জহিরের অস্ত্র ছিল কলম ও ক্যামেরা

সুচন্দা
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২১, ২০: ০২
Thumbnail image

বড় আয়োজন করে কখনোই জহিরকে জন্মদিন পালন করতে দেখিনি। ঘরোয়াভাবেই তার জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হতো। হয়তো স্পেশাল কিছু রান্না হতো। পরিবারের মানুষ একসঙ্গে বসে আড্ডা হতো। কেক কেটে ঘর সাজিয়ে আয়োজন কখনোই হয়নি। জহির খুব কাজপাগল মানুষ ছিল। কাজ রেখে একটা আলাদা দিন বের করে জন্মদিন পালন করবে, সেটা সে ভাবতেই পারত না।

জহিরের মতো আপনভোলা মানুষ কমই দেখেছি। আমি না বললে এক কাপড়েই দুই দিন পার করে দিত। ওর দরকারি সব জিনিসপত্র আমাকেই কিনে দিতে হতো। জহির সব সময়ই ব্যাকব্রাশ করে চুল আঁচড়াত। খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করত। খাবারদাবার নিয়েও কখনো কোনো আবদার ছিল না। তবে জোরে গাড়ি চালাতে খুব পছন্দ করত।

সুচন্দাজহির নিখোঁজ হওয়ার পর আমি অনেক চেষ্টা করেছি তার লেখালেখি, ফিল্মগুলো, বিভিন্ন সময়ে ধারণ করা ফুটেজগুলো সংরক্ষণ করার। আমরা তখন ভাড়া বাসায় থাকতাম। ২৫ মার্চ রাতেও ভাড়া বাড়িতেই ছিলাম। ওই দিন রাতে আমরা বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এর অল্প কিছু সময় পরে জহিরের খোঁজে পাকিস্তানিরা এসেছিল। আমাদের না পেয়ে বাড়িঘর তছনছ করে সব নষ্ট করে দিয়েছে। ও নিজের হাতে লিখতে পছন্দ করত না। ও বলত, অন্য কেউ সেটা লিখত। সেভাবেই লেখালেখি। তাই অনেক লেখাই আমাদের সংগ্রহে নেই। ফিল্ম তখন পাকিস্তান আর্মিরা কন্ট্রোল করত। তাই সব ফিল্ম সংরক্ষণ করা যায়নি। তারপরও যতটুকু ছিল, সেগুলোও পরে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

জহির মারা যাওয়ার পরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তার সবকিছু নিয়ে গেছে। এগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কাজে আসছে কি না, জানা নেই। তবে এটা নিশ্চিত, জহির রায়হানের সৃষ্টি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। আমি যতবার উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। কেউ সাহায্য করেনি। তার অনেক সৃষ্টি নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতে দেখি, সাদা–কালো যুগের ছবিগুলো ডেভেলপ করে ঝকঝকে করে তুলেছে। সেটা দেখে আফসোস হয়। বহুবার অনেক অনুষ্ঠানে বলেছি। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু জহিরের ছবিগুলো ওভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি।

জহির রায়হানের যুদ্ধের অস্ত্র ছিল একটি কলম ও একটি ক্যামেরা। আমি তাঁকে মানসিকভাবে শক্তি জোগনোর চেষ্টা করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম যে ফ্লাইট ভারত থেকে রাজনীতিবিদদের নিয়ে আসে, সেই ফ্লাইটেই ও এসেছে। যখন দেশে ফিরেছে, ক্যামেরায় শুট করতে করতে এসেছে। দুঃখজনক হচ্ছে, তার সেই সব ফুটেজ, শুট করা ফিল্মগুলো আমি পাইনি। জহির রায়হান সাহসী একজন মানুষ ছিল। দেশ ও সিনেমার জন্য আজীবন কাজ করেছে। কিন্তু তাকে আমরা কতটা সম্মান দিতে পেরেছি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত