বিনোদন ডেস্ক
তাঁর মতো কিন্নরকণ্ঠী গায়িকা ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয়টি জন্মাননি। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ভারতীয় সংগীত জগৎ শাসন করেছেন একাই। বলিউডে প্লেব্যাক মানেই লতার সরু কণ্ঠের গান। সূক্ষ্ম সুরেলা কণ্ঠে শুধু বলিউড মাতাননি তিনি, এক সময় অভিনয়েও নাম করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর লতা মঙ্গেশকরকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। ছোটখাট চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, একপ্রকার বাধ্য হয়ে।
জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল হেমা। পরবর্তীতে বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের নাটক ‘ভাও বন্ধন’ থেকে লতিকা নামের একটি চরিত্রের নামানুসারে বাবা-মা তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন লতা। অনেকেই জানেন না, পাঁচ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি তাঁর বাবার মারাঠি ভাষায় গীতনাট্যে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
হিন্দি ভাষায় লতা মঙ্গেশকরের জীবনী লিখেছেন যতীন্দ্র মিশ্র। সেই বইতে মঞ্চে গায়িকা হিসেবে লতার আত্মপ্রকাশের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘লতা: সুর গাথা’ শীর্ষক বইটিতে যতীন্দ্র লিখেছেন, বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের নাট্যদল ‘বলওয়ান্ত সঙ্গীতমণ্ডলী’ একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিল—অর্জুন ও সুভদ্রার গল্প অবলম্বনে নাটকটির নাম সৌভদ্র। পণ্ডিত দীননাথ অর্জুনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আর নয় বছর বয়সী লতা অভিনয় করেছিলেন নারদ চরিত্রে।
নাটক শুরুর আগে ছোট্ট লতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাবাকে বলেছিলেন, ‘দেখ বাবা, তোমার মতো আমিও দর্শকদের কাছ থেকে জয়ধ্বনি পাব। দর্শকরা বলবে, আরও চাই!’ লতা সেদিন মঞ্চে সেটি প্রমাণ করেছিলেন। পরে বাবার প্রযোজনায় মঞ্চায়িত ‘গুরুকুল’-এ ‘কৃষ্ণ’ চরিত্রে অভিনয় করেন লতা।
১৯৪২ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লতার বাবা। মাস্টার বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি চলচ্চিত্রের একজন নামি অভিনেতা-পরিচালক। মঙ্গেশকর পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি। তিনিই মেলোডি কুইনকে অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া মারাঠি গান ‘নাচু ইয়া গাড়ে, খেলু সারি মানি হাউস ভারি’, ১৯৪২ সালে বসন্ত জোগলেকারের মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এর জন্য কম্পোজ করেছিলেন সদাশিবরাও নেভরেকর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্পাদনার ফাইনাল কাটে গানটি বাদ পড়ে যায়।
মাস্টার বিনায়ক তাঁর মারাঠি সিনেমা ‘পেহেলি মঙ্গলা-গৌর’-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের জন্য লতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেখানে ‘নাতালি চৈত্রাচি নাভালাই’ শিরোনামের একটি গানও তাঁকে দিয়ে গাইয়ে নেন।
১৯৪৫ সালে মুম্বাই চলে আসেন লতা মঙ্গেশকর। সেখানেই সংগীতের পাঠ নিতে শুরু করেন। একই বছর মাস্টার বিনায়কের প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘বড়ি মা’-তে ছোট বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। ছবিতে তিনি একটি ভজনও গেয়েছিলেন—মাতা তেরি চরণ মেঁ।
অভিনয় করাটা তখন লতার প্রয়োজন ছিল। উপার্জনের আর কোনো বিকল্প তাঁর হাতে ছিল না। মারাঠি ছবিতে নায়িকার বোন, নায়কের বোনের মতো ছোট ছোট ভূমিকায় কাজ করেছেন। অবশ্য তিনি কখনই মুখে ভারী মেকআপ নেওয়া এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো পছন্দ করেননি।
২০০৮ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেছি। কিন্তু কখনোই অভিনয় পছন্দ করতাম না। আমি মাস্টার বিনায়কের সঙ্গে কাজ করতাম। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু আমি খুব ছোট ছিলাম বলে কখনোই তাতে মজা পাইনি। মেকআপ করা পছন্দ করতাম না। ক্যামেরার সামনে হাসুন কাঁদুন—এসবের চাইতে গান গাইতে ভালোবাসতাম। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ ছিল।’
এরপর আকস্মিকভাবে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন লতা। ১৯৪৭ সালে মারা যান মাস্টার বিনায়ক। তাঁদের নাটক সংস্থা প্রফুল্ল পিকচার্স বন্ধ হয়ে যায়। লতা বলেন, ‘আমি এর পরে প্লেব্যাক গান শুরু করি।’
সংগীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় ব্রেক দেন। ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাঁহি কা না ছোরা’, নাজিম পানিপতির লেখা এ গান ব্যবহার করা হয়েছিল ‘মজবুর’ (১৯৪৮) ছবিতে। চলচ্চিত্রে এই প্রথম হিট গায়িকা হওয়ার স্বাদ পেলেন তিনি।
এরপর মহল (১৯৪৯) চলচ্চিত্রের ‘আসে আয়েগা আনাওয়ালা’ হিট হয় লতার কণ্ঠে। এ গানের সংগীত পরিচালক ছিলেন খেমচাঁদ প্রকাশ। আর ঠোঁট মিলিয়েছেন মধুবালা। গানটি লতা মঙ্গেশকরের প্রথম হিটগুলোর অন্যতম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি লতা। পরে যা ঘটেছে তাতো ইতিহাস!
লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
তাঁর মতো কিন্নরকণ্ঠী গায়িকা ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয়টি জন্মাননি। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ভারতীয় সংগীত জগৎ শাসন করেছেন একাই। বলিউডে প্লেব্যাক মানেই লতার সরু কণ্ঠের গান। সূক্ষ্ম সুরেলা কণ্ঠে শুধু বলিউড মাতাননি তিনি, এক সময় অভিনয়েও নাম করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর লতা মঙ্গেশকরকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। ছোটখাট চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, একপ্রকার বাধ্য হয়ে।
জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল হেমা। পরবর্তীতে বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের নাটক ‘ভাও বন্ধন’ থেকে লতিকা নামের একটি চরিত্রের নামানুসারে বাবা-মা তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন লতা। অনেকেই জানেন না, পাঁচ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি তাঁর বাবার মারাঠি ভাষায় গীতনাট্যে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
হিন্দি ভাষায় লতা মঙ্গেশকরের জীবনী লিখেছেন যতীন্দ্র মিশ্র। সেই বইতে মঞ্চে গায়িকা হিসেবে লতার আত্মপ্রকাশের কথা উল্লেখ করেছেন। ‘লতা: সুর গাথা’ শীর্ষক বইটিতে যতীন্দ্র লিখেছেন, বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের নাট্যদল ‘বলওয়ান্ত সঙ্গীতমণ্ডলী’ একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিল—অর্জুন ও সুভদ্রার গল্প অবলম্বনে নাটকটির নাম সৌভদ্র। পণ্ডিত দীননাথ অর্জুনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আর নয় বছর বয়সী লতা অভিনয় করেছিলেন নারদ চরিত্রে।
নাটক শুরুর আগে ছোট্ট লতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাবাকে বলেছিলেন, ‘দেখ বাবা, তোমার মতো আমিও দর্শকদের কাছ থেকে জয়ধ্বনি পাব। দর্শকরা বলবে, আরও চাই!’ লতা সেদিন মঞ্চে সেটি প্রমাণ করেছিলেন। পরে বাবার প্রযোজনায় মঞ্চায়িত ‘গুরুকুল’-এ ‘কৃষ্ণ’ চরিত্রে অভিনয় করেন লতা।
১৯৪২ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লতার বাবা। মাস্টার বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি চলচ্চিত্রের একজন নামি অভিনেতা-পরিচালক। মঙ্গেশকর পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি। তিনিই মেলোডি কুইনকে অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া মারাঠি গান ‘নাচু ইয়া গাড়ে, খেলু সারি মানি হাউস ভারি’, ১৯৪২ সালে বসন্ত জোগলেকারের মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এর জন্য কম্পোজ করেছিলেন সদাশিবরাও নেভরেকর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সম্পাদনার ফাইনাল কাটে গানটি বাদ পড়ে যায়।
মাস্টার বিনায়ক তাঁর মারাঠি সিনেমা ‘পেহেলি মঙ্গলা-গৌর’-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের জন্য লতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেখানে ‘নাতালি চৈত্রাচি নাভালাই’ শিরোনামের একটি গানও তাঁকে দিয়ে গাইয়ে নেন।
১৯৪৫ সালে মুম্বাই চলে আসেন লতা মঙ্গেশকর। সেখানেই সংগীতের পাঠ নিতে শুরু করেন। একই বছর মাস্টার বিনায়কের প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘বড়ি মা’-তে ছোট বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। ছবিতে তিনি একটি ভজনও গেয়েছিলেন—মাতা তেরি চরণ মেঁ।
অভিনয় করাটা তখন লতার প্রয়োজন ছিল। উপার্জনের আর কোনো বিকল্প তাঁর হাতে ছিল না। মারাঠি ছবিতে নায়িকার বোন, নায়কের বোনের মতো ছোট ছোট ভূমিকায় কাজ করেছেন। অবশ্য তিনি কখনই মুখে ভারী মেকআপ নেওয়া এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো পছন্দ করেননি।
২০০৮ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেছি। কিন্তু কখনোই অভিনয় পছন্দ করতাম না। আমি মাস্টার বিনায়কের সঙ্গে কাজ করতাম। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু আমি খুব ছোট ছিলাম বলে কখনোই তাতে মজা পাইনি। মেকআপ করা পছন্দ করতাম না। ক্যামেরার সামনে হাসুন কাঁদুন—এসবের চাইতে গান গাইতে ভালোবাসতাম। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ ছিল।’
এরপর আকস্মিকভাবে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন লতা। ১৯৪৭ সালে মারা যান মাস্টার বিনায়ক। তাঁদের নাটক সংস্থা প্রফুল্ল পিকচার্স বন্ধ হয়ে যায়। লতা বলেন, ‘আমি এর পরে প্লেব্যাক গান শুরু করি।’
সংগীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় ব্রেক দেন। ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাঁহি কা না ছোরা’, নাজিম পানিপতির লেখা এ গান ব্যবহার করা হয়েছিল ‘মজবুর’ (১৯৪৮) ছবিতে। চলচ্চিত্রে এই প্রথম হিট গায়িকা হওয়ার স্বাদ পেলেন তিনি।
এরপর মহল (১৯৪৯) চলচ্চিত্রের ‘আসে আয়েগা আনাওয়ালা’ হিট হয় লতার কণ্ঠে। এ গানের সংগীত পরিচালক ছিলেন খেমচাঁদ প্রকাশ। আর ঠোঁট মিলিয়েছেন মধুবালা। গানটি লতা মঙ্গেশকরের প্রথম হিটগুলোর অন্যতম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি লতা। পরে যা ঘটেছে তাতো ইতিহাস!
লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
চলতি সপ্তাহে দেশের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি প্রেক্ষাগৃহে। তবে স্টার সিনেপ্লেক্সে শুক্রবার মুক্তি পেল দুটি হলিউড সিনেমা। সিনেপ্লেক্সের বিভিন্ন শাখায় চলছে উইকড ও রেড ওয়ান।
১৭ মিনিট আগেপ্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
১১ ঘণ্টা আগেবিচ্ছেদের পর একাই পালন করছেন মা-বাবার দায়িত্ব। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ব্যবসায় নামছেন অভিনেত্রী। মা এবং নবজাতকের দরকারি পণ্যের ব্র্যান্ডশপ দিচ্ছেন পরীমনি।
১১ ঘণ্টা আগেপরদিনই কাকতালীয়ভাবে প্রকাশ্যে আসে বেজিস্ট মোহিনী দের বিবাহবিচ্ছেদের খবর। অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো শুরু করেন। কেউ কেউ তো আগবাড়িয়ে এটাও বলে দিয়েছেন, মোহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই নাকি বিচ্ছেদ হয়েছে রাহমান-সায়রার!
১২ ঘণ্টা আগে