অনলাইন ডেস্ক
পারমাণবিক বোমার জনক ‘ওপেনহাইমার’কে নিয়ে ক্রিস্টোফার নোলানের বানানো সিনেমা সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই থ্রিলার ব্যক্তি ওপেনহাইমার সম্পর্কে জানার আগ্রহে নতুন জোয়ার এনেছে। শ্রীমৎভগবদ্গীতা কীভাবে ওপেনহাইমারকে অনুপ্রাণিত করেছিল সেটি নিয়েও আলাপ হচ্ছে বেশ।
ওপেনহাইমার প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন এবং ভগবদ্গীতা তাঁর পছন্দের বই ছিল। ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের দুই দিন আগে রবার্ট ওপেনহাইমার ভগবদ্গীতার একটি স্তবক পাঠ করেছিলেন।
ওপেনহাইমার একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলেতে শিক্ষকতা করার সময় প্রাচীন ভারতীয় ভাষা সংস্কৃত এবং পরে গীতার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। দুই হাজার বছরের পুরোনো ভগবদ্গীতা মহাভারতের অংশ। হিন্দুধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্যগুলোর মধ্যে এটি একটি। এতে ৭০০ শ্লোকের বিশ্বের দীর্ঘতম কবিতা রয়েছে।
মেক্সিকো মরুভূমিতে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ওপেনহাইমার সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে অনূদিত যেই স্তবক পাঠ করেছিলেন তা ছিল:
‘‘যুদ্ধক্ষেত্র, বন আর সমস্ত পাহাড়ের চূড়ায়
সাগরের অন্ধকারে, তীরে ও বল্লমে
ঘুমের অতলে, বিভ্রান্তিতে, লজ্জার গভীরে
সব মহান কাজের আগে মানুষ করেছে নিজেকে রক্ষা।’
কাই বার্ড এবং মার্টিন জে শেরউইন ২০০৫ সালে প্রকাশিত ওপেনহাইমারের জীবনী নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। ‘আমেরিকান প্রমিথিউস: দ্য ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি অব জে রবার্ট ওপেনহাইমার’ নামের ওই বইতে তাঁরা লিখেছেন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় ২৫ বছর বয়সী তরুণ ওপেনহাইমার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক আর্থার ডব্লিউ রাইডারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়’ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন।
রাইডার একজন রিপাবলিকান ও প্রতিমা পূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন। ওপেনহাইমার তাঁর প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। ওপেনহাইমার রাইডারকে একজন ‘অভিমানী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে গণ্য করেছেন। একজন পণ্ডিত যিনি প্রকৃতপক্ষেই চিন্তাভাবনা করেছেন এবং একটি স্টয়িকের মতো কথা বলতেন। ওপেনহাইমারের বাবাও বলেছিলেন, ‘রাইডারের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। তাঁর চরিত্রে নিষ্ঠা ও কোমলতার মিশ্রণ ছিল।’
রবার্ট ওপেনহাইমার কে ছিলেন?
আত্মজীবনীমূলক এ চলচ্চিত্রে ওপেনহাইমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা সিলিয়ান মারফি। সিনেমায়ও রাইডারকে একজন বিরল ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। যিনি জীবনকে দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে দেখতেন। যেখানে মানুষ পরিত্রাণ এবং অভিশাপের মধ্যে পার্থক্য করতেই আয়ু পার করে দেয়।
প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওপেনহাইমারকে সংস্কৃত পড়াতেন রাইডার। ওপেনহাইমার এ নিয়ে তার ভাই ফ্রাঙ্ককে চিঠিও লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সংস্কৃত শিখছি। বিষয়টি খুবই উপভোগ করছি।’
ওপেনহাইমারের জীবনীকারেরা উল্লেখ করেছেন, তার অনেক বন্ধু ভারতীয় ভাষার প্রতি তার নতুন আবেশ খুঁজে পেয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হ্যারল্ড এফ চেরনিস। যিনি বিজ্ঞানীকে পণ্ডিত রাইডারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ ওপেনহাইমারের অতীন্দ্রিয় এবং রহস্যময় জিনিসের প্রতি আগ্রহ ছিল।
সুতরাং সংস্কৃত এবং গীতা সম্পর্কে ওপেনহাইমারের জ্ঞান থাকার বিষয়টি স্পষ্টতই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু কিছু ডানপন্থী হিন্দু সিনেমায় ফ্লোরেন্স পুগের সঙ্গে ওপেনহাইমারের যৌন দৃশ্যকে নিজেদের ধর্মের ওপর আক্রমণ বলে অভিযোগ তুলছেন। তাঁরা দৃশ্যটি সিনেমা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
কিন্তু ভারতের ফিল্ম সেন্সররা এতে কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি। বক্স অফিসে এটি ভারতে ও বছরের হলিউড হিট সিনেমা ও বার্বির চেয়ে বেশি আয় করেছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ওপেনহাইমার একজন ব্যাপক পড়ুয়া ছিলেন। তিনি দর্শন, ফরাসি সাহিত্য, ইংরেজি, ইতিহাসের কোর্স নিয়েছিলেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে স্থাপত্য অধ্যয়ন করার কথা বিবেচনা করেছিলেন। এমনকি তিনি একজন ক্লাসিস্ট, কবি বা চিত্রশিল্পী হওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেছিলেন। তিনি দুঃখ এবং একাকিত্বের থিম নিয়ে কবিতা লিখেছেন এবং টি এস এলিয়টের দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ডের ‘বিক্ষিপ্ত অস্তিত্ববাদে’র সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
চেরনিস বলেন, যেহেতু প্রায় সবকিছুই তাঁর জন্য সহজ ছিল। তাই তিনি কঠিন জিনিস পছন্দ করতেন। সেগুলোই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করত।
ওপেনহাইমার গ্রিক, ল্যাটিন, ফরাসি এবং জার্মান ভাষাও অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডাচ ভাষা শিখেছিলেন। এসব ভাষা শিক্ষা ভগবদ্গীতা পড়ার খুব বেশি আগের কথা নয়। তিনি এটিকে খুব সহজ এবং বেশ আশ্চর্যজনক মনে করতেন। বন্ধুদের বলেছিলেন যে এটি তাঁর জানা যেকোনো ভাষার চেয়ে সুন্দর দার্শনিক গানের বই। তাঁর বুকশেলফে রাইডারের উপহার দেওয়া গোলাপি মোড়কের একটি ভগবদ্গীতার কপিও ছিল। ওপেনহাইমার নিজেও তাঁর অনেক বন্ধুকে গীতার কপি উপহার দিয়েছিলেন।
জীবনীকাররা লিখেছেন, ওপেনহাইমার সংস্কৃত ভাষার প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে ১৯৩৩ সালে যখন তাঁর পিতা তাঁকে একটি ক্রিসলার গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন, তখন তিনি হিন্দু পুরাণে দৈত্য পাখি ঈশ্বরের নামানুসারে এর নাম দিয়েছিলেন ‘গরুড়’।
সেই বছরের বসন্তে ওপেনহাইমার তাঁর ভাইয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে লিখেছিলেন, কেন শৃঙ্খলা এবং কাজ সর্বদা তাঁর নীতি ছিল। এটি ইঙ্গিত করে যে তিনি প্রাচ্যের দর্শন দ্বারা মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি ওই চিঠিতে লিখেছিলেন, শৃঙ্খলার মাধ্যমেই আমরা প্রশান্তি অর্জন এবং অবতারের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে পারি। শুধু শৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার স্থূল বিভ্রান্তি ছেড়ে বিশ্বকে দেখা সম্ভব। এভাবেই পার্থিব জীবনের ভয়াবহতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তাঁর জীবনীকাররা লিখেছেন, বিশের দশকের শেষের দিকে ওপেনহাইমার এক নির্জনতার সন্ধান করতেন। তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে ভৌত জগতের সঙ্গে জড়িত থাকতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি একটি বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক জগতে হারাতে চাননি। তিনি ধর্ম খোঁজেননি। তিনি মূলত চেয়েছিলেন মনের শান্তি। সেই দর্শন গীতায় ছিল বলে বিশ্বাস করতেন।
কালিদাসের ‘মেঘদূত’ গীতিকবিতার প্রতি ওপেনহাইমারের মুগ্ধতা
তাঁর প্রিয় সংস্কৃত গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি ছিল কালিদাসের রচিত ‘মেঘদূত’ গীতিকবিতা। তিনি ভাই ফ্রাঙ্ককে লিখেছিলেন, আমি রাইডারের সঙ্গে মেঘদূত পড়েছি। আনন্দে, কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য এবং অভাবনীয়ভাবে মুগ্ধতার ছোঁয়া পেয়েছি।
ওপেনহাইমার কেন গীতা এবং এর কর্ম, নিয়তি এবং পার্থিব কর্তব্যের ধারণার দিকে এত উদ্যমী ছিলেন? এ নিয়ে তাঁর জীবনীকারদের মধ্য মতভেদ রয়েছে। ‘ইথিক্যাল কালচার সোসাইটি’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে উল্লেখ করে জীবনীকারেরা বলেছেন, যৌবনে তাঁকে যা শেখানো হয়েছিল সেটির বিরুদ্ধাচরণের জন্যই তিনি গীতার নিয়তিবাদের ঝুঁকে পড়েছিলেন। ইথিক্যাল কালচার সোসাইটি ইহুদি ধর্মের অনন্য এক আমেরিকান শাখা, যা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ওপেনহাইমার একাই গীতার প্রশংসা করেননি। আমেরিকান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হেনরি ডেভিড থোরো ভগবদ্গীতা অপূর্ব এবং বিশ্বদর্শনে মুগ্ধ ছিলেন। তিনি লিখেছেন, গীতার কাছে আমাদের আধুনিক বিশ্ব এবং এর সাহিত্য তুচ্ছ এবং তুচ্ছ বলে মনে হয়। জার্মান নাজি পার্টির সদস্য হেনরিক হিমলারও গীতার ভক্ত ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন প্রবল অনুসারী। ওপেনহাইমারের প্রিয় দুই কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস এবং টি এস এলিয়টও মহাভারত পড়েছিলেন।
প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর এর ভয়াবহতা দেখে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন ওপেনহাইমার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এরপর তিনি আবারও গীতায় ফিরে আসেন।
পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের পর ১৯৬৫ সালের একটি ডকুমেন্টারিতে তিনি এনবিসিকে বলেন, ‘আমরা জানতাম পৃথিবী আগের মতো থাকবে না। বোমা বর্ষণের পর কিছু লোক হেসেছে, কিছু লোক কাঁদছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই নির্বাক হয়ে পড়েছিল।’
এনবিসিকে তিনি আরও বলেন, ‘আমি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ শ্রীমৎভগবদ্গীতার লাইনটি মনে রেখেছি। বিষ্ণু [একজন প্রধান হিন্দু দেবতা] রাজকুমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তাঁকে তাঁর কাজ করা উচিত। তাঁকে প্রভাবিত করার জন্য তাঁর বহু-সশস্ত্র রূপ ধারণ করে এবং বলে, ‘‘এখন আমি মৃত্যু, বিশ্বের ধ্বংসকারী হয়েছি।’’ আমি মনে করি আমরা সবাই এটা ভেবেছিলাম, কোনো না কোনো উপায়ে।’
এই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে ওপেনহাইমারের এক বন্ধু বলেছেন, ওপেনহাইমারের মুখে এমন উদ্ধৃতি তাঁকে পুরোহিতের মতো শোনাচ্ছিল। তবুও রহস্যময় বিজ্ঞানী গ্রন্থটি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন।
‘দ্য ক্রিশ্চিয়ান সেঞ্চুরির’ সম্পাদকেরা যখন বিজ্ঞানীকে একবার তাঁর পড়া বইগুলো শেয়ার করতে বলেছিলেন। বিশেষ করে যেগুলো তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সবচেয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তখন ফরাসি কবি শার্ল বোঁদলিয়ারের ‘লে ফ্লোঁরস দ্যু মাল’ কাব্যগ্রন্থের কথা তিনি সর্বাগ্রে বলেছিলেন। আর ভগবদ্গীতা পেয়েছিল দ্বিতীয় স্থান।
পারমাণবিক বোমার জনক ‘ওপেনহাইমার’কে নিয়ে ক্রিস্টোফার নোলানের বানানো সিনেমা সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই থ্রিলার ব্যক্তি ওপেনহাইমার সম্পর্কে জানার আগ্রহে নতুন জোয়ার এনেছে। শ্রীমৎভগবদ্গীতা কীভাবে ওপেনহাইমারকে অনুপ্রাণিত করেছিল সেটি নিয়েও আলাপ হচ্ছে বেশ।
ওপেনহাইমার প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা শিখেছিলেন এবং ভগবদ্গীতা তাঁর পছন্দের বই ছিল। ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকো মরুভূমিতে প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণের দুই দিন আগে রবার্ট ওপেনহাইমার ভগবদ্গীতার একটি স্তবক পাঠ করেছিলেন।
ওপেনহাইমার একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলেতে শিক্ষকতা করার সময় প্রাচীন ভারতীয় ভাষা সংস্কৃত এবং পরে গীতার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। দুই হাজার বছরের পুরোনো ভগবদ্গীতা মহাভারতের অংশ। হিন্দুধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্যগুলোর মধ্যে এটি একটি। এতে ৭০০ শ্লোকের বিশ্বের দীর্ঘতম কবিতা রয়েছে।
মেক্সিকো মরুভূমিতে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ওপেনহাইমার সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে অনূদিত যেই স্তবক পাঠ করেছিলেন তা ছিল:
‘‘যুদ্ধক্ষেত্র, বন আর সমস্ত পাহাড়ের চূড়ায়
সাগরের অন্ধকারে, তীরে ও বল্লমে
ঘুমের অতলে, বিভ্রান্তিতে, লজ্জার গভীরে
সব মহান কাজের আগে মানুষ করেছে নিজেকে রক্ষা।’
কাই বার্ড এবং মার্টিন জে শেরউইন ২০০৫ সালে প্রকাশিত ওপেনহাইমারের জীবনী নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। ‘আমেরিকান প্রমিথিউস: দ্য ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি অব জে রবার্ট ওপেনহাইমার’ নামের ওই বইতে তাঁরা লিখেছেন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় ২৫ বছর বয়সী তরুণ ওপেনহাইমার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক আর্থার ডব্লিউ রাইডারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়’ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন।
রাইডার একজন রিপাবলিকান ও প্রতিমা পূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন। ওপেনহাইমার তাঁর প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। ওপেনহাইমার রাইডারকে একজন ‘অভিমানী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে গণ্য করেছেন। একজন পণ্ডিত যিনি প্রকৃতপক্ষেই চিন্তাভাবনা করেছেন এবং একটি স্টয়িকের মতো কথা বলতেন। ওপেনহাইমারের বাবাও বলেছিলেন, ‘রাইডারের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। তাঁর চরিত্রে নিষ্ঠা ও কোমলতার মিশ্রণ ছিল।’
রবার্ট ওপেনহাইমার কে ছিলেন?
আত্মজীবনীমূলক এ চলচ্চিত্রে ওপেনহাইমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা সিলিয়ান মারফি। সিনেমায়ও রাইডারকে একজন বিরল ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। যিনি জীবনকে দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে দেখতেন। যেখানে মানুষ পরিত্রাণ এবং অভিশাপের মধ্যে পার্থক্য করতেই আয়ু পার করে দেয়।
প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওপেনহাইমারকে সংস্কৃত পড়াতেন রাইডার। ওপেনহাইমার এ নিয়ে তার ভাই ফ্রাঙ্ককে চিঠিও লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সংস্কৃত শিখছি। বিষয়টি খুবই উপভোগ করছি।’
ওপেনহাইমারের জীবনীকারেরা উল্লেখ করেছেন, তার অনেক বন্ধু ভারতীয় ভাষার প্রতি তার নতুন আবেশ খুঁজে পেয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হ্যারল্ড এফ চেরনিস। যিনি বিজ্ঞানীকে পণ্ডিত রাইডারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ ওপেনহাইমারের অতীন্দ্রিয় এবং রহস্যময় জিনিসের প্রতি আগ্রহ ছিল।
সুতরাং সংস্কৃত এবং গীতা সম্পর্কে ওপেনহাইমারের জ্ঞান থাকার বিষয়টি স্পষ্টতই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু কিছু ডানপন্থী হিন্দু সিনেমায় ফ্লোরেন্স পুগের সঙ্গে ওপেনহাইমারের যৌন দৃশ্যকে নিজেদের ধর্মের ওপর আক্রমণ বলে অভিযোগ তুলছেন। তাঁরা দৃশ্যটি সিনেমা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
কিন্তু ভারতের ফিল্ম সেন্সররা এতে কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি। বক্স অফিসে এটি ভারতে ও বছরের হলিউড হিট সিনেমা ও বার্বির চেয়ে বেশি আয় করেছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ওপেনহাইমার একজন ব্যাপক পড়ুয়া ছিলেন। তিনি দর্শন, ফরাসি সাহিত্য, ইংরেজি, ইতিহাসের কোর্স নিয়েছিলেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে স্থাপত্য অধ্যয়ন করার কথা বিবেচনা করেছিলেন। এমনকি তিনি একজন ক্লাসিস্ট, কবি বা চিত্রশিল্পী হওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেছিলেন। তিনি দুঃখ এবং একাকিত্বের থিম নিয়ে কবিতা লিখেছেন এবং টি এস এলিয়টের দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ডের ‘বিক্ষিপ্ত অস্তিত্ববাদে’র সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
চেরনিস বলেন, যেহেতু প্রায় সবকিছুই তাঁর জন্য সহজ ছিল। তাই তিনি কঠিন জিনিস পছন্দ করতেন। সেগুলোই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করত।
ওপেনহাইমার গ্রিক, ল্যাটিন, ফরাসি এবং জার্মান ভাষাও অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডাচ ভাষা শিখেছিলেন। এসব ভাষা শিক্ষা ভগবদ্গীতা পড়ার খুব বেশি আগের কথা নয়। তিনি এটিকে খুব সহজ এবং বেশ আশ্চর্যজনক মনে করতেন। বন্ধুদের বলেছিলেন যে এটি তাঁর জানা যেকোনো ভাষার চেয়ে সুন্দর দার্শনিক গানের বই। তাঁর বুকশেলফে রাইডারের উপহার দেওয়া গোলাপি মোড়কের একটি ভগবদ্গীতার কপিও ছিল। ওপেনহাইমার নিজেও তাঁর অনেক বন্ধুকে গীতার কপি উপহার দিয়েছিলেন।
জীবনীকাররা লিখেছেন, ওপেনহাইমার সংস্কৃত ভাষার প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে ১৯৩৩ সালে যখন তাঁর পিতা তাঁকে একটি ক্রিসলার গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন, তখন তিনি হিন্দু পুরাণে দৈত্য পাখি ঈশ্বরের নামানুসারে এর নাম দিয়েছিলেন ‘গরুড়’।
সেই বছরের বসন্তে ওপেনহাইমার তাঁর ভাইয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে লিখেছিলেন, কেন শৃঙ্খলা এবং কাজ সর্বদা তাঁর নীতি ছিল। এটি ইঙ্গিত করে যে তিনি প্রাচ্যের দর্শন দ্বারা মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি ওই চিঠিতে লিখেছিলেন, শৃঙ্খলার মাধ্যমেই আমরা প্রশান্তি অর্জন এবং অবতারের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে পারি। শুধু শৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার স্থূল বিভ্রান্তি ছেড়ে বিশ্বকে দেখা সম্ভব। এভাবেই পার্থিব জীবনের ভয়াবহতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তাঁর জীবনীকাররা লিখেছেন, বিশের দশকের শেষের দিকে ওপেনহাইমার এক নির্জনতার সন্ধান করতেন। তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে ভৌত জগতের সঙ্গে জড়িত থাকতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি একটি বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক জগতে হারাতে চাননি। তিনি ধর্ম খোঁজেননি। তিনি মূলত চেয়েছিলেন মনের শান্তি। সেই দর্শন গীতায় ছিল বলে বিশ্বাস করতেন।
কালিদাসের ‘মেঘদূত’ গীতিকবিতার প্রতি ওপেনহাইমারের মুগ্ধতা
তাঁর প্রিয় সংস্কৃত গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি ছিল কালিদাসের রচিত ‘মেঘদূত’ গীতিকবিতা। তিনি ভাই ফ্রাঙ্ককে লিখেছিলেন, আমি রাইডারের সঙ্গে মেঘদূত পড়েছি। আনন্দে, কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য এবং অভাবনীয়ভাবে মুগ্ধতার ছোঁয়া পেয়েছি।
