Ajker Patrika

নতুন করে আলোচনায় তিন দশক আগের গান ‘আজ যে শিশু’

‘আজ যে শিশু’ তিন দশকের পুরোনো গান। ১৯৯৩ সালে রেনেসাঁ ব্যান্ডের ‘তৃতীয় বিশ্ব’ অ্যালবামে ছিল গানটি। দুই বছর পর বিটিভির জলসা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গানটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আজ যে শিশু গানটি। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় আবারও সামনে এসেছে আজ যে শিশু। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিটিভির জলসা অনুষ্ঠানে গানটি গাওয়ার সেই পুরোনো ভিডিও। পাঠকদের জন্য আজ যে শিশুর পেছনের গল্প শোনালেন গানটির গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী

বিনোদন ডেস্ক
গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ছবি: সংগৃহীত
গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা থেকেই ‘আজ যে শিশু’ গানের সৃষ্টি। ১৯৮৬ সালের আগে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। সেখানে একটি কলেজে পড়াতাম। এরপর ঢাকায় চলে এলেও কলেজের প্রতি টান অনুভব করতাম। তাই সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রাম গিয়ে পড়িয়ে আসতাম। রাতের ট্রেনে চট্টগ্রামে চলে যেতাম। ট্রেনে যাতায়াতের সময় ও স্টেশন থেকে বাসায় আসা-যাওয়ার সময় দেখতাম, রেললাইনের পাশে ছোট ছোট বস্তির মতো জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুরা বেড়ে উঠছে।

ঢাকায়ও খুব ভালো অবস্থা ছিল না। ধানমন্ডিতে তখন অ্যাপার্টমেন্ট কেবল গড়ে উঠছে। সিঁড়িতে মানুষ বাসা বানিয়ে থাকত। শিশুরা সেখানে খেলছে, খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে—এই বিষয়গুলো আমাকে অনেক পীড়া দিত। ভাবনা শুরু হলো, আমাদের শিশুরা তো বড় হয়ে ওঠার জন্য ভালো পরিবেশ পাচ্ছে না। সারা দেশে একই অবস্থা। অনেকেই লেখাপড়া করার সুযোগ পায় না, খাবার পায় না, পোশাক পায় না। সারা দেশের শিশুদের জন্য একই মানের পরিবেশ ও সুবিধা থাকা উচিত। উন্নত দেশে সকল শিশুর সম অধিকার দেওয়া হয়। কোনো ব্যবধান থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এই চিন্তা থেকেই আজ যে শিশু গানের ভাবনাটা আসে। আস্তে আস্তে ভাবনাটা ম্যাচিউর হয়। একসময় লেখা হয়ে যায়।

সে সময় রেনেসাঁর সঙ্গে আমি গান করছিলাম। সোলস ব্যান্ডে থাকতেই পিলু খান, নকীব খানের সঙ্গে কাজ করা শুরু। রেনেসাঁর পিলু খানকে এই গানটি দিলাম। দারুণ সুর করল সে। সুর করার পর রেনেসাঁর সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিল, এটি ব্যান্ডের তৃতীয় অ্যালবাম ‘তৃতীয় বিশ্ব’তে থাকবে। গানটি গেয়েছিল পিলু। ব্যান্ডের সবাই দারুণ পছন্দ করল। সে সময় থেকে এটি আমাদের ভালো লাগার গান। বক্তব্যধর্মী গান, তাই সবাই একটু চিন্তায় ছিলাম। ভেবেছিলাম, হয়তো অল্পসংখ্যক মানুষ শুনবে। নব্বইয়ের দশকে তো প্রেম আর বিচ্ছেদের গানের প্রচলন বেশি ছিল। ১৯৯৩ সালে তৃতীয় বিশ্ব অ্যালবাম প্রকাশের পর থেকে অন্যান্য গানের পাশাপাশি এই গানটি নিয়েও সাড়া পাচ্ছিলাম। সত্যি বলতে আমরা আশা করিনি, আজ যে শিশু গানটি মানুষ এত পছন্দ করবে!

১৯৯৫ সালে বিটিভির জলসা অনুষ্ঠানে ‘আজ যে শিশু’ গানটি গাইছেন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত
১৯৯৫ সালে বিটিভির জলসা অনুষ্ঠানে ‘আজ যে শিশু’ গানটি গাইছেন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

অ্যালবাম প্রকাশের দুই বছর পর ১৯৯৫ সালের বিটিভির জলসা অনুষ্ঠানে অনেক শিল্পী মিলে আজ যে শিশু গায়। এই অনুষ্ঠানে মূলত ব্যান্ডের শিল্পীরা তাদের ঘরানার বাইরের গান গেয়েছিল, আর অন্যরা গেয়েছিল ব্যান্ডের গান। অনুষ্ঠানটি প্রচারের পর আজ যে শিশু সর্বসাধারণের হয়ে যায়। এরপর অনেকবার গানটি ফিরে ফিরে এসেছে। শিশুদের নিয়ে কথা উঠলেই সামনে চলে আসে গানটি। এ ছাড়া এমনিতেও অনেক জায়গায় নিয়মিত বাজানো হয়। আমি নিজে অনেক অটিস্টিক স্কুলে গিয়ে দেখেছি সবাই মিলে এই গানটি গায়। প্রকাশের ৩৩ বছর পরেও যখন নিজের লেখা একটি গান জনপ্রিয়তা ধরে রাখে, সেটা বিশাল আনন্দের। তবে শুধু গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চলুন আমরা শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী সৃষ্টি করি।

(অনুলিখন)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত