বদলে যাওয়া বাঁধনের গল্প

মীর রাকিব হাসান
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৩: ৫৭

২০১৮ সাল। বাঁধনের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় এক যুগ। তাঁকে নিয়ে লিখেছিলাম ‘নয়া বাঁধন’ শিরোনামে। কারণ, গড়নে-মননে নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন, যোগ দিয়েছেন ‘দহন’ সিনেমায়। তখন বাঁধনের বিবাহবিচ্ছেদের চার বছর হয়ে গেছে। মামলা-মোকদ্দমায় নেমে মানসিক অবস্থার বারোটা বেজে গেছে। বিষণ্নতা কাটিয়ে কীভাবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, সেই ফিরিস্তি বলেছিলেন অকপটে। জানালেন, নতুন উদ্যমে কাজে নেমেছেন। নিয়মিত জিম করে আর খাবারের রুটিনটা বদলিয়ে তিন-চার মাসেই মানসিক ও শারীরিক অবস্থার করেছেন অভাবনীয় উন্নতি। ৯ মাসে ৮০ কেজি থেকে হয়েছেন ৬০ কেজি। কিন্তু কোনো কারণে সিনেমাটি করা হয়নি। ২০১৮ সালে ‘দহন’-এ চুক্তিবদ্ধ হয়ে এবং ছবিটি ছেড়ে দিয়ে দুবারই আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বাঁধন। এরপর হুট করে খবরের শিরোনাম কিংবা পর্দা—কোথাও নেই বাঁধন।

আজমেরী হক বাঁধন২০২০ সালের শেষে বাঁধন ফের আলোচনায়। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ অবলম্বনে সৃজিত মুখার্জি নির্মাণ করছেন ওয়েব সিরিজ। সেই সিরিজের প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করছেন বাঁধন। কলকাতা থেকে সিনেমার শুটিং শেষে দেশে ফিরলে কথা শুরু হয় সিরিজটি নিয়ে। শেষটা হয় তাঁর নতুন সিনেমা নিয়ে।

আজমেরী হক বাঁধন‘দহন’ ছাড়ার পর আবারও আড়ালে চলে যান বাঁধন। কোথায় ছিলেন, কী করেছেন, সবিস্তারে বললেন বাঁধন। তাঁর ক্যারিয়ার ও জীবনদর্শন আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছেন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ‘দহন’ ছাড়ার পরপরই এই সিনেমা আসে বাঁধনের জীবনে। ‘সাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে কাস্ট করে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন। ওর ছবিটা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা যাবে। সবটা পত্রিকার পাতায় জায়গা হবে না। তবে সেটা বলব আরেকটু পরে। গত তিন বছরে এই ছবির বাইরে শুধু সৃজিতের সিরিজটাই করলাম আর করলাম একটা বিজ্ঞাপনচিত্র। বুঝতেই পারছেন কতটা ডেডিকেশন দিয়েছি।’ বলেছিলেন বাঁধন।

আজমেরী হক বাঁধনসেই নাম ঠিক না হওয়া সিনেমার নাম জানা গেল অপ্রত্যাশিত এক চমকের মধ্য দিয়ে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে নমিনেশন পেয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বা আজমেরী হক বাঁধন। এটাই কান উৎসবের জন্য কোনো বাংলাদেশি ছবির অফিশিয়াল সিলেকশন। বাঁধন জানিয়েছেন, ‘টানা ৯ মাস রিহার্সেল করেছেন এই ছবির জন্য। শুটিং হয়েছে ৩৪ দিন। খুবই মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন পুরো শুটিংয়ের সময়। কারণ ছবির পরিচালক এক চুলও ছাড় দিতে নারাজ। একটা দৃশ্যের কথাই বলা যাক। দৃশ্যটিতে বাঁধনের খুব একটা মুভমেন্ট নেই, বেশি কিছু করতেও হবে না। কেবল একটু বেঁকে বসে থাকবেন আর একটা আপেল কাটবেন। এই যে বেঁকে বসে থাকলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দৃশ্যটাই হলো! পরিচালকের মর্জিমতো দৃশ্য পেতে সারা দিনে ছয় কেজি আপেল কাটতে হয়েছে বাঁধনকে।

আজমেরী হক বাঁধনশোবিজে কাজ করার পাশাপাশি বাঁধন মেডিক্যালে পড়েছেন, ডাক্তার হয়েছেন। বিয়ে করেছেন, সন্তান নিয়েছেন। এরপর ডিভোর্স, সন্তানের অধিকার নিয়ে আইনি লড়াই। নানা জটিলতা সামলাতে সামলাতে ডিপ্রেশনেই পড়ে গিয়েছিলেন বাঁধন। এই সিনেমার সুবাদেই সব কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। মন–প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিতে। প্রতিদানও পেয়েছেন পরিশ্রমের। হেঁটে এসেছেন কান উৎসবের রেড কার্পেটে।

আজমেরী হক বাঁধনগতকালই কান থেকে প্যারিসের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আজ প্যারিস থেকে ফিরবেন দেশের মাটিতে। ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে পুরস্কার না পেলেও ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ জিতে নিয়েছে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের ভালোবাসা। ছবিটি প্রদর্শনীর পর ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেয়েছেন। দেশে দেশে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে বাংলাদেশি সিনেমার প্রশংসা, যা এদেশের সিনেমার জন্য আশীর্বাদ বলেই মানছেন দেশীয় চলচ্চিত্রপ্রেমী ও সমালোচকেরা।

আজমেরী হক বাঁধনএই সাফল্যকে দেখা হচ্ছে এদেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে। আজ পুরস্কার আসেনি। কিন্তু যে পথ তৈরি করে দিয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, সেই পথে হেঁটেই একদিন বড় স্বীকৃতি আসবে বাংলাদেশে; এটা সবার প্রত্যাশা। বাঁধনও দেখিয়েছেন সাফল্যের সিঁড়িটা কেমন হতে পারে।

আজমেরী হক বাঁধন

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত