সাক্ষাৎকার

কোক স্টুডিও বাংলায় গান গেয়েছি, শুটিংও হয়েছে

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। আজও গানের সঙ্গে কাটে তাঁর দিনরাত। সময় সুযোগ হলে নিজে যেমন গাইছেন, তেমনি সুর করছেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য। তাঁরাও রুনা লায়লার সঙ্গে গানের সাধনায় মেতে সমৃদ্ধ হচ্ছেন। আজ রুনা লায়লার জন্মদিন। ১৯৫২ সালে সিলেটে জন্ম তাঁর। জন্মদিনের আয়োজন এবং সংগীতের নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা

জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?

অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই তো আছি ভালোই। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটছে।

জন্মদিনের কোনো আয়োজন করছেন?

না, সে রকম কোনো আয়োজন করছি না। পরিবারের মানুষদের নিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাব।

প্রতিবছর চ্যানেল আইয়ে আপনাকে নিয়ে বিশেষ আয়োজন থাকে। এবারও থাকছে নিশ্চয়ই?

হ্যাঁ, চ্যানেল আইয়ে দুপুর ১২টায় একটি লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেব (অনন্যা রুমার প্রযোজনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে, সানজিদা রহমানের উপস্থাপনায় ‘তারকা কথন’)। অনুষ্ঠানে অনেকেই (মানাম আহমেদ, আগুন, আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম, শওকত আলী ইমন প্রমুখ) আসবেন, শুভেচ্ছা জানাবেন।

আপনার স্বামী অভিনেতা আলমগীর প্রতিবছর এদিনে আপনাকে সারপ্রাইজ গিফট দেন। এ বছর কী সারপ্রাইজ দিচ্ছেন তিনি? কোনো আভাস পাচ্ছেন?

হ্যাঁ, উনি তো প্রতিবছরই সারপ্রাইজ দেন। এ বছরও নিশ্চয়ই দেবেন। তবে কী দেবেন, তা এখনো (গতকাল) বুঝতে পারছি না। দেওয়ার পরে বুঝতে পারব।

এম এ আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে সুরকার হিসেবে প্রথম কাজ করেছেন, জাতীয় পুরস্কারও জিতেছেন। এরপর অনেকেই গেয়েছেন আপনার সুরে। নতুন কোনো গানে সুর করছেন?

করছি। বেশ কিছু গানের সুর করেও রেখেছি। প্রপার প্ল্যাটফর্ম লাগবে গানগুলোর জন্য। পুরোপুরি তৈরি হলে, ভালো প্ল্যাটফর্ম পেলে ধারাবাহিকভাবে রিলিজ দেব।

আপনার সুরে দেশের শিল্পীদের পাশাপাশি উপমহাদেশের খ্যাতিমান শিল্পীরাও কণ্ঠ দিয়েছেন। নতুন গানগুলোতে কারা কণ্ঠ দেবেন?

এখনো ঠিক করিনি। গান তৈরির পর শিল্পী নির্বাচন করব। তবে দেশের শিল্পীরা গাইবেন, এটা নিশ্চিত।

কোক স্টুডিও বাংলায় গাইবেন বলেছিলেন। তার কী খবর?

কোক স্টুডিও বাংলায় গান গেয়েছি, শুটিংও হয়েছে। এখন তো গান রিলিজ স্থগিত আছে। আবার শুরু হলে, সময় সুযোগ বুঝে রিলিজ দেওয়া হবে গানটি।

কোন গানটি গেয়েছেন?

এখন বলা যাবে না। এটা সারপ্রাইজ। রিলিজের পরই জানা যাবে।

একসময় সিনেমার গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফিরত। এখনো যে গান হিট হচ্ছে না তা নয়, সিনেমা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় গান জনপ্রিয় হচ্ছে না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

এখন আগের মতো সিনেমা দেখা হয় না আমার, তেমন করে গানও শোনা হয় না। তবে আগের মতো তো নেই সব, বদলে গেছে অনেক কিছু। নতুন ট্রেন্ড চলছে। কিছু গান শ্রোতারা ভালোভাবে নিচ্ছে, জনপ্রিয় হয়েছে। আমিও শুনেছি কিছু গান।

প্রতিদিন গানের রেওয়াজ করা, সাধনা করা—ব্যাপারগুলো কি এখনকার শিল্পীদের মধ্যে দেখতে পান?

আসলে এখন সবকিছু ঝটপট সেরে ফেলা হয়। পুরো গান এখন গাইতে হয় না, একটা-দুটো করে লাইন গেয়ে গেয়ে পুরো গান করে ফেলা যায়। আগে অনেক প্র্যাকটিসের পর মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে পুরো গান গেয়ে রেকর্ডিং হতো। তখন অনেক কষ্ট করতে হতো। এখন সব সহজ হয়েছে। তাই সাধনা কমেছে।

এভাবে একটা গান হয়, কিন্তু স্টেজে বা সরাসরি গাইতে গেলে অসুবিধা হওয়ার কথা। আপনি তো নতুনদের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে কি সেই দরদ বা সাধনা দেখতে পান?

এটা সত্যি, সাধনা না থাকলে প্রপার গান হয় না। একেবারেই যে দেখি না তা নয়, অনেকেই নিয়মিত চর্চা করে, ভালো গাইছেও। আমি তো শুনি, আমাকে পাঠায় মাঝেমধ্যে, আমি শুনে মন্তব্যও করি। তারা চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের জন্য ভালো প্ল্যাটফর্ম লাগবে; তখন তারা উৎসাহী হবে, ভালো শিল্পী বেরিয়ে আসবে। এখন সেমিক্ল্যাসিক্যাল গান খুব কম হয়। আমি কয়েকজনকে গাইয়েছিলাম, চেষ্টা করেছিলাম ওই আঙ্গিকের কিছু গান ওরা গাক। কারণ, ওরা তো সে রকম গান পায় না। ওরা খুব এনজয় করেছে, খুব খেটেছে, ভালো গেয়েছে।

আগে যাঁরা গান লিখতেন—আলাউদ্দীন আলী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার বা আরও অনেকে; তাঁরা যেমনটা লিখতেন, তেমন লেখনী বা শব্দচয়ন কি এখনকার গানে দেখতে পান? নাকি এখানেও চর্চা কমেছে?

এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমরা বলিউডকে ফলো করছি। আবার মানুষের টেস্টও বদলে গেছে। সস্তা কথার ধুমধাড়াক্কা গান বেশি পছন্দ করছে। আগে যে ধরনের সিনেমা হতো গল্পনির্ভর, ফ্যামিলি ড্রামা; সেসব তো এখন দেখি না। আগের সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালকদের অনেকেই নেই। এ প্রজন্মের যারা কাজ করছে, তারা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছে।

তাহলে কি প্রযুক্তিনির্ভরতা এই সময়ের শিল্পীদের শিল্পচর্চা বা সাধনার জায়গা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে?

হ্যাঁ, সেটা তো হচ্ছেই। তবে যেভাবেই গান হোক, চর্চা কিন্তু লাগবেই।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত