তামান্না-ই-জাহান
কেজিএফ-এর দ্বিতীয় পর্বে এখন তোলপাড় ভারত। ছবিটির গল্পে দেখা যায়, কর্ণাটক থেকে বোম্বে এসে ‘রকি’ হয়ে ওঠে মুকুটহীন সম্রাট। বোম্বে হাতের মুঠোয় নেওয়ার পরই রকি চাইতে থাকে—‘দুনিয়া’!
ভারতের বলিউডেও কী সেই ঘটনাই ঘটতে চলেছে? অন্তত চলতি বছরের শুরু থেকে হিসাব করলে বিষয়টা তেমনই দাঁড়ায়। এক কথায়, দক্ষিণী সিনেমায় কাঁপছে বলিউড। অধুনা মুম্বাই (আগের বোম্বে) এখন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে পুষ্পা বা রকিদের ছাতার নিচে। অন্যদিকে ‘ভয় পেয়ে’ সিনেমার মুক্তি পেছাতে হচ্ছে বলিউডের শহীদ কাপুরের মতো নায়কদের। সেটিও আবার কিনা দক্ষিণেরই সিনেমার রিমেক!
ফলে প্রশ্নটা উঠেই যাচ্ছে যে, বলিউড তার এত দিনের সাম্রাজ্য হারাতে বসল কি না? এই প্রশ্নের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’। এই এক সিনেমাতেই যেন বলিউডের হিন্দি ঘরানার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পুরো ব্যবসা কাঠামো শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেল। যদিও ভারতে দক্ষিণী সিনেমার দাপট নতুন নয়। জনপ্রিয়তা ছাড়িয়েছে দেশের গণ্ডিও। তবে ‘বাহুবলী’ থেকে শুরু করে সবশেষ ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ পর্যন্ত যেভাবে বক্স অফিস কাঁপাচ্ছেন প্রভাস, রামচরণ, আল্লু অর্জুন ও যশরা, তাতে অনেকেই মনে করছেন বলিউড রাজত্বের দিন ফুরোল বলে। তবে কি খান-কাপুরদের একচ্ছত্র রাজত্বের অবসান হবে পুষ্পা-রকিদের হাতেই?
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দক্ষিণী নতুন সিনেমার কারণে হরহামেশা নিজেদের ছবির মুক্তির তারিখ পেছাতে বাধ্য হচ্ছে বলিউড। সম্প্রতি এমন নজির ভূরি ভূরি। বিগ বাজেটের দক্ষিণী সিনেমা মুক্তির দিনক্ষণ এগিয়ে আসলেই যেন হৃৎকম্পন শুরু হয় বলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের। সবশেষ বলিউডের মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘জার্সি’। শহীদ কাপুর ও ম্রুনাল ঠাকুর অভিনীত এই সিনেমা বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৪ এপ্রিল মুক্তি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ফের বাঁধ সাধল সেই দক্ষিণী সিনেমা! এদিন ভারতজুড়ে মুক্তি পায় বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’। কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির এই সিনেমার জন্য শেষ সময়ে এসে মুক্তি পেছাতে বাধ্য হলো ‘জার্সি’ টিম। এক সপ্তাহ পিছিয়ে মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে ২২ এপ্রিল।
এদিকে ‘পুষ্পা’ ঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বক্স অফিস কাঁপায় ‘আরআরআর’। জুনিয়র এনটিআর, রামচরণদের সিনেমা দেখতে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন ভারতীয় দর্শকেরা। একই চিত্র ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমারও। ‘আরআরআর’-এর পর বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে কন্নড় তারকা যশ অভিনীত সিনেমাটি। মুক্তির প্রথম দিনই এই সিনেমা আয় করে ১৩৪ কোটি রুপির বেশি। প্রশান্ত নীল পরিচালিত ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ হিন্দি, কন্নড়, তেলুগু, তামিল, মালয়ালম—মোট পাঁচটি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। হিন্দি বলয়ে এর উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বিশ্বব্যাপী ১ হাজারের বেশি স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে ‘কেজিএফ’।
অথচ ভারতীয় সিনেমা বলতে এক সময় ধরে নেওয়া হতো বলিউডকেই। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই ধারণা পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণ ভারত। বিশেষ করে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ও কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে সারা ভারত ছাড়াও বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অনেক সময় বলিউডের চেয়ে বেশি দাপট দেখাচ্ছে দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলো। আর এসব সম্ভব হচ্ছে প্রভাস, রামচরণ, আল্লু অর্জুন, মহেশ বাবু থেকে শুরু করে কন্নড় অভিনেতা যশে ভর করে। বলিউডের অনেক পরিচালক-প্রযোজকও এখন এই অভিনেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা শুধুমাত্র বড় স্ক্রিনই দখল করেনি বরং মহামারির এই সময়ে গত দুই বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আধিপত্য দেখিয়েছে। এটি চলতি ২০২২ সালে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং বলিউডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র ও বাজার বিশ্লেষকেরা। এ ক্ষেত্রে কেবল নির্মাণ ধরন নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন ধাঁচের বিপণন নীতিও। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ দর্শনে বিশ্বাসী। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি এসএস রাজামৌলি ও অন্যান্য বড় চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অভিনেতারা মিলে এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তা হলো তাঁদের নিজ নিজ চলচ্চিত্রের মুক্তির তারিখ পর্যায়ক্রমে থাকবে। অর্থাৎ, কেউ কারও ব্যবসায় ভাগ বসাতে রাজি নয়! বরং একে অন্যের সহায়ক হয়ে উঠছে দক্ষিণী সিনেমাগুলো। ‘আরআরআর’ থেকে শুরু করে ‘রাধে শ্যাম’ এবং আরও কিছু ছবির নির্মাতা একই সময়ে এমনকি একই দিনে তাঁদের বহুল কাঙ্ক্ষিত সিনেমার মুক্তির পর্যায়ক্রমিক তারিখ ঘোষণা করেছিলেন! আঞ্চলিক সিনেমার ক্ষেত্রে ‘এক সঙ্গে মিলে আমরা অনেক কিছু করতে পারি’ এবং ‘সংহতি ছাড়া স্থিতিশীলতা নেই’ নীতিতে চলছেন দক্ষিণী সিনেমার সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণের প্রথমসারির অভিনয় শিল্পীরা মনে করেন, দক্ষিণের সিনেমার গল্প বলার একটি অনন্য মাধ্যম রয়েছে। তাঁদের সিনেমা দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়। কেবল গল্প নয়, শীর্ষস্থানীয় অভিনয় শিল্পীদের কাস্ট করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমন নয় যে শুধু তারকার জোরে ছবি চলে। বরং মাথায় থাকে, ‘কনটেন্ট ইজ কিং’। আর মূল জায়গায় মনোযোগ দেওয়াতেই প্রভাস, রামচরণ, জুনিয়র এনটিআর, থালাপাতি বিজয়, ধানুশ, দুলকার সালমান, আল্লু অর্জুন ও মহেশ বাবুর মতো তারকারা এখন আর আঞ্চলিক গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই। বরং তাঁরা সর্বভারতীয় তারকা হয়ে উঠছেন ক্রমেই।
অন্যদিকে দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে লড়াইয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ছে বলিউড। সম্প্রতি বলিউড সুপারস্টার সালমান খান দক্ষিণী সিনেমার বাজার দখল নিয়ে বলেন, ‘বলিউডে আরও বেশি করে নায়ককেন্দ্রিক ও লার্জার দ্যান লাইফ ঘরানার সিনেমা তৈরি করা উচিত। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি সব সময়েই এই ধারণায় বিশ্বাসী। দর্শকদের একটা বড় অংশ এটাই দেখতে চায়। বলিউডে এক-দু’জন ছাড়া এ রকম সিনেমা কেউ বানায় না। আমাদের উচিত এখন থেকে আরও বেশি করে এমন সিনেমা তৈরি করা।’ দক্ষিণী সিনেমার প্রশংসা করে ভাইজান আরও বলেন, ‘সেলিম-জাভেদদের সময়ে এই ধরনের ছবি তৈরি হতো। তবে এখন দক্ষিণী পরিচালকরা সেটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। দক্ষিণী সিনেমার অনুরাগীদের সংখ্যা প্রচুর। ওদের নির্মাণের আলাদা মেজাজ রয়েছে স্টাইলই আলাদা। দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাহিনিকারও ভীষণ পরিশ্রম করেন। স্বল্প বাজেটের সিনেমায়ও অনেক শ্রম দেন। আর দর্শকেরাও দেখতে যান।’
চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের অনেকে মনে করেন, বলিউডের সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সত্যিই আত্মদর্শন প্রয়োজন। চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলিই কেবল নয়, প্রচার কৌশলেও পরিবর্তন আনা জরুরি। এখনই নড়েচড়ে না বসলে অদূর ভবিষ্যতে বলিউডকে খুব বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বলেও মনে করেন অনেকে।
সব মিলিয়ে বেশ গ্যাঁড়াকলেই আছে বলিউড। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি এখনই নিজেদের ভুল শোধরানোয় মনোযোগী না হয় বলিউড, তবে অদূর ভবিষ্যতে রকিরাই দখল করে নিতে পারে মুম্বাই। কে জানে, সালমান-শাহরুখের বদলে তখন যশ-আল্লুরাই বলিউডের মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেন কি না!
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, পিংকভিলা, দ্য নিউজ মিনিট
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
কেজিএফ-এর দ্বিতীয় পর্বে এখন তোলপাড় ভারত। ছবিটির গল্পে দেখা যায়, কর্ণাটক থেকে বোম্বে এসে ‘রকি’ হয়ে ওঠে মুকুটহীন সম্রাট। বোম্বে হাতের মুঠোয় নেওয়ার পরই রকি চাইতে থাকে—‘দুনিয়া’!
ভারতের বলিউডেও কী সেই ঘটনাই ঘটতে চলেছে? অন্তত চলতি বছরের শুরু থেকে হিসাব করলে বিষয়টা তেমনই দাঁড়ায়। এক কথায়, দক্ষিণী সিনেমায় কাঁপছে বলিউড। অধুনা মুম্বাই (আগের বোম্বে) এখন ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে পুষ্পা বা রকিদের ছাতার নিচে। অন্যদিকে ‘ভয় পেয়ে’ সিনেমার মুক্তি পেছাতে হচ্ছে বলিউডের শহীদ কাপুরের মতো নায়কদের। সেটিও আবার কিনা দক্ষিণেরই সিনেমার রিমেক!
ফলে প্রশ্নটা উঠেই যাচ্ছে যে, বলিউড তার এত দিনের সাম্রাজ্য হারাতে বসল কি না? এই প্রশ্নের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’। এই এক সিনেমাতেই যেন বলিউডের হিন্দি ঘরানার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পুরো ব্যবসা কাঠামো শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেল। যদিও ভারতে দক্ষিণী সিনেমার দাপট নতুন নয়। জনপ্রিয়তা ছাড়িয়েছে দেশের গণ্ডিও। তবে ‘বাহুবলী’ থেকে শুরু করে সবশেষ ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ পর্যন্ত যেভাবে বক্স অফিস কাঁপাচ্ছেন প্রভাস, রামচরণ, আল্লু অর্জুন ও যশরা, তাতে অনেকেই মনে করছেন বলিউড রাজত্বের দিন ফুরোল বলে। তবে কি খান-কাপুরদের একচ্ছত্র রাজত্বের অবসান হবে পুষ্পা-রকিদের হাতেই?
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দক্ষিণী নতুন সিনেমার কারণে হরহামেশা নিজেদের ছবির মুক্তির তারিখ পেছাতে বাধ্য হচ্ছে বলিউড। সম্প্রতি এমন নজির ভূরি ভূরি। বিগ বাজেটের দক্ষিণী সিনেমা মুক্তির দিনক্ষণ এগিয়ে আসলেই যেন হৃৎকম্পন শুরু হয় বলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের। সবশেষ বলিউডের মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘জার্সি’। শহীদ কাপুর ও ম্রুনাল ঠাকুর অভিনীত এই সিনেমা বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৪ এপ্রিল মুক্তি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ফের বাঁধ সাধল সেই দক্ষিণী সিনেমা! এদিন ভারতজুড়ে মুক্তি পায় বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’। কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির এই সিনেমার জন্য শেষ সময়ে এসে মুক্তি পেছাতে বাধ্য হলো ‘জার্সি’ টিম। এক সপ্তাহ পিছিয়ে মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে ২২ এপ্রিল।
এদিকে ‘পুষ্পা’ ঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বক্স অফিস কাঁপায় ‘আরআরআর’। জুনিয়র এনটিআর, রামচরণদের সিনেমা দেখতে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন ভারতীয় দর্শকেরা। একই চিত্র ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ সিনেমারও। ‘আরআরআর’-এর পর বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে কন্নড় তারকা যশ অভিনীত সিনেমাটি। মুক্তির প্রথম দিনই এই সিনেমা আয় করে ১৩৪ কোটি রুপির বেশি। প্রশান্ত নীল পরিচালিত ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ হিন্দি, কন্নড়, তেলুগু, তামিল, মালয়ালম—মোট পাঁচটি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। হিন্দি বলয়ে এর উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বিশ্বব্যাপী ১ হাজারের বেশি স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে ‘কেজিএফ’।
অথচ ভারতীয় সিনেমা বলতে এক সময় ধরে নেওয়া হতো বলিউডকেই। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই ধারণা পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণ ভারত। বিশেষ করে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ও কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে সারা ভারত ছাড়াও বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অনেক সময় বলিউডের চেয়ে বেশি দাপট দেখাচ্ছে দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলো। আর এসব সম্ভব হচ্ছে প্রভাস, রামচরণ, আল্লু অর্জুন, মহেশ বাবু থেকে শুরু করে কন্নড় অভিনেতা যশে ভর করে। বলিউডের অনেক পরিচালক-প্রযোজকও এখন এই অভিনেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা শুধুমাত্র বড় স্ক্রিনই দখল করেনি বরং মহামারির এই সময়ে গত দুই বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও আধিপত্য দেখিয়েছে। এটি চলতি ২০২২ সালে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং বলিউডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র ও বাজার বিশ্লেষকেরা। এ ক্ষেত্রে কেবল নির্মাণ ধরন নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন ধাঁচের বিপণন নীতিও। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ দর্শনে বিশ্বাসী। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি এসএস রাজামৌলি ও অন্যান্য বড় চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অভিনেতারা মিলে এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তা হলো তাঁদের নিজ নিজ চলচ্চিত্রের মুক্তির তারিখ পর্যায়ক্রমে থাকবে। অর্থাৎ, কেউ কারও ব্যবসায় ভাগ বসাতে রাজি নয়! বরং একে অন্যের সহায়ক হয়ে উঠছে দক্ষিণী সিনেমাগুলো। ‘আরআরআর’ থেকে শুরু করে ‘রাধে শ্যাম’ এবং আরও কিছু ছবির নির্মাতা একই সময়ে এমনকি একই দিনে তাঁদের বহুল কাঙ্ক্ষিত সিনেমার মুক্তির পর্যায়ক্রমিক তারিখ ঘোষণা করেছিলেন! আঞ্চলিক সিনেমার ক্ষেত্রে ‘এক সঙ্গে মিলে আমরা অনেক কিছু করতে পারি’ এবং ‘সংহতি ছাড়া স্থিতিশীলতা নেই’ নীতিতে চলছেন দক্ষিণী সিনেমার সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণের প্রথমসারির অভিনয় শিল্পীরা মনে করেন, দক্ষিণের সিনেমার গল্প বলার একটি অনন্য মাধ্যম রয়েছে। তাঁদের সিনেমা দর্শকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়। কেবল গল্প নয়, শীর্ষস্থানীয় অভিনয় শিল্পীদের কাস্ট করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমন নয় যে শুধু তারকার জোরে ছবি চলে। বরং মাথায় থাকে, ‘কনটেন্ট ইজ কিং’। আর মূল জায়গায় মনোযোগ দেওয়াতেই প্রভাস, রামচরণ, জুনিয়র এনটিআর, থালাপাতি বিজয়, ধানুশ, দুলকার সালমান, আল্লু অর্জুন ও মহেশ বাবুর মতো তারকারা এখন আর আঞ্চলিক গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই। বরং তাঁরা সর্বভারতীয় তারকা হয়ে উঠছেন ক্রমেই।
অন্যদিকে দক্ষিণী সিনেমার সঙ্গে লড়াইয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ছে বলিউড। সম্প্রতি বলিউড সুপারস্টার সালমান খান দক্ষিণী সিনেমার বাজার দখল নিয়ে বলেন, ‘বলিউডে আরও বেশি করে নায়ককেন্দ্রিক ও লার্জার দ্যান লাইফ ঘরানার সিনেমা তৈরি করা উচিত। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি সব সময়েই এই ধারণায় বিশ্বাসী। দর্শকদের একটা বড় অংশ এটাই দেখতে চায়। বলিউডে এক-দু’জন ছাড়া এ রকম সিনেমা কেউ বানায় না। আমাদের উচিত এখন থেকে আরও বেশি করে এমন সিনেমা তৈরি করা।’ দক্ষিণী সিনেমার প্রশংসা করে ভাইজান আরও বলেন, ‘সেলিম-জাভেদদের সময়ে এই ধরনের ছবি তৈরি হতো। তবে এখন দক্ষিণী পরিচালকরা সেটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। দক্ষিণী সিনেমার অনুরাগীদের সংখ্যা প্রচুর। ওদের নির্মাণের আলাদা মেজাজ রয়েছে স্টাইলই আলাদা। দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাহিনিকারও ভীষণ পরিশ্রম করেন। স্বল্প বাজেটের সিনেমায়ও অনেক শ্রম দেন। আর দর্শকেরাও দেখতে যান।’
চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের অনেকে মনে করেন, বলিউডের সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সত্যিই আত্মদর্শন প্রয়োজন। চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলিই কেবল নয়, প্রচার কৌশলেও পরিবর্তন আনা জরুরি। এখনই নড়েচড়ে না বসলে অদূর ভবিষ্যতে বলিউডকে খুব বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বলেও মনে করেন অনেকে।
সব মিলিয়ে বেশ গ্যাঁড়াকলেই আছে বলিউড। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি এখনই নিজেদের ভুল শোধরানোয় মনোযোগী না হয় বলিউড, তবে অদূর ভবিষ্যতে রকিরাই দখল করে নিতে পারে মুম্বাই। কে জানে, সালমান-শাহরুখের বদলে তখন যশ-আল্লুরাই বলিউডের মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেন কি না!
তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, পিংকভিলা, দ্য নিউজ মিনিট
এই সম্পর্কিত পড়ুন:
আগামী ১৫ নভেম্বর মেক্সিকোতে শুরু হচ্ছে ‘মিস ইউনিভার্স ২০২৪ ’। এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ আনিকা আলম।
১০ ঘণ্টা আগেনয়নতারার জীবনকাহিনি নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছে নেটফ্লিক্স। ‘নয়নতারা: বিয়ন্ড দ্য ফেইরি টেল’ নামের তথ্যচিত্রটি নয়নতারার জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তি পাবে আগামী ১৮ নভেম্বর।
১২ ঘণ্টা আগেকয়েক মাস আগে মুম্বাইয়ের হাজী আলীর দরগা সংস্কারের জন্য প্রায় দেড় কোটি রুপি দান করেছিলেন অক্ষয় কুমার। এবার তিনি এগিয়ে এলেন অযোধ্যার রাম মন্দিরের ১২০০ হনুমানদের সাহায্যে। দিয়েছেন এক কোটি রুপি।
১৪ ঘণ্টা আগেসুড়ঙ্গ হিট হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, সিনেমার যাত্রাটা দীর্ঘ হবে নিশোর। তমাও নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। সুড়ঙ্গ মুক্তির পর অনেকটা আড়ালেই চলে যান তাঁরা দুজন।
১৪ ঘণ্টা আগে