ওপেনহাইমার কেন গীতা এবং এর কর্ম, নিয়তি এবং পার্থিব কর্তব্যের ধারণার দিকে এত উদ্যমী ছিলেন? এ নিয়ে তাঁর জীবনীকারদের মধ্য মতভেদ রয়েছে। ‘ইথিক্যাল কালচার সোসাইটি’র সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে উল্লেখ করে জীবনীকারেরা বলেছেন, যৌবনে তাঁকে যা শেখানো হয়েছিল সেটির বিরুদ্ধাচরণের জন্যই তিনি গীতার নিয়তিবাদের ঝুঁকে পড়েছিলেন। ইথিক্যাল কালচার সোসাইটি ইহুদি ধর্মের অনন্য এক আমেরিকান শাখা, যা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ওপেনহাইমার একাই গীতার প্রশংসা করেননি। আমেরিকান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক হেনরি ডেভিড থোরো ভগবদ্গীতা অপূর্ব এবং বিশ্বদর্শনে মুগ্ধ ছিলেন। তিনি লিখেছেন, গীতার কাছে আমাদের আধুনিক বিশ্ব এবং এর সাহিত্য তুচ্ছ এবং তুচ্ছ বলে মনে হয়। জার্মান নাজি পার্টির সদস্য হেনরিক হিমলারও গীতার ভক্ত ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন প্রবল অনুসারী। ওপেনহাইমারের প্রিয় দুই কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস এবং টি এস এলিয়টও মহাভারত পড়েছিলেন।
প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর এর ভয়াবহতা দেখে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন ওপেনহাইমার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এরপর তিনি আবারও গীতায় ফিরে আসেন।
পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের পর ১৯৬৫ সালের একটি ডকুমেন্টারিতে তিনি এনবিসিকে বলেন, ‘আমরা জানতাম পৃথিবী আগের মতো থাকবে না। বোমা বর্ষণের পর কিছু লোক হেসেছে, কিছু লোক কাঁদছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই নির্বাক হয়ে পড়েছিল।’
এনবিসিকে তিনি আরও বলেন, ‘আমি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ শ্রীমৎভগবদ্গীতার লাইনটি মনে রেখেছি। বিষ্ণু [একজন প্রধান হিন্দু দেবতা] রাজকুমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তাঁকে তাঁর কাজ করা উচিত। তাঁকে প্রভাবিত করার জন্য তাঁর বহু-সশস্ত্র রূপ ধারণ করে এবং বলে, ‘‘এখন আমি মৃত্যু, বিশ্বের ধ্বংসকারী হয়েছি।’’ আমি মনে করি আমরা সবাই এটা ভেবেছিলাম, কোনো না কোনো উপায়ে।’
এই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে ওপেনহাইমারের এক বন্ধু বলেছেন, ওপেনহাইমারের মুখে এমন উদ্ধৃতি তাঁকে পুরোহিতের মতো শোনাচ্ছিল। তবুও রহস্যময় বিজ্ঞানী গ্রন্থটি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন।
‘দ্য ক্রিশ্চিয়ান সেঞ্চুরির’ সম্পাদকেরা যখন বিজ্ঞানীকে একবার তাঁর পড়া বইগুলো শেয়ার করতে বলেছিলেন। বিশেষ করে যেগুলো তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সবচেয়ে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তখন ফরাসি কবি শার্ল বোঁদলিয়ারের ‘লে ফ্লোঁরস দ্যু মাল’ কাব্যগ্রন্থের কথা তিনি সর্বাগ্রে বলেছিলেন। আর ভগবদ্গীতা পেয়েছিল দ্বিতীয় স্থান।
প্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
১ ঘণ্টা আগেবিচ্ছেদের পর একাই পালন করছেন মা-বাবার দায়িত্ব। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ব্যবসায় নামছেন অভিনেত্রী। মা এবং নবজাতকের দরকারি পণ্যের ব্র্যান্ডশপ দিচ্ছেন পরীমনি।
১ ঘণ্টা আগেপরদিনই কাকতালীয়ভাবে প্রকাশ্যে আসে বেজিস্ট মোহিনী দের বিবাহবিচ্ছেদের খবর। অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো শুরু করেন। কেউ কেউ তো আগবাড়িয়ে এটাও বলে দিয়েছেন, মোহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই নাকি বিচ্ছেদ হয়েছে রাহমান-সায়রার!
২ ঘণ্টা আগেআগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু হবে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবারের উৎসবে অংশ নেবে বিভিন্ন দেশের ২০০টির বেশি সিনেমা। তবে রাখা হয়নি না বাংলাদেশের কোনো সিনেমা।
৭ ঘণ্টা আগে