ইরোটিকা আর পর্নোগ্রাফি এক নয়: স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে শিল্পা শেঠি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২১, ২১: ৫৫
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২১, ১৪: ২৩

স্বামীকে নির্দোষ দাবি করেছেন অভিনেত্রী শিল্পা শেঠি। তাঁর দাবি, হটশট নামে যে মোবাইল অ্যাপটির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির ব্যবসা করা হতো বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই অ্যাপের কনটেন্ট সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না।

মুম্বাই পুলিশের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শিল্পা পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, এই ব্যবসায় তাঁর স্বামী রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে আরেকজন রয়েছেন। তিনি লন্ডনে থাকেন, রাজের ভগ্নিপতি প্রদীপ বকশী।

শিল্পা শেঠির দাবি, ইরোটিকা আর পর্নোগ্রাফি এক জিনিস নয়। তাঁর স্বামী কোনোভাবেই পর্নো ছবি তৈরি ও পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত নন।

গতকাল শুক্রবার শিল্পার বক্তব্য রেকর্ড করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শিল্পা তাঁর স্বামীর কথিত পর্নো ব্যবসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন কি না, সেটি জানতেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পর্নোগ্রাফি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রাকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল তাঁকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, ৪৮ টেরাবাইট পরিমাণ ছবি এবং ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কনটেন্টই প্রাপ্তবয়স্কদের। এ ছাড়া কুন্দ্রার নামে ইয়েস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ইউনাইটেড ব্যাংক অব আফ্রিকায় একটি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, পর্নোগ্রাফি এবং অনলাইনে জুয়ার অর্থ লেনদেন এটি। এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি রুপি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল শুনানির সময় রাজ কুন্দ্রার আইনজীবী আবাদ পন্ডা জব্দ করা কনটেন্টকে ‘পর্নোগ্রাফি’ বলে চিহ্নিত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারায় এটি পড়ে না। এই ধারায় মামলা জামিন অযোগ্য। তাঁর যুক্তি, একই ধরনের কনটেন্ট নেটফ্লিক্সের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও পাওয়া যায়। এটি বরং ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯২ ধারায় পড়ে। এতে তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।

কোনো ভুল করেননি বলে দাবি করেছেন রাজ কুন্দ্রাও। সেই সঙ্গে এই ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে প্রদীপ বকশীর নাম বলেছেন। এই গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিলও করেছেন কুন্দ্রা।

তবে পুলিশ বলছে, এই মামলার মূল হোতা রাজ কুন্দ্রা (৪৫)। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে কুন্দ্রার অফিসে পর্নোগ্রাফি ক্লিপ ও কিছু ই-মেইল পাওয়া গেছে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলা করেন এক নারী। তিনি অভিযোগ করেন, অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে পর্নো ছবিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

এদিকে শিল্পা শেঠির মতোই অনেকে ইরোটিকা ও পর্নোগ্রাফির মধ্যে পার্থক্য করলেও এর বিরুদ্ধ মতও বেশ জোরালো। পর্নোগ্রাফিবিরোধী আন্দোলনকর্মী আন্দ্রেয়া ডরকিন বলেন, ইরোটিকা হচ্ছে সোজা কথায় উচ্চশ্রেণির পর্নোগ্রাফি। এটা আরও সুন্দর করে গুছিয়ে, আকর্ষণীয় করে উচ্চশ্রেণির ভোক্তাদের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

নারীবাদী লেখক গ্লোরিয়া স্টেইনেম ইরোটিকা ও পর্নোগ্রাফির পার্থক্যকে ভালোবাসা এবং ধর্ষণের পার্থক্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, মানহানি থেকে সম্মান–মর্যাদা, দাসত্ব থেকে অংশীদারত্ব, যন্ত্রণা থেকে সুখানুভূতি যেমন আলাদা, এটিও তেমনি। স্টেইনেমের এ ধারণা পারস্পরিক সমঝোতা ও কর্তৃত্বের মধ্যে পার্থক্যের ওপর জোর দেয়। তিনি লিখেছেন, স্থূল বা অমার্জিত পর্নোগ্রাফিতে সমান ক্ষমতা চর্চা বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার কোনো ব্যাপার থাকে না। প্রকৃতপক্ষে, বেশির ভাগ উত্তেজনা বা সাজানো গল্প একজন আরেক জনের ওপর কর্তৃত্বপরায়ণতার ধারণা থেকেই নির্মাণ করা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত