্লাহ মিনু, বর্ষা উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। উৎসব শেষে শিশুদের হাতে বনজ, ফলদ এবং ঔষধি বৃক্ষের চারা বিতরণ করেন অতিথিরা।

এ ছাড়া বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগরও গতকাল সকালে আয়োজন করে বর্ষা উৎসবের। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে গতকাল সকাল ৭টায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে অংশ নেন দেশবরেণ্য সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যশিল্পীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত