পায়েল কাপাডিয়াকে শাস্তি দিয়েছিল এফটিআইআই, আজ তাঁর জন্যই গর্বিত

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ১৪: ০৫
Thumbnail image

কান উৎসবে ইতিহাস গড়েছেন ভারতীয় নারী নির্মাতা পায়েল কাপাডিয়া। উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে তাঁর পরিচালিত ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ সিনেমা। ভারতের পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এফটিআইআই) এই প্রাক্তন ছাত্রীকে নিয়ে গর্বিত পুরো ভারত। কিন্তু এফটিআইআইয়ের ছাত্রী থাকাকালীন আন্দোলনের কারণে পায়েলকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। বাতিল হয়েছিল তাঁর স্কলারশিপ। বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়। অথচ এবার তাঁর জন্যই আন্তর্জাতিক মঞ্চে গর্বের অংশীদার হলো এফটিআইআই।

সময়টা ছিল ২০১৫ সালা, এফটিআইআইয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা ও অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান। এই নিয়োগকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলেন নামেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক নেতার পরিবর্তে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

সে বছরের ৯ জুন থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ১৩৯ দিনের টানা আন্দোলন। জুলাই মাসে চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহ্নু বড়ুয়া, চিত্রগ্রাহক সন্তোষ সিভান ও অভিনেতা পল্লবী যোশী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এফটিআইআইয়ের গভর্নিং কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন।

আর তার পরই যেন প্রতিবাদের আগুন বাড়তে থাকে এফটিআইআইজুড়ে। ক্লাস বর্জন, মিছিল, অবস্থানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী পায়েল কাপাডিয়া।

২০১৫ সালে ৯ জুন থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ১৩৯ দিনের টানা আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীতআন্দোলনের ৬৮তম দিনে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সেদিন এফটিআইআইয়ের তৎকালীন পরিচালক প্রশান্ত পাথরাবে আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ২০০৮ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ছাড়তে নোটিশ জারি করেন। উপরন্তু, তাদের নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র প্রকল্পগুলোর মূল্যায়নের আদেশ জারি করেন।

এই নির্দেশকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাখ্যা চাইতে পাথরাবের কার্যালয় ঘেরাও করে এবং তাকে তালাবন্দী করে রাখে। মধ্যরাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাঁচজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগপত্রে কাপাডিয়াসহ ৩৫ জন শিক্ষার্থীর নাম আসে। এরপর পায়েলের ওপরে নেমে আসে কঠিনতম শাস্তি। স্কলারশিপ বাতিল করে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে আরও সাত ছাত্রের সঙ্গে তাঁর বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ বাতিল হয়। 

কান চলচ্চিত্র উৎসবে এর আগেও প্রদর্শিত হয়েছিল পায়েলের ছবি। সেটা ২০১৭ সালে। পায়েল তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কানে সেবার জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। স্ক্রিনিং হয়েছিল তাঁর ১৩ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আফটারনুন ক্লাউডস’। কান উৎসবের শিক্ষার্থী নির্মাতাদের বিভাগ সিনেফঁদাসোতে নির্বাচিত হয়েছিল সিনেমাটি। তখন শুরুতে এফটিআইআই কিছুটা বাধার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পরে তাঁকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেবার তাঁর সিনেমা স্ক্রিনিং হলেও পুরস্কার অধরা থেকে যায়।

বিশৃঙ্খলার অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার, এবার পায়েলের জন্যই আন্তর্জাতিক মঞ্চে গর্বের অংশীদার হল এফটিআইআই। ছবি: ছবি: সংগৃহীত২০২১ সালে ৭৪তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা পায় পায়েল কাপাডিয়ার তথ্যচিত্র ‘আ নাইট অব নোয়িং নাথিং’। উৎসবের তথ্যচিত্র বিভাগে অয়েল ডি’অর (গোল্ডেন আই) সম্মান পায় তথ্যচিত্রটি। এই বিভাগে সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক শ তথ্যচিত্র জমা পড়েছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর স্ক্রিনিং হয়েছিল মাত্র ২৭টি তথ্যচিত্রের। সেখান থেকেই বিচারকেরা পায়েলের এই ছবি বেছে নেন সেরা হিসেবে। তথ্যচিত্রের চেনা ছকের থেকে খানিকটা ভিন্ন ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’। এই তথ্যচিত্রে প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রেমের উপাখ্যান। ‘ফাউন্ড ফুটেজ’ ধারার ওপর ভিত্তি করেই কাপাডিয়া তৈরি করেছেন তথ্যচিত্রটি। প্রেক্ষাপট সেই পুনের এফটিআইআই-ই। ‘এল’ এবং ‘কে’ নামের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার পাল্টাপাল্টি চিঠি এবং বিভিন্ন পেপার কাটিংকে সম্বল করেই নির্মিত তথ্যচিত্রটি। প্রেমের পাশাপাশি সেখানে প্রতিফলিত হয়েছে রাজনৈতিক দর্শনও।

এর আগে ২০১৮ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সামার সেইয়িং’ শর্টফিল্মের জন্য স্পেশাল জুরি প্রাইজ পেয়েছিলেন পায়েল। ২০১৫ সালে ওবারহাউসেন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য লাস্ট ম্যাঙ্গো বিফোর মনসুনে’র জন্য পেয়েছিলেন ফিপ্রেসি অ্যাওয়ার্ড।

পায়েল কাপাডিয়াকে শাস্তি দিয়েছিল যে ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া’, সেই ইনস্টিটিউট আজ তাদের ছাত্রীকে নিয়ে গর্বিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত