ধর্মঘটের মুখে হলিউডে অচলাবস্থা 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৫: ০১
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৬: ১০

বেশ কিছু দিন যাবৎ ধর্মঘট করছেন হলিউডের লেখকেরা। এবার তাঁদের ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরাও। এতে অচলাবস্থার মুখে পড়েছে পুরো হলিউড ইন্ডাস্ট্রি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় রকমের স্থবিরতার মুখে পড়তে যাচ্ছে হলিউড।  

হলিউডের প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার শিল্পী স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করা বন্ধ করে দেন। এতে সব মার্কিন সিনেমা ও টেলিভিশন প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। হলিউডের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড (এসএজি–সেগ)। এর আগে নেটফ্লিক্সসহ স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় লেখকদের ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় সেগ।    

পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ বেশ কিছু দাবিতে ধর্মঘট করে আসছিলেন হলিউডের লেখকেরা। তাঁদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নিজেদের কিছু দাবি নিয়ে নেটফ্লিক্স, ডিজনিসহ হলিউডের শীর্ষ স্টুডিওগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল সেগ। লভ্যাংশের ভাগ ও আরও ভালো কর্মপরিবেশের দাবি জানিয়ে স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সেগ।  

বেশ কিছুদিন ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কাছে চাকরি হারানো আশঙ্কা করে আসছিলেন হলিউডের শিল্পীরা। শিল্পীদের ইউনিয়ন সেগ চাইছে, অভিনয়শিল্পীদের জায়গায় এআই বা কম্পিউটারের ব্যবহার করে তাঁদের চেহারা ও কণ্ঠ যেন প্রতিস্থাপিত না হয়। 

এদিকে ধর্মঘট চলাকালীন অভিনয়শিল্পীদের তাঁদের অভিনীত কোনো সিনেমায় দেখানো যাবে না বলে জানিয়েছে সেগ। এমনকি তাঁরা যেসব কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন, সেগুলোর প্রচারেও কেউ অংশ নেবেন না।  

ধর্মঘটের কারণে অভিনেতা কিলিয়ান মারফি, ম্যাট ডেমন ও এমিলি ব্লান্ট ক্রিস্টোফার নোলানের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওপেনহেইমারের প্রিমিয়ারে অংশ নেননি। পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান বলেন, তিনি শিল্পীদের এই আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন। 

বেশ কিছুদিন যাবৎ ধর্মঘট পালন করছেন হলিউডের লেখকেরা। ছবি: এএফপিসেগের এই ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন অনেক হলিউড তারকা, যাঁদের মধ্যে বেটার কল সাউল তারকা বব ওডেনকির্ক, সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটির সিনথিয়া নিক্সন ও হলিউডের জেমি লি কুর্তিসও রয়েছেন। 

স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার সকালে ক্যালিফোর্নিয়ায় নেটফ্লিক্সের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে শিল্পীদের। এরপর তাঁরা প্যারামাউন্ট, ওয়ার্নার ব্রস ও ডিজনির সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। 

লেখকেরা তাঁদের আয়কে ‘রেসিডুয়ালস’ বলেন। আগে টিভি শোর চিত্রনাট্য লিখে সম্মানীর সঙ্গে ‘উপরি’ জুটত। ডিভিডি রাইটস থেকে শুরু করে শোর পুনঃপ্রচারের আয়ে ভাগ পেতেন লেখকেরা। এটাই রেসিডুয়ালস আয়। কিন্তু এখন নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস হটস্টারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের ভিউর সংখ্যা প্রকাশ করে না। ফলে, লেখকেরা একটি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পান, বাড়তি কিছু পান না।

‘এনসিআইএস: লস অ্যাঞ্জেলেস’, ‘দ্য টার্মিনাল লিস্ট’-এ ছোট চরিত্র করা ৪৮ বছর বয়সী শন ল্যাং বলেন, ‘রেসিডুয়ালই দুই প্রজেক্টের মাঝের সময়টা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। একের পর এক প্রজেক্ট করছেন—আমাদের মতো অনেকেই এমন সৌভাগ্যবান নন। রেসিডুয়ালসই তাঁদের খাবার জোগায়, সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে সাহায্য করে। ফলে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

স্ট্রিমিং জায়ান্টদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সেগের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও প্রধান আপসকারী ডানকান ক্রেবাত্রি বলেন, এটি অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ‘তারা প্রস্তাব করে যে আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড পারফরমারদের স্ক্যান (চেহারা, কণ্ঠ) করা হবে। তাঁদের এক দিনের বেতনের জন্য অর্থ প্রদান করা হবে। তাদের কোম্পানি শিল্পীদের স্ক্যান করা চেহারা বা কণ্ঠের মালিক হবে। শিল্পীদের সদৃশতা অনন্তকালের জন্য ব্যবহার করতে পারবে তারা।’

শিল্পীদের ধর্মঘটের মানে হচ্ছে সিনেমার বড় একটা অংশের কাজ বন্ধ থাকা। যেসব ছবির কাজ শেষ হয়েছে, সেই সব ছবিতে পুনরায় দৃশ্য ধারণ বা প্রয়োজনীয় কোনো কাজে অংশ নেবেন না শিল্পীরা। এমনকি মুক্তির ঘোষণা দেওয়া ছবির মুক্তিও আটকে যেতে পারে ধর্মঘটের কারণে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত