আফজাল হোসেন একজন জনপ্রিয় অভিনেতা, নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী। নিয়মিত না হলেও এখনো বিভিন্ন নাটক-সিরিজে দেখা যায় তাঁর অভিনয়নৈপুণ্য। সম্প্রতি প্রকাশিত হলো তাঁর অভিনীত দুটি ওয়েব সিরিজ। সিনেমায়ও অভিনয় করছেন তিনি। বাংলাদেশের ওটিটি ও সিনেমা নিয়ে আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা।
এম এস রানা
ওটিটিতে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আপনার অভিনীত ‘২ষ’ সিরিজের ‘অন্তরা’ পর্বটি সম্পর্কে বলুন।
এটি প্রথম সিজনের ‘মিষ্টি কিছু’ পর্বের সিকুয়েল। মিষ্টি কিছু যেখানে শেষ হয়েছিল, তার পর থেকে অন্তরা শুরু। পর্বটির প্রেক্ষাপট বেশ সিরিয়াস। আমার কাজ করতে অনেক ভালো লেগেছে।
আপনি নিয়মিত অভিনয় করেন না। কিন্তু নুহাশ হুমায়ূনের ‘ষ’-এর দুই সিজনেই কাজ করলেন। বিশেষ কোনো কারণ আছে?
নুহাশকে আমার ভালো লাগে। তার ভাবনাগুলো আলাদা। নতুন ভাবনা যাঁরা ভাবতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারা মানে নিজের কিছুটা আয়ু বৃদ্ধি করা, ভাবনাকে সমৃদ্ধ করা। দুটি চিত্রনাট্য পড়েই আমার মনে হয়েছে, ও খুব আলাদা করে ভাবে।
কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?
রেসপন্স নিয়ে আমি ভাবি না। ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে যা বিশেষ, যা আলাদা কিংবা ভিন্ন এবং সবার আগ্রহ সৃষ্টি করে, তার সঙ্গে আমি জড়িত আছি। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যাঁরা দেখছেন, তাঁরা এই ‘আলাদা কিছু’কে সম্মানিত করছেন। পেট কাটা ষ যখন প্রথম এল, তখন দেখলাম প্রতিটি গল্প আলাদা। একজন লেখক বা নির্মাতার গল্প এত ভিন্ন হতে পারে, এটি কিন্তু চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা। আরও ভালো লেগেছিল, তরুণ প্রজন্মের যারা টেলিভিশন বা ছোট পর্দা নিয়ে আগ্রহ দেখায় না, তাদের ভেতর একটা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে। যাঁরা ছোট পর্দার কাজ নিয়ে কোনো দিন কথা বলেননি, তাঁরাও অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রশংসা করেছেন।
এর আগেই ‘মেসমেট’ সিরিজে আপনার অভিনয় দেখা গেল...
এর নির্মাতাও একজন তরুণ। মেসমেট করেও ভীষণ ভালো লেগেছে। গল্পটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তা নয়, কিন্তু একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে।
ওটিটিতে কি তাহলে নিয়মিত হচ্ছেন?
তেমনটা নয়। অভিনয় আমার দুর্বলতা। ১৯৭৫ সাল থেকে অভিনয় করছি। যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে বোঝা যাবে আমি কখনোই অভিনয়ের সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে থাকতে চাইনি। একসময় একটাই টেলিভিশন ছিল। তখন যাঁরাই কাজ করেছেন, ভালোবেসে করেছেন। পরবর্তীকালে এটার পরিধিটা অনেক বেড়ে গেল। তাই কাউকে কাউকে ভাবতে হয়েছে, এটা পেশা হয়ে উঠুক। অল্পসংখ্যক মানুষ ভেবেছে, এটা পেশা না হোক। ভালো লাগার ও ভালোবাসার জায়গায় থাকুক। আমার কাছে অভিনয়টা ভালো লাগার জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। শুধু দর্শকের সামনে থাকার জন্য কিংবা করার জন্য করা, এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগে না।
যতটা আশা করা হয়েছিল, আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ততটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারছে না। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
কেন শক্তিশালী হয়ে উঠছে না, সেটার উত্তর আমার জানা নেই। তবে আমি চাই প্ল্যাটফর্মগুলো টিকে থাকুক। আমরা দেশের বাইরের অনেক ধারাবাহিক বা সিনেমা দেখছি। কিন্তু আমাদের বেলায় এমন হয়ে ওঠেনি। ওটিটি আসার পর এই পথটা উন্মুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের কাজ বাইরের দেশের মানুষ দেখার সুযোগ পাচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও পাবে। তাই আশা করব, এই মাধ্যমটা ভালোভাবে টিকে থাকুক।
ইউটিউবে প্রকাশিত নাটকের অনেক ভিউ দেখা যায়। কিন্তু ওটিটির কনটেন্টগুলো এখনো মানুষের মাঝে সেভাবে পৌঁছাতে পারছে না। এ বিষয়ে কী করা উচিত বলে মনে করেন?
আমরা যদি কোনো বিশেষ মাধ্যমকে বলি, এই মাধ্যমে অসংখ্য দর্শক আছে এবং সেই বিশেষ দর্শকশ্রেণি যদি বিচারক হয়, তাহলে আমাদের কাজের যে উচ্চতা, সেটি সঠিক হবে কি না, সেটা বিবেচনার বিষয়। এখন বেশির ভাগ সময়ে বাংলাদেশে সবকিছু সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা হয়। একটি গান কতবার শুনল, একটা নাটক কতজনে দেখল, একজন অভিনয়শিল্পীকে কত মানুষ পছন্দ করল। যখন আমাদের একটা রেডিও এবং একটা টেলিভিশন ছিল, মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ কম ছিল। তাই বলে কি চট্টগ্রামের একটি ব্যান্ড সোলস যখন নতুন ধারার গান করল, সেই গানগুলো কি সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি? পৌঁছেছে নতুনত্বের কারণে। একটা বিশেষ শ্রেণি পছন্দ করেছে, আরেকটি শ্রেণি করেনি, এমনটা হয়নি। একটা সময় টেলিভিশনের মাধ্যমে কিছু গায়কের উত্থান হয়েছে। আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজসহ অনেকে। তাঁরা একেকজন একেক ধরনের গান করেন। সমস্ত শ্রোতা বলল, তাঁদের গান ভালো। তার মানে, ভালোকে ভালো বলার বিশেষ ক্ষমতাটা মানুষের মাঝে ছিল। পরবর্তীকালে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস এলেন। তাঁরাও তো ভিন্ন ঘরানার গান ও গায়কি নিয়ে সফল হলেন। যে আলাদা, যে ভিন্ন, তাকে সব শ্রেণি পছন্দ করবে। আমরা এখন আলাদা কি না, সেটাই ভাবার বিষয়। আমি যদি কোনো শ্রেণির হয়ে কিছু করতে চাই, তাহলে সেটা এগিয়ে যাওয়া হবে না, হবে থমকে যাওয়া। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটেননি, ভালোর পেছনে ছুটেছেন। জনপ্রিয় হওয়ার বাসনাটা শুরুতেই মানুষকে পরাজিত করছে।
কী করলে আমাদের কনটেন্টগুলো আরও ভালো হতে পারে বলে মনে হয়?
আমাদের কনটেন্টগুলোতে বিষয়বৈচিত্র্য খুব একটা নেই। মাঝে মাঝে কিছু আলাদা বিষয় নিয়ে কাজ হয়। সাধারণের মাঝেও অসাধারণ কোনো বিষয় থাকে। কিন্তু সেটা বড় করে বলা হয় না। আমরা রোজ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আয়নার সামনে দাঁড়াই। নিজেকেই কোনো দিন ভালো লাগে, আবার কোনো দিন লাগে না। নিজেই নিজের মধ্যে বৈচিত্র্য চাই। সুতরাং আমরা যা উপভোগ করি, তার মধ্যেও বৈচিত্র্য থাকাটা জরুরি। আমাদের দেশে যাঁরা লেখেন, যাঁরা নির্মাণ করেন, অভিনয়শিল্পী বা কলাকুশলী যাঁরা আছেন, প্রত্যেকেই খুব দক্ষ এবং প্রতিভাবান। কিন্তু আমাদের যে আলাদা ভাবনা আছে, মনমানসিকতা আছে, সেগুলো আমাদের কাজে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দেশের দর্শক তাদেরটা বাদ দিয়ে কেন আমাদের দেখবেন, সেটা ভাবতে হবে। আমাদের কাজে আমাদের নিজস্বতা থাকতে হবে। তবেই আমাদের কাজের আকর্ষণ বাড়বে।
বাংলাদেশে স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ বেড়েছে। বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ভালো কাজ ও নতুন চিন্তা আমাদের দেশে প্রশ্রয় পায় না। আশার কথা হচ্ছে, যাঁরা বাইরে যোগাযোগ করতে পারেন, তাঁরা নতুন ভাবনা বা কাজের ব্যাপারে সহায়তা পান। এখন সারা বিশ্বের নির্মাতাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণেই অনেক সিনেমা তৈরি হয়ে বাইরে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে পৃষ্ঠপোষক তৈরি হচ্ছে না কেন?
পৃথিবীতে শিল্পমনস্কতা শিল্পচর্চা বাঁচিয়ে দেয়। হাজার বছর আগেও শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন। সেই ছবি এঁকে তো শিল্পীর পেটে ভাত জোটেনি। কিন্তু ছবি আঁকার যে স্পৃহা, আবেগ বা তাগিদ, সেটা তো কেউ না কেউ বাঁচিয়ে রেখেছেন। শিল্পী একা বাঁচিয়ে রাখেননি, তাঁর সঙ্গে মানুষ ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। অতীতেও আমাদের দেশে যাঁরা বড় পরিবারের ছিলেন, সেটা রাজা হোক কিংবা জমিদার, তাঁরা অতিথিশালা নির্মাণ করেছেন, বিদ্যাপীঠ, প্রার্থনাশালা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন। নিজের কাছে থাকা জিনিস কাজে লাগিয়েছেন মানুষের প্রয়োজনে। কেন? কারণ মানুষের সাহায্য হবে। আমার মনে হয়, সেই যুগ পৃথিবীতে এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সেদিন শুনলাম, আমেরিকাতে কয়েকজন অভিনেতা মিলে একটা অতিথিশালা নির্মাণ করেছেন। কারণ হলো, চিকিৎসার জন্য যাঁদের দীর্ঘকাল হাসপাতালে থাকতে হবে, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের থাকার যেন সমস্যা না হয়। এই যে প্রক্রিয়াটা, এটা মানুষ, মানবতা, আবেগ এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের দেশে শুনি, অসংখ্য অর্থবান মানুষ আছেন কিন্তু সামাজিক উন্নয়নে সেই অর্থবান মানুষের ভূমিকা খুব কম দেখতে পাই। আমরা দেখেছি, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার প্রযোজক আর ডি বনশল। ভিন্ন ভাষার একজন হয়েও তিনি মনে করেননি, এটি আমার ভাষার সিনেমা নয়, এখানে বিনিয়োগ করা যাবে না। আমাদের দেশে সে বিষয়টি হয়ে ওঠেনি। আমাদের দেশের নির্মাতা-কলাকুশলীদের যদি সাপোর্ট করা যেত, তাহলে আমরা আরও উঁচু জায়গায় যেতে পারতাম।
আমাদের দেশেও সিনেমার সোনালি সময় ছিল। এখন সেটা নেই কেন?
আমি কিন্তু সিনেমার পোকা ছিলাম। সপ্তাহে তিন-চারটি সিনেমা তো দেখতামই। অনেক ধরনের সিনেমা হয়েছে আমাদের দেশে। পোশাকি সিনেমা, সামাজিক, রাজনৈতিক সিনেমা যেমন হয়েছে, আবার প্রেমের সিনেমাও হয়েছে। তার পরে, আমাদের মাথা খেয়ে ফেলল বাণিজ্য। এই সিনেমা দেখতে হবে আর দেখাতে হবে—এই দুটি কারণে সিনেমার রূপ এমনভাবে পাল্টে ফেললাম যে বৃহৎসংখ্যক মানুষ সিনেমা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। মুখ থুবড়ে পড়ল সিনেমা। যখন একজন তাঁর সমস্ত বিশ্বাস, আদর্শ, যোগ্যতা দিয়ে একটা সিনেমা নির্মাণ করেন, আমরা সেটাকে বড় করে দেখি না। কারণ, সেটার মধ্যে বাণিজ্য নেই। যারা নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে, তাদের কাজগুলো সবার সামনে তুলে ধরা দরকার। নির্মাতারা তাঁদের কাজটি করলেও বাকিরা তাদের করণীয়টা করছে না। সিনেমাটা তো দর্শকদের দেখতে হবে। সেই বন্দোবস্তটাই করা হচ্ছে না।
বাণিজ্যিক সিনেমাই কি আমাদের অন্তরায়?
বাণিজ্যিক ছবির সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। বাণিজ্যিক ছবি বানানো অত্যন্ত যোগ্যতার ব্যাপার। আমি বলতে চাইছি, বাণিজ্যিক ঘরানার পাশাপাশি নতুন ভাবনার সিনেমা তৈরি হলে তার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ভূমিকা সবার থাকা দরকার। সেটা আমাদের দেশে নেই। তাই এমন সিনেমার নির্মাতারা কত দিন কষ্ট করে টিকে থাকতে পারবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু আস্থার কথা হলো, এসবের মধ্যেও বহু সিনেমা হচ্ছে, যে সিনেমাগুলো খুব চমৎকার ও অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে নির্মিত হয়েছে।
ওটিটিতে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আপনার অভিনীত ‘২ষ’ সিরিজের ‘অন্তরা’ পর্বটি সম্পর্কে বলুন।
এটি প্রথম সিজনের ‘মিষ্টি কিছু’ পর্বের সিকুয়েল। মিষ্টি কিছু যেখানে শেষ হয়েছিল, তার পর থেকে অন্তরা শুরু। পর্বটির প্রেক্ষাপট বেশ সিরিয়াস। আমার কাজ করতে অনেক ভালো লেগেছে।
আপনি নিয়মিত অভিনয় করেন না। কিন্তু নুহাশ হুমায়ূনের ‘ষ’-এর দুই সিজনেই কাজ করলেন। বিশেষ কোনো কারণ আছে?
নুহাশকে আমার ভালো লাগে। তার ভাবনাগুলো আলাদা। নতুন ভাবনা যাঁরা ভাবতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারা মানে নিজের কিছুটা আয়ু বৃদ্ধি করা, ভাবনাকে সমৃদ্ধ করা। দুটি চিত্রনাট্য পড়েই আমার মনে হয়েছে, ও খুব আলাদা করে ভাবে।
কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?
রেসপন্স নিয়ে আমি ভাবি না। ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে যা বিশেষ, যা আলাদা কিংবা ভিন্ন এবং সবার আগ্রহ সৃষ্টি করে, তার সঙ্গে আমি জড়িত আছি। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যাঁরা দেখছেন, তাঁরা এই ‘আলাদা কিছু’কে সম্মানিত করছেন। পেট কাটা ষ যখন প্রথম এল, তখন দেখলাম প্রতিটি গল্প আলাদা। একজন লেখক বা নির্মাতার গল্প এত ভিন্ন হতে পারে, এটি কিন্তু চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা। আরও ভালো লেগেছিল, তরুণ প্রজন্মের যারা টেলিভিশন বা ছোট পর্দা নিয়ে আগ্রহ দেখায় না, তাদের ভেতর একটা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে। যাঁরা ছোট পর্দার কাজ নিয়ে কোনো দিন কথা বলেননি, তাঁরাও অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রশংসা করেছেন।
এর আগেই ‘মেসমেট’ সিরিজে আপনার অভিনয় দেখা গেল...
এর নির্মাতাও একজন তরুণ। মেসমেট করেও ভীষণ ভালো লেগেছে। গল্পটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তা নয়, কিন্তু একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে।
ওটিটিতে কি তাহলে নিয়মিত হচ্ছেন?
তেমনটা নয়। অভিনয় আমার দুর্বলতা। ১৯৭৫ সাল থেকে অভিনয় করছি। যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে বোঝা যাবে আমি কখনোই অভিনয়ের সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে থাকতে চাইনি। একসময় একটাই টেলিভিশন ছিল। তখন যাঁরাই কাজ করেছেন, ভালোবেসে করেছেন। পরবর্তীকালে এটার পরিধিটা অনেক বেড়ে গেল। তাই কাউকে কাউকে ভাবতে হয়েছে, এটা পেশা হয়ে উঠুক। অল্পসংখ্যক মানুষ ভেবেছে, এটা পেশা না হোক। ভালো লাগার ও ভালোবাসার জায়গায় থাকুক। আমার কাছে অভিনয়টা ভালো লাগার জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। শুধু দর্শকের সামনে থাকার জন্য কিংবা করার জন্য করা, এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগে না।
যতটা আশা করা হয়েছিল, আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ততটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারছে না। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
কেন শক্তিশালী হয়ে উঠছে না, সেটার উত্তর আমার জানা নেই। তবে আমি চাই প্ল্যাটফর্মগুলো টিকে থাকুক। আমরা দেশের বাইরের অনেক ধারাবাহিক বা সিনেমা দেখছি। কিন্তু আমাদের বেলায় এমন হয়ে ওঠেনি। ওটিটি আসার পর এই পথটা উন্মুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের কাজ বাইরের দেশের মানুষ দেখার সুযোগ পাচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও পাবে। তাই আশা করব, এই মাধ্যমটা ভালোভাবে টিকে থাকুক।
ইউটিউবে প্রকাশিত নাটকের অনেক ভিউ দেখা যায়। কিন্তু ওটিটির কনটেন্টগুলো এখনো মানুষের মাঝে সেভাবে পৌঁছাতে পারছে না। এ বিষয়ে কী করা উচিত বলে মনে করেন?
আমরা যদি কোনো বিশেষ মাধ্যমকে বলি, এই মাধ্যমে অসংখ্য দর্শক আছে এবং সেই বিশেষ দর্শকশ্রেণি যদি বিচারক হয়, তাহলে আমাদের কাজের যে উচ্চতা, সেটি সঠিক হবে কি না, সেটা বিবেচনার বিষয়। এখন বেশির ভাগ সময়ে বাংলাদেশে সবকিছু সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা হয়। একটি গান কতবার শুনল, একটা নাটক কতজনে দেখল, একজন অভিনয়শিল্পীকে কত মানুষ পছন্দ করল। যখন আমাদের একটা রেডিও এবং একটা টেলিভিশন ছিল, মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ কম ছিল। তাই বলে কি চট্টগ্রামের একটি ব্যান্ড সোলস যখন নতুন ধারার গান করল, সেই গানগুলো কি সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছায়নি? পৌঁছেছে নতুনত্বের কারণে। একটা বিশেষ শ্রেণি পছন্দ করেছে, আরেকটি শ্রেণি করেনি, এমনটা হয়নি। একটা সময় টেলিভিশনের মাধ্যমে কিছু গায়কের উত্থান হয়েছে। আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজসহ অনেকে। তাঁরা একেকজন একেক ধরনের গান করেন। সমস্ত শ্রোতা বলল, তাঁদের গান ভালো। তার মানে, ভালোকে ভালো বলার বিশেষ ক্ষমতাটা মানুষের মাঝে ছিল। পরবর্তীকালে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস এলেন। তাঁরাও তো ভিন্ন ঘরানার গান ও গায়কি নিয়ে সফল হলেন। যে আলাদা, যে ভিন্ন, তাকে সব শ্রেণি পছন্দ করবে। আমরা এখন আলাদা কি না, সেটাই ভাবার বিষয়। আমি যদি কোনো শ্রেণির হয়ে কিছু করতে চাই, তাহলে সেটা এগিয়ে যাওয়া হবে না, হবে থমকে যাওয়া। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা কেউ জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটেননি, ভালোর পেছনে ছুটেছেন। জনপ্রিয় হওয়ার বাসনাটা শুরুতেই মানুষকে পরাজিত করছে।
কী করলে আমাদের কনটেন্টগুলো আরও ভালো হতে পারে বলে মনে হয়?
আমাদের কনটেন্টগুলোতে বিষয়বৈচিত্র্য খুব একটা নেই। মাঝে মাঝে কিছু আলাদা বিষয় নিয়ে কাজ হয়। সাধারণের মাঝেও অসাধারণ কোনো বিষয় থাকে। কিন্তু সেটা বড় করে বলা হয় না। আমরা রোজ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আয়নার সামনে দাঁড়াই। নিজেকেই কোনো দিন ভালো লাগে, আবার কোনো দিন লাগে না। নিজেই নিজের মধ্যে বৈচিত্র্য চাই। সুতরাং আমরা যা উপভোগ করি, তার মধ্যেও বৈচিত্র্য থাকাটা জরুরি। আমাদের দেশে যাঁরা লেখেন, যাঁরা নির্মাণ করেন, অভিনয়শিল্পী বা কলাকুশলী যাঁরা আছেন, প্রত্যেকেই খুব দক্ষ এবং প্রতিভাবান। কিন্তু আমাদের যে আলাদা ভাবনা আছে, মনমানসিকতা আছে, সেগুলো আমাদের কাজে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দেশের দর্শক তাদেরটা বাদ দিয়ে কেন আমাদের দেখবেন, সেটা ভাবতে হবে। আমাদের কাজে আমাদের নিজস্বতা থাকতে হবে। তবেই আমাদের কাজের আকর্ষণ বাড়বে।
বাংলাদেশে স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ বেড়েছে। বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
ভালো কাজ ও নতুন চিন্তা আমাদের দেশে প্রশ্রয় পায় না। আশার কথা হচ্ছে, যাঁরা বাইরে যোগাযোগ করতে পারেন, তাঁরা নতুন ভাবনা বা কাজের ব্যাপারে সহায়তা পান। এখন সারা বিশ্বের নির্মাতাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণেই অনেক সিনেমা তৈরি হয়ে বাইরে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে পৃষ্ঠপোষক তৈরি হচ্ছে না কেন?
পৃথিবীতে শিল্পমনস্কতা শিল্পচর্চা বাঁচিয়ে দেয়। হাজার বছর আগেও শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন। সেই ছবি এঁকে তো শিল্পীর পেটে ভাত জোটেনি। কিন্তু ছবি আঁকার যে স্পৃহা, আবেগ বা তাগিদ, সেটা তো কেউ না কেউ বাঁচিয়ে রেখেছেন। শিল্পী একা বাঁচিয়ে রাখেননি, তাঁর সঙ্গে মানুষ ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। অতীতেও আমাদের দেশে যাঁরা বড় পরিবারের ছিলেন, সেটা রাজা হোক কিংবা জমিদার, তাঁরা অতিথিশালা নির্মাণ করেছেন, বিদ্যাপীঠ, প্রার্থনাশালা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন। নিজের কাছে থাকা জিনিস কাজে লাগিয়েছেন মানুষের প্রয়োজনে। কেন? কারণ মানুষের সাহায্য হবে। আমার মনে হয়, সেই যুগ পৃথিবীতে এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সেদিন শুনলাম, আমেরিকাতে কয়েকজন অভিনেতা মিলে একটা অতিথিশালা নির্মাণ করেছেন। কারণ হলো, চিকিৎসার জন্য যাঁদের দীর্ঘকাল হাসপাতালে থাকতে হবে, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের থাকার যেন সমস্যা না হয়। এই যে প্রক্রিয়াটা, এটা মানুষ, মানবতা, আবেগ এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের দেশে শুনি, অসংখ্য অর্থবান মানুষ আছেন কিন্তু সামাজিক উন্নয়নে সেই অর্থবান মানুষের ভূমিকা খুব কম দেখতে পাই। আমরা দেখেছি, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার প্রযোজক আর ডি বনশল। ভিন্ন ভাষার একজন হয়েও তিনি মনে করেননি, এটি আমার ভাষার সিনেমা নয়, এখানে বিনিয়োগ করা যাবে না। আমাদের দেশে সে বিষয়টি হয়ে ওঠেনি। আমাদের দেশের নির্মাতা-কলাকুশলীদের যদি সাপোর্ট করা যেত, তাহলে আমরা আরও উঁচু জায়গায় যেতে পারতাম।
আমাদের দেশেও সিনেমার সোনালি সময় ছিল। এখন সেটা নেই কেন?
আমি কিন্তু সিনেমার পোকা ছিলাম। সপ্তাহে তিন-চারটি সিনেমা তো দেখতামই। অনেক ধরনের সিনেমা হয়েছে আমাদের দেশে। পোশাকি সিনেমা, সামাজিক, রাজনৈতিক সিনেমা যেমন হয়েছে, আবার প্রেমের সিনেমাও হয়েছে। তার পরে, আমাদের মাথা খেয়ে ফেলল বাণিজ্য। এই সিনেমা দেখতে হবে আর দেখাতে হবে—এই দুটি কারণে সিনেমার রূপ এমনভাবে পাল্টে ফেললাম যে বৃহৎসংখ্যক মানুষ সিনেমা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। মুখ থুবড়ে পড়ল সিনেমা। যখন একজন তাঁর সমস্ত বিশ্বাস, আদর্শ, যোগ্যতা দিয়ে একটা সিনেমা নির্মাণ করেন, আমরা সেটাকে বড় করে দেখি না। কারণ, সেটার মধ্যে বাণিজ্য নেই। যারা নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে, তাদের কাজগুলো সবার সামনে তুলে ধরা দরকার। নির্মাতারা তাঁদের কাজটি করলেও বাকিরা তাদের করণীয়টা করছে না। সিনেমাটা তো দর্শকদের দেখতে হবে। সেই বন্দোবস্তটাই করা হচ্ছে না।
বাণিজ্যিক সিনেমাই কি আমাদের অন্তরায়?
বাণিজ্যিক ছবির সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। বাণিজ্যিক ছবি বানানো অত্যন্ত যোগ্যতার ব্যাপার। আমি বলতে চাইছি, বাণিজ্যিক ঘরানার পাশাপাশি নতুন ভাবনার সিনেমা তৈরি হলে তার প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ভূমিকা সবার থাকা দরকার। সেটা আমাদের দেশে নেই। তাই এমন সিনেমার নির্মাতারা কত দিন কষ্ট করে টিকে থাকতে পারবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু আস্থার কথা হলো, এসবের মধ্যেও বহু সিনেমা হচ্ছে, যে সিনেমাগুলো খুব চমৎকার ও অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে নির্মিত হয়েছে।
ভারতের মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় তারকা নাজরিয়া নাজিম। ‘বিরতি, ফিরে আসা’—এ দুই শব্দ বারবার ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর ক্যারিয়ারে। শিশুশিল্পী হিসেবে ২০০৬ সালে অভিনয় শুরু করেছিলেন। চার বছরের বিরতির পর আবার দুটি সিনেমায় দেখা যায় তাঁকে।
১৪ ঘণ্টা আগেপ্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করেছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৯ বছর। আবারও দর্শকের সামনে নতুন সিনেমা নিয়ে আসছেন অমিতাভ রেজা। ২৪ জানুয়ারি সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর পরিচালিত ‘রিকশা গার্ল’।
১৪ ঘণ্টা আগেশুটিং শুরুর সময় নির্মাতা অনন্য মামুন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিনে হিন্দি, তেলুগুসহ পাঁচটি ভাষায় ভারতে মুক্তি পাবে ‘দরদ’। তবে মুক্তির সময় কথা ও কাজের মিল দেখা যায়নি। গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পেলেও ভারতে উপেক্ষিত...
২ দিন আগেদক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটিএস দিয়ে পরিচিতি পান জে-হোপ। বর্তমানে ব্যান্ডটির বেশির ভাগ সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণে থাকায় আপাতত বন্ধ আছে বিটিএসের কার্যক্রম। জে-হোপও ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ করে ফিরেছেন গত বছরের অক্টোবরে...
২ দিন আগে