গ্রামেও কমে যাচ্ছে কাক! কারণ কী

তামীম আদনান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) 
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ২৩
Thumbnail image

শহরে কাক কমে যাচ্ছে বলে অনুযোগ করেন অনেক মানুষই। তবে ইদানীং গ্রামেও কাকের বিচরণ কমেছে। শহর থেকে গ্রাম সবখানে ছিল যার রাজত্ব, হঠাৎ কী হলো তার? যেখানে কবি জীবনানন্দ দাস ভোরের কাক হয়ে বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তবে কি বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই অতি পরিচিত পাখিটি? 

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিটি গ্রামে কাকের বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বৈদ্যুতিক তারে, বড় বড় গাছ ও টিনের চালায় হরহামেশাই দেখা মিলতো তার। এর যন্ত্রণায় রোদে খাবার শুকাতে দিতে পারত না মানুষ। কিন্তু বছর খানিক কিংবা তার কিছু বেশি সময় ধরে উপজেলার গ্রামগুলোতে অনেকটাই কমে গেছে কাকের বিচরণ। 

কালো রং ও কর্কশ গলার কারণে অনেকের অপছন্দের এই পাখিটি ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পরিবেশে। দেখা যেত আবর্জনার স্তূপে দল বেঁধে খাবার খেতে। যার ফলে আবর্জনার আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াতো না। অনেকের অপছন্দের এই পাখিটি শহুরে বাস্তুতন্ত্র এবং সাংস্কৃতিক চেতনায় একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছিল। তবে কাকের বিচরণ উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমার কারণে প্রাকৃতিক চক্র বা বাস্তুসংস্থান বিপন্ন হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন গবেষক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। 

শহরের মতো গ্রামেও কেন কাক কমছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এস আই সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু কাক নয়, আরও অনেক পাখি কমে গেছে। এর মধ্যে দোয়েল, কোকিল, শালিক, বাবুইসহ আরও অনেক পাখি আছে। মূলত বাসস্থান ও খাদ্যের সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণে এগুলো কমে আসছে বলে আমরা ধারণা করছি। মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি প্রভাব এর ওপর পড়ছে। আমরা গবেষণা করছি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে কাকও আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কাক আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। তাই এই পাখি টিকিয়ে রাখতে আমাদের পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে হবে, পাশাপাশি নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্যের ব্যবস্থা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ চক্র বা বাস্তুসংস্থান বিপন্ন হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসবে।’ 

জীবনানন্দ দাস ভোরের কাক হয়ে বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেনস্থানীয় আলোকচিত্রী ও পাখিপ্রেমী তন্ময় তাহসান সবুজ জানান, তিনি পাখিদের ছবি তুলতে ছুটে বেড়ান এই গ্রাম থেকে সেই গ্রাম। তিনিও আঁচ করেছেন কাকের সংখ্যা কমেছে বেশ। তার চোখেও খুব একটা দেখা মিলছে না এই পাখি। 

কুষ্টিয়ার পরিবেশকর্মী ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী সাহাব উদ্দিন মিলন বলেন, বড় বড় গাছপালা উজাড় হয়ে যাওয়ায় কাক বংশবিস্তারের পরিবেশ হারিয়েছে, যার কারণে এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। 

গ্রামেও কেন কাকের বিচরণ কমে যাচ্ছে এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাকের বাসস্থান ও খাদ্যের সংকটের পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কাটা এবং মোবাইল টাওয়ারের মতো প্রযুক্তিগত স্থাপনার জন্য কাক তার প্রাকৃতিক পরিবেশ হারাচ্ছে। যার জন্য তাদের বংশ বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে। ফলে দিনে দিনে এর সংখ্যা কমে আসছে। 

দৌলতপুরের পদ্মা নদীর পাড় একটি কাকতাঁর এলাকায় কী পরিমাণে কাক কমেছে এর সংখ্যা বলতে না পারলেও কাকের যে বিচরণ কমে আসছে তা তারও চোখে পড়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। 

পরিবেশের বন্ধু কাক রক্ষায় তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে আবুবকর বলেন, ‘আমাদের সবার প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং ঘরবাড়ি তৈরিতে সচেতন হতে হরে। এদের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে তৈরির জন্য ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদি মৌজা এলাকায় জমির প্রস্তাব দিয়েছি অনেক আগে। অনুমতি পেলে কার্যক্রম শুরু করব। এতে অনেক পশুপাখির নিরাপদ বাসস্থান তৈরি হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত