Ajker Patrika

বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব, সতর্ক থাকবেন যেভাবে

ইশতিয়াক হাসান
বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব, সতর্ক থাকবেন যেভাবে

ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এবার। কিছু কিছু জায়গায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো পানিবন্দী বহু মানুষ। বন্যায় মানুষকে যে সমস্যাগুলোতে পড়তে হয় তার মধ্যে প্রথমেই আসে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়া, খাবার সংকট, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি। তবে এর পাশাপাশি বন্যার কারণে আরও কিছু সংকটে পড়তে হয় মানুষকে। এর একটি হলো সাপের উপদ্রব। 

বন্যার সময় মানুষের ঘর-বাড়িতে আশ্রয় নেয় অনেক সাপ। তাই সতর্ক না থাকলে সাপের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকাতে  সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। বন্যায় সাপের উপদ্রবের কারণ, এ সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যানের পাশাপাশি এ বিষয়ে কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত তাই থাকছে লেখাটিতে।

কিছু পরিসংখ্যান
শুরুতে বরং দেশের বন্যা উপদ্রুত দুটি জেলায় সাপের কামড় খেয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের বিষয়ে সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। 

দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত কয়েক দিন বরং অবনতি হয়েছে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতির। এখানে সাপের কামড় খাওয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়। গত ১৫ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনে সাপের কামড় খেয়ে ৭৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন শুধু লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। এদের ১২ জন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহমদ কবির।

এদিকে নোয়াখালীতে গত কিছু দিন বন্যা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হলেও অন্তত দুই মাস আগে থেকেই এখানকার কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।  এ মাসের অর্থাৎ আগস্টের ১ তারিখ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত শুধু নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সাপের কামড় খেয়ে ৩৫৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দীন। এদের মধ্যে ৭ জন বিষধর সাপের কামড় খান। দুজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

কেন সাপের কামড় খাওয়ার ঝুঁকি বেশি এখন
খেত-খামারসহ নিচু জায়গায় ঝোপ-জঙ্গলে অনেক সাপ বাস করে। এসব জায়গার মাটির গর্ত, গাছের গুঁড়ির গর্তের পাশাপাশি বাড়ির পুরোনো প্রাচীরের কোনো গর্তেও থাকতে পারে সাপের আস্তানা। বন্যায় এসব সাপের বাসস্থান তলিয়ে যায়। এদিকে মানুষের বসতি তুলনামূলক উঁচু জায়গায় থাকে। আর নিজের আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ার কারণে সাপ অনেকটা বাধ্য হয়েই নতুন আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের বসতঘরে ঢুকে পড়ে। তখন একটু অসতর্ক হলেই মানুষ সাপের কামড় খায়। এদিকে এ সময় পানিতে স্রোত থাকলে সাপ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। 

আবার বন্যার পানি যখন কমতে থাকে ওই সময়টাও বেশ বিপজ্জনক। কারণ তখন সাপ নিজের মূল আবাস বা গর্তে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সাবধান হলে বিষধর এই সরীসৃপের কামড় খাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

সাপের কামড় এড়াতে সতর্কতা
বন্যার সময় সাপের কামড়ের ব্যাপারে সাধারণ যে সব সতর্কতা থাকে তা মানা মুশকিল। তবে এর মধ্যেও অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, মশারি ভালোভাবে গুঁজে নিতে হবে। তাহলে সাপ ভেতরে ঢুকতে পারবে না। 
শুধু ঘর-বাড়ি নয় বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্রেও সতর্কতা নেওয়া জরুরি। দুই তলা কিংবা তিনতলায় থাকলেও সাবধানতা মানতে হবে। কারণ সেখানেও আশ্রয় নেওয়া অসম্ভব নয় সাপের পক্ষে।
পানিতে হাঁটার সময় হাতে একটা লাঠি রাখতে পারেন।
ঘরে ব্যবহারের সব জিনিস যেমন পাতিল, জগ, পট, বালতি এসবে হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
জুতো পড়ার সময় সাবধানতা জরুরি। কারণ এর ভেতরে সাপও আশ্রয় নিতে পারে।
তেমনি শুকনো জায়গায় কাঠ বা কোনো জ্বালানি থাকলে এগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এগুলোর মধ্যে সাপ আশ্রয় নেওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
এ ছাড়া ঘরে ছোট বাচ্চা থাকলে তাকেও সতর্কভাবে রাখতে হবে।

বন্যার পানিতে হাঁটা-চলার সময়ও সতর্কতা জরুরি। ছবি: আজকের পত্রিকাবিশেষজ্ঞরা কী বলেন
দীর্ঘদিন সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও লেখক সরওয়ার পাঠান। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন মানুষের মতো সাপও বিপদে। এ সময় নির্বিষ ও বিষধর সব ধরনের সাপ মানুষের বাড়িতে উঠে আসতে পারে। গোখরো, কাল কেউটে, রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া আছে এসব বিষধর সাপের তালিকায়। আতঙ্কিত না হয়ে এখন প্রয়োজন সতর্কতা। ঘুমানোর সময় পাশে টর্চ বা আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। তেমনি অন্ধকারে হাঁটার সময়ও সঙ্গে টর্চ রাখতে হবে।

পানিতে চলার সময় সতর্কতা থাকতে হবে। সাপ সাঁতার কাটলে পুরো শরীর দেখা যায়। তখন সতর্ক থাকা সহজ। স্থির থাকলেও ঘাড়-মাথা দেখা যায়। ঘরে সাপ ঢোকার সময় হালকা সাঁতার কাটে। ওই সময়ও এদের দেহের ওপরের অংশ দেখে সতর্ক হতে পারবেন।

এদিকে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান মনিরুল খান বলেন, ব্লিচিং পাউডার অপছন্দ করে সাপসহ অনেক প্রাণীই। এটি ছিটিয়ে দিলে কিছুটা হলেও কাজ হতে পারে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সতর্ক থাকা। আর সতর্ক থাকার পরও যদি কোনো কারণে সাপে কাটে তাহলে ওঝার কাছে না নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

এ লেখাটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আজকের পত্রিকার নোয়াখালী ও  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত