Ajker Patrika

‘জব্বার চাচার আত্মবিশ্বাস দেখে রাজি হয়েছিলেন আব্বা’

বিনোদন ডেস্ক
‘জব্বার চাচার আত্মবিশ্বাস দেখে রাজি হয়েছিলেন আব্বা’

ছবিটি মুক্তির সময় আমার বয়স ছয়। সত্যি বলতে, আমার বাবাকে ছবির প্রোডিউসার হিসেবে আমি চিনিনি। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সিনেমা নিয়ে আমাদের বাড়িতে ওভাবে কোনো চর্চা হতো না। আমি নিজেও অতটা জানতাম না। জব্বার চাচা ছিলেন আব্বার খুব কাছের বন্ধু। শনি-রবি সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল। প্রতি শনিবার ওনারা আড্ডা দিতেন। ওই সুবাদে আমাদের বাসায় তাঁরা নিয়মিতই আসতেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও ওনারা সবাই আব্বাকে বড় ভাই বলে ডাকতেন। যতটুকু শুনেছি, জব্বার চাচাই আব্বাকে বলেছিলেন, ‘কিছু টাকা দেন, একটা সিনেমা বানাব।’ আব্বা নাকি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘সিনেমা বানাবা এ দেশে? কীভাবে? এ দেশে এর যন্ত্রপাতি কোথায় পাবা?’ চাচা বলেছিলেন, ‘আপনি টাকা দেন। সিনেমা বানাতে পারব।’ জব্বার চাচার আত্মবিশ্বাস দেখে রাজি হয়েছিলেন আব্বা। কাছের কয়েকজন বন্ধু মিলেই সব ঠিক করলেন।

বাজেট ছিল ৮২ হাজার টাকা। আব্বা সেখানে সম্ভবত ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ছবি মুক্তি পায়, ৩ আগস্ট। সেদিন বাবার সঙ্গে মা, আমার বড় বোন ও আমি গিয়েছিলাম হলে। কিন্তু সেই ঘটনার কিছুই আমার মনে নেই।

ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে কয়েকজন মিলে ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিটি বানিয়েছিলেন। আব্বা ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিলেন এই ইকবাল ফিল্মস। দ্বিতীয় ছবি করলেন ‘জোয়ার এলো’। ওটাতেও আব্বা ছিলেন। তারপর কোনো কারণে উনি আর থাকেননি। ইকবাল ফিল্মস থেকে বেরিয়ে যান। আমি শুনেছি ইকবাল ফিল্মস ভারত থেকে একটা সিনেমা কিনে এনেছিল। তখন দুই দেশে ছবি আদান-প্রদান হতো। দেব আনন্দের ছবি ‘সোলবা সাল’। ছবিটা ভালো ব্যবসা করেছিল। যতটুকু জানি, আব্বা কোনো প্রফিট নেননি। শুধু বলেছেন, আমার আসলটা দিয়ে দাও। বাকিটা তোমরা নিয়ো। তোমরা তোমাদের মতো ব্যবসা করো। আমি আর থাকব না। তারপর উনি আর সিনেমাজগতে ছিলেন না।

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান

3_1622971779একনজরে ‘মুখ ও মুখোশ’

  • পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ. দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে জব্বার খান চলচ্চিত্রটি নির্মাণে উদ্যোগী হন।
  • ‘ডাকাত’ নাটক থেকে চিত্রনাট্য রচনা করেন কলকাতার বিপ্রদাশ ঠাকুর।
  • ছবির দ্বিতীয় প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন আব্দুল জব্বার খান। মুখ্য চরিত্র ডাকাত সরদার হয়েছিলেন ইনাম আহমেদ। প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা সেনগুপ্ত।
  • স্থানীয় অভিনেতারা বিনা পারিশ্রমিকে এই ছবিতে অভিনয় করেন।
  • ১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট হোটেল শাহবাগে ছবির মহরত হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা।
  • প্রথম শুটিং বুড়িগঙ্গার ওপারে কালীগঞ্জে, ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। আরও শুটিং হয় লালমাটিয়ার ধানখেত, তেজগাঁওয়ের জঙ্গল, জিঞ্জিরা ও টঙ্গীর তুরাগ নদের পারে।
  • একটি আইমো ক্যামেরা, একটি সাধারণ টেপ রেকর্ডার, একটি জেনারেটর ও প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে ছবির শুটিং হয়।
  • স্থানীয়ভাবে কোনো ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও না থাকায় নেগেটিভ ডেভেলপ হয় লাহোরে।
  • ১৯৫৬ সালে ছবির কাজ শেষ হলেও প্রথম ছবিটি নিয়ে ঢাকায় ফেরার অনুমতি পাননি আব্দুল জব্বার। ‘মুখ ও মুখোশ’-এর প্রথম প্রদর্শনী হয় লাহোরে।
  • ঢাকায় প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল প্রেক্ষাগৃহে। প্রথম প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। এ ছাড়া চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড ও খুলনার উল্লাসিনী প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজারে বিমানঘাঁটিতে গুলি: যা বলছে আইএসপিআর, নিহতের মা-বাবা ও স্থানীয়রা

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা, সংঘর্ষে নিহত ১

ভারতের কাছে হারে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টকে ধুয়ে দিলেন শোয়েব

নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে কী প্রস্তাব এল, জানালেন আখতার

মালিককে ঘরে আটকে রেখে খামারে পেট্রল ঢেলে আগুন, পুড়ল ৮ গরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত