খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আমরা যারা নাইনটিজ গায়ে মেখে বড় হচ্ছিলাম, নাইনটিজ তো একটা উল্লেখযোগ্য সময়– গানে যতটা, বাংলা ছবিতে ততটা নয়; নাইনটিজের ওই সাংগীতিক ওয়েভটা আমাদেরকে খুব দোলাচ্ছে তখন। দোলাচ্ছে একটা বাথরুমের বন্ধ দরজাও। স্কুলে যেতে যেতে, ফিরে খেতে খেতে, এবং নানান অবসরে যখনই সিনেমার আলোচনা ঢুকে পড়ছে; মা আমাদেরকে গল্প শোনাচ্ছেন। একটা স্কুল, একজন গার্ড, একটা কিশোর, আর অসতর্কতায় তার বাথরুমে আটকে পড়ার গল্পটা।
নাইনটিজ শেষ হতে হতে গল্পটা মাথার ভেতর শক্ত করে গেঁথে গেছে এবং ওই সময়ের মধ্যেই ‘ছুটির ঘণ্টা’ বারকয়েক দেখা হয়ে গেছে। বাবা রোল–এর বাইরেও যে ‘নায়ক রাজ্জাক’ ছিলেন একটা সময়; প্রথমবার ওই জেনে ফেলাটা ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে, অবধারিতভাবেই।
সঙ্গে সিনেমার গল্পের যে ব্যাপকতা, মানে প্রেম-প্রতিশোধ-ছোটবড়লোক এসবের বাইরে গিয়ে, সিনেমা কতটা শক্তিশালী, কতটা বাস্তব; সেটার একটা টাচ পাওয়া গেলো, অবচেতনে। আজকের দিনের এই অফট্র্যাক, অলটারনেটিভ, নিউওয়েভ, থার্ড সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে কপচানির মনস্তাত্ত্বিক গোড়াপত্তন ওই ‘ছুটির ঘণ্টা’ই, অন্তত আমার ক্ষেত্রে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে একজন রাজ্জাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
রিকল করা যাক। জরুরতে আরেকবার দেখেও ফেলা যেতে পারে। মানসিক হাসপাতাল; যেখান থেকে ছবিটা শুরু হচ্ছে, বাইরে খাবারের বেল বাজছে, ঘণ্টাধ্বনি অনুরণিত হতে হতে আমরা আবিস্কার করছি আব্বাস দারোয়ানকে। চরিত্র যখন বলে চলেছে–
নইলে রক্ত গ্যালো কই? এক ফোঁটাও রক্ত বাইর হইলো না। অথচ মইরা গ্যালো! সেই সব রক্তের দাগ আমার হাতে লাইগ্গা আছে। কত বছর ধইরা চেষ্টা করতেছি। মোছে না। মোছে না...
– ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবিতে রাজ্জাকের সংলাপ
গা শিউরে ওঠে নিশ্চিত। এবং এ কৌতুহলও জেগে ওঠে যে, রাজ্জাক ছাড়া ওই চরিত্রটি এতটা সাকসেসফুলি পসিবল হতো কিনা! কিংবা ‘বড় ভালো লোক ছিলো’র ওই দৃশ্যটা, বাবার মৃত্যুর শোক কাঁধে নিয়ে পিতৃভিটায় বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে ছেলে ঘুরছে। বাবার ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রটি হাতে পেয়ে, রাজ্জাক যখন বুকে জড়িয়ে, স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন; ওই অ্যাকটিংটা অন্য মাত্রার।
‘সিনেমাওয়ালা’ ছবিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলার চেষ্টা করেছেন, একজন উত্তম কুমার সিনেমা দিয়ে সিনেমার বাইরেও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সাতচল্লিশ। দেশভাগ। যাপনের ভাঁজে ভাঁজে সংকট। আইডিওলজির টানাপোড়েনের মাঝখানে একটা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে কীভাবে এস্কেপ রুট হয়ে উঠেছিলেন উত্তম কুমার।
একইভাবে, এ জনপদে, একাত্তর পরবর্তী সাংস্কৃতিক সংকটে, একটা দীর্ঘ সময় ধরে, রাজ্জাক ছিলেন সেই এস্কেপ রুট; বলে আমার ধারণা।
সত্যিই তিনি ‘নায়ক রাজ’ কিনা, কিংবা অতখানি হয়ে ওঠার মতো অতটা বিশ্বমানের অ্যাকটিং তিনি করে যেতে পেরেছেন কিনা; সেটা অপ্রাসঙ্গিক। এ কারণে যে, রাজ্জাক ‘নায়ক রাজ’ যতটা অভিনয় স্কিলে, তারচে বেশি স্বীয় প্রভাবের প্রভাবে। এ জনপদে ‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি’ বলার মতো প্রভাব একমাত্র রাজ্জাকেরই ছিল।
আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।
–নায়করাজ রাজ্জাক
মুক্তিযুদ্ধোত্তর ভাংচুর সময়ে (ইকোনমিক এবং কালচারাল), একটা ভাংচুর ইন্ডাস্ট্রিকে টেনে তোলার সংগ্রামটা নিছক ফেলনা নয়। কলিজায় এবং মগজে দম লাগে। যে দমটা লাগে অভিনয়ের জন্য প্রায় খালি হাতে জন্মভূমি ছেড়ে আসতে। রাজ্জাক ওই সংগ্রামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, ফিগার।
এই সময়ে এসে, বাংলা ছবির এই চরম দুঃসময়ে, যখন এফডিসি হয়ে উঠেছে কেবল শিল্পীদের রাজনৈতিক উঠোন, যখন চরম অব্যবস্থাপনা, ব্যক্তি–বিদ্বেষ আর অভিভাবকহীনতা বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে গিলে খাচ্ছে; তখন রাজ্জাকের শূন্যতা আরো বেশি মাত্রায় ধরা পড়ে।
আমরা যারা নাইনটিজ গায়ে মেখে বড় হচ্ছিলাম, নাইনটিজ তো একটা উল্লেখযোগ্য সময়– গানে যতটা, বাংলা ছবিতে ততটা নয়; নাইনটিজের ওই সাংগীতিক ওয়েভটা আমাদেরকে খুব দোলাচ্ছে তখন। দোলাচ্ছে একটা বাথরুমের বন্ধ দরজাও। স্কুলে যেতে যেতে, ফিরে খেতে খেতে, এবং নানান অবসরে যখনই সিনেমার আলোচনা ঢুকে পড়ছে; মা আমাদেরকে গল্প শোনাচ্ছেন। একটা স্কুল, একজন গার্ড, একটা কিশোর, আর অসতর্কতায় তার বাথরুমে আটকে পড়ার গল্পটা।
নাইনটিজ শেষ হতে হতে গল্পটা মাথার ভেতর শক্ত করে গেঁথে গেছে এবং ওই সময়ের মধ্যেই ‘ছুটির ঘণ্টা’ বারকয়েক দেখা হয়ে গেছে। বাবা রোল–এর বাইরেও যে ‘নায়ক রাজ্জাক’ ছিলেন একটা সময়; প্রথমবার ওই জেনে ফেলাটা ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে, অবধারিতভাবেই।
সঙ্গে সিনেমার গল্পের যে ব্যাপকতা, মানে প্রেম-প্রতিশোধ-ছোটবড়লোক এসবের বাইরে গিয়ে, সিনেমা কতটা শক্তিশালী, কতটা বাস্তব; সেটার একটা টাচ পাওয়া গেলো, অবচেতনে। আজকের দিনের এই অফট্র্যাক, অলটারনেটিভ, নিউওয়েভ, থার্ড সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে কপচানির মনস্তাত্ত্বিক গোড়াপত্তন ওই ‘ছুটির ঘণ্টা’ই, অন্তত আমার ক্ষেত্রে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক্ষেত্রে একজন রাজ্জাক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
রিকল করা যাক। জরুরতে আরেকবার দেখেও ফেলা যেতে পারে। মানসিক হাসপাতাল; যেখান থেকে ছবিটা শুরু হচ্ছে, বাইরে খাবারের বেল বাজছে, ঘণ্টাধ্বনি অনুরণিত হতে হতে আমরা আবিস্কার করছি আব্বাস দারোয়ানকে। চরিত্র যখন বলে চলেছে–
নইলে রক্ত গ্যালো কই? এক ফোঁটাও রক্ত বাইর হইলো না। অথচ মইরা গ্যালো! সেই সব রক্তের দাগ আমার হাতে লাইগ্গা আছে। কত বছর ধইরা চেষ্টা করতেছি। মোছে না। মোছে না...
– ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবিতে রাজ্জাকের সংলাপ
গা শিউরে ওঠে নিশ্চিত। এবং এ কৌতুহলও জেগে ওঠে যে, রাজ্জাক ছাড়া ওই চরিত্রটি এতটা সাকসেসফুলি পসিবল হতো কিনা! কিংবা ‘বড় ভালো লোক ছিলো’র ওই দৃশ্যটা, বাবার মৃত্যুর শোক কাঁধে নিয়ে পিতৃভিটায় বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে ছেলে ঘুরছে। বাবার ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রটি হাতে পেয়ে, রাজ্জাক যখন বুকে জড়িয়ে, স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন; ওই অ্যাকটিংটা অন্য মাত্রার।
‘সিনেমাওয়ালা’ ছবিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলার চেষ্টা করেছেন, একজন উত্তম কুমার সিনেমা দিয়ে সিনেমার বাইরেও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সাতচল্লিশ। দেশভাগ। যাপনের ভাঁজে ভাঁজে সংকট। আইডিওলজির টানাপোড়েনের মাঝখানে একটা ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে কীভাবে এস্কেপ রুট হয়ে উঠেছিলেন উত্তম কুমার।
একইভাবে, এ জনপদে, একাত্তর পরবর্তী সাংস্কৃতিক সংকটে, একটা দীর্ঘ সময় ধরে, রাজ্জাক ছিলেন সেই এস্কেপ রুট; বলে আমার ধারণা।
সত্যিই তিনি ‘নায়ক রাজ’ কিনা, কিংবা অতখানি হয়ে ওঠার মতো অতটা বিশ্বমানের অ্যাকটিং তিনি করে যেতে পেরেছেন কিনা; সেটা অপ্রাসঙ্গিক। এ কারণে যে, রাজ্জাক ‘নায়ক রাজ’ যতটা অভিনয় স্কিলে, তারচে বেশি স্বীয় প্রভাবের প্রভাবে। এ জনপদে ‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি’ বলার মতো প্রভাব একমাত্র রাজ্জাকেরই ছিল।
আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।
–নায়করাজ রাজ্জাক
মুক্তিযুদ্ধোত্তর ভাংচুর সময়ে (ইকোনমিক এবং কালচারাল), একটা ভাংচুর ইন্ডাস্ট্রিকে টেনে তোলার সংগ্রামটা নিছক ফেলনা নয়। কলিজায় এবং মগজে দম লাগে। যে দমটা লাগে অভিনয়ের জন্য প্রায় খালি হাতে জন্মভূমি ছেড়ে আসতে। রাজ্জাক ওই সংগ্রামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, ফিগার।
এই সময়ে এসে, বাংলা ছবির এই চরম দুঃসময়ে, যখন এফডিসি হয়ে উঠেছে কেবল শিল্পীদের রাজনৈতিক উঠোন, যখন চরম অব্যবস্থাপনা, ব্যক্তি–বিদ্বেষ আর অভিভাবকহীনতা বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে গিলে খাচ্ছে; তখন রাজ্জাকের শূন্যতা আরো বেশি মাত্রায় ধরা পড়ে।
এখনো ঘটনার কোনো সুরাহা না হলেও সাইফের ওপর এ হামলা বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছে, ‘সদগুরু শরণ’ নামের যে অ্যাপার্টমেন্টে সাইফ-কারিনার বাস, সেখানকার ৯ থেকে ১২ তলা তাঁদের। কিন্তু সেখানে আলাদা কোনো সার্ভেল্যান্স ক্যামেরাই নেই।
১০ ঘণ্টা আগেএবার প্রকাশ্যে এল বলিউড স্টার সাইফ আলী খানের বাড়িতে হানা দেওয়া দ্বিতীয় যুবকের ভিডিও। মুখ কাপড়ে ঢাকা, পিঠে বড় ব্যাগ। সাইফ আলী খানের বাড়ির আপৎকালীন সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজের দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশ করেছে মুম্বাই পুলিশ...
১৮ ঘণ্টা আগে২০১৪ সালে মুক্তি পায় সোহানা সাবা অভিনীত ‘বৃহন্নলা’। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় মুরাদ পারভেজ পরিচালিত সিনেমাটি। বৃহন্নলার জন্য় ২০১৫ সালে ভারতের জয়পুর চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন সোহানা সাবা। এবার সেই উৎসবেই বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
২০ ঘণ্টা আগে১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে পদাতিক নাট্য সংসদ। আজ দলটি উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী...
২০ ঘণ্টা আগে