অনলাইন ডেস্ক
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া দিন দিন চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করা বনাঞ্চলগুলোরও ক্ষয় হচ্ছে। বাংলাদেশেই শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। গত ২৭ বছরে বাংলাদেশ তার শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চলের ১৯ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশই এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ। মিয়ানমারে ১৯, ভারতে ১৭ ও থাইল্যান্ডে রয়েছে ১৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অবস্থা দিন দিন বেশ নাজুক হয়ে উঠছে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিসর ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই শুধু ১৯ শতাংশ কমেছে।
শুধু এই মানদণ্ডেই নয়, যত দিন যাচ্ছে এশিয়ার আবহাওয়া ও জলবায়ু ততই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এই গবেষণার প্রধান সমন্বয়ক ছিল ডব্লিউএমও। এতে বলা হয়েছে, চরম আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে ২০২০ সালে এশিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। বহু অঞ্চলের সার্বিক অবকাঠামো ও বাস্তুতন্ত্র একেবারে ভেঙে পড়েছে। আর এসব কারণে এই গোটা অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।
এই গবেষণা এমন এক সময় পরিচালনা করা হয়েছে, যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত। এই মহাদুর্যোগে আবার একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে এশিয়ার দেশগুলোয়। সঙ্গে ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। এর মধ্যে রয়েছে হিমবাহের গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো।
প্রতিবেদনে হিমালয় থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চল কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ শহর থেকে মরুভূমি এলাকাগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ডব্লিউএমও মহাসচিব অধ্যাপক পেটেরি টালাস বলেন, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ, বিশেষত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, খরার ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের ওপর। এতে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের অভিবাসী, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি। আর এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এই বিষয়গুলো সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ডব্লিউএমওর সমন্বয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় যে সংস্থাগুলো জড়িত ছিল, তার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশন এসকাপসহ অন্য সংস্থাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আবহাওয়া দপ্তরগুলো। একই সঙ্গে জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের গবেষক দলও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের নীতিনির্ধারণী মহল জলবায়ু পরিবর্তন ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া নিয়ে কী ভাবছে, তা তুলে ধরার জন্য এবং আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এর আগে আগে তাঁদের এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি। এ বিষয়ে এসকাপের নির্বাহী সচিব আরমিডা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সে লক্ষ্যের মাত্র ১০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের প্রবণতার। এটি পুরোপুরি দুর্যোগে টিকে থাকার সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর এশিয়ায় এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। ১৯৮১-২০১০ সময়ের গড় তাপমাত্রার চেয়ে এ তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। বেশ কয়েকটি তাপপ্রবাহ এই সময়ে বয়ে গেছে এশিয়ার ওপর দিয়ে। এর মধ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের আওতাধীন অঞ্চল ভারকোয়ানস্কে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কথা উল্লেখ করা যায়, যা ছিল আর্কটিক অঞ্চলের উত্তরে যেকোনো অঞ্চলের জানা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গত বছর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ছিল খুবই অস্বাভাবিক। এর সঙ্গে ছিল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। সব মিলিয়ে গোটা অঞ্চলে একের পর এক বন্যা, ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যা প্রচুর প্রাণহানির কারণ হয়েছে। বহু দেশে প্রচুর মানুষকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। সমুদ্র ও সমুদ্র উপরস্থিত তাপমাত্রায় বড় হেরফের হয়েছে এই সময়, যা সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে এনেছে বড় বদল। ২০২০ সালে ভারত, প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরের গড় তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এটা অবশ্য গোটা বিশ্বেই হয়েছে। তবে এশিয়ায় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যেমন আরব সাগরের তুলনায় এ অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে তিনগুণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কতটা, তা বোঝার অন্যতম বড় মানদণ্ড হচ্ছে সাগরের বরফের উচ্চতা। কারণ, এটি শুধু ওই নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বের জলবায়ুর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গত বছর আর্কটিক সাগরের বরফের উচ্চতা ছিল ১৯৭৯ সালের পর সর্বনিম্ন। এর প্রভাব পড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ওপরও। ১৯৯০-এর দশক থেকে প্রতি বছর গড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার করে বাড়ছে। বৈশ্বিক এই গড়ের চেয়ে এই অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
সমুদ্রের বরফ গলার মতো করে একইভাবে গলেছে হিমবাহ। এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে ১ লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত হিমবাহ, যার কেন্দ্র বলা যায় তিব্বত ও হিমালয়। মেরু অঞ্চলের বাইরে এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি বরফ, যা এশিয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস। গত বেশ কয়েক বছর ধরে গলে যাচ্ছে এসব অঞ্চলের হিমবাহ। এর গতি এখন যা, তাতে এই অঞ্চলের মোট হিমবাহের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ আগামী ২০৫০ সারের মধ্যে গলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমও-এর গবেষণা প্রতিবেদনে, যা এই অঞ্চলের অন্তত ৭৫ কোটি মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে।
এ তো গেল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হওয়া সরাসরি প্রভাবের বিষয়টি। রয়েছে আবহাওয়াগত পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সংকট। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে শুধু বন্যায় এশিয়ার ৫ কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ। গত দুই দশকের তুলনায় গড়ে ক্ষতি কমে এলেও এখনো অনেক কিছু করার আছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণে প্রতি বছর এই অঞ্চলগুলোয় বছরে গড়ে কয়েক শ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আওতাধীন সংস্থা এসকাপ। উদাহরণ হিসেবে তা চীনে এই ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮০০ কোটি, ভারতে ৮ হাজার ৭০০ কোটি ও জাপানে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কথা উল্লেখ করে। গড়ে প্রতিটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশই চলে যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
এই যাবতীয় সংকট সবচেয়ে বেশি যেটি বাড়িয়ে তুলছে, তা হলো খাদ্য ও পুষ্টি সংকট। বৈরী আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পথ দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৪ কোটি ৮৮ লাখ, দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ এবং পশ্চিম এশিয়ার ৪ কোটি ২৩ লাখ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অপুষ্ট জনসংখ্যার অর্ধেকই এশিয়ার বাসিন্দা।
এই পুরো সময়ে একদিকে কোভিড মহামারি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এশিয়াকে বারবার পর্যুদস্ত করেছে। ২০২০ সালের মে মাসে ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে এই অঞ্চলের এ যাবৎকালে হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এমন বহু ঝড়কে বুক দিয়ে ঠেকাতে ঠেকাতে সুন্দরবনও তার শক্তি হারাচ্ছে ক্রমশ। এর সঙ্গে রয়েছে মানবসৃষ্ট আরও নানা কারণ। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশেষত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সতর্ক হয়নি বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হ্রাসের হার বেড়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভুটান, চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম তাদের বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ তো বটেই মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কমেছে বনাঞ্চল।
এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, জলবায়ু খাতে বিনিয়োগের প্রতিদান অনেক বড়। বিশেষত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া দিন দিন চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করা বনাঞ্চলগুলোরও ক্ষয় হচ্ছে। বাংলাদেশেই শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। গত ২৭ বছরে বাংলাদেশ তার শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চলের ১৯ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশই এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ। মিয়ানমারে ১৯, ভারতে ১৭ ও থাইল্যান্ডে রয়েছে ১৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অবস্থা দিন দিন বেশ নাজুক হয়ে উঠছে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিসর ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই শুধু ১৯ শতাংশ কমেছে।
শুধু এই মানদণ্ডেই নয়, যত দিন যাচ্ছে এশিয়ার আবহাওয়া ও জলবায়ু ততই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এই গবেষণার প্রধান সমন্বয়ক ছিল ডব্লিউএমও। এতে বলা হয়েছে, চরম আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে ২০২০ সালে এশিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। বহু অঞ্চলের সার্বিক অবকাঠামো ও বাস্তুতন্ত্র একেবারে ভেঙে পড়েছে। আর এসব কারণে এই গোটা অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।
এই গবেষণা এমন এক সময় পরিচালনা করা হয়েছে, যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত। এই মহাদুর্যোগে আবার একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে এশিয়ার দেশগুলোয়। সঙ্গে ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। এর মধ্যে রয়েছে হিমবাহের গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো।
প্রতিবেদনে হিমালয় থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চল কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ শহর থেকে মরুভূমি এলাকাগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ডব্লিউএমও মহাসচিব অধ্যাপক পেটেরি টালাস বলেন, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ, বিশেষত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, খরার ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের ওপর। এতে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের অভিবাসী, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি। আর এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এই বিষয়গুলো সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ডব্লিউএমওর সমন্বয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় যে সংস্থাগুলো জড়িত ছিল, তার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশন এসকাপসহ অন্য সংস্থাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আবহাওয়া দপ্তরগুলো। একই সঙ্গে জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের গবেষক দলও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের নীতিনির্ধারণী মহল জলবায়ু পরিবর্তন ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া নিয়ে কী ভাবছে, তা তুলে ধরার জন্য এবং আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এর আগে আগে তাঁদের এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি। এ বিষয়ে এসকাপের নির্বাহী সচিব আরমিডা সালসিয়াহ আলিসজাহবানা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সে লক্ষ্যের মাত্র ১০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের প্রবণতার। এটি পুরোপুরি দুর্যোগে টিকে থাকার সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর এশিয়ায় এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। ১৯৮১-২০১০ সময়ের গড় তাপমাত্রার চেয়ে এ তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। বেশ কয়েকটি তাপপ্রবাহ এই সময়ে বয়ে গেছে এশিয়ার ওপর দিয়ে। এর মধ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের আওতাধীন অঞ্চল ভারকোয়ানস্কে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কথা উল্লেখ করা যায়, যা ছিল আর্কটিক অঞ্চলের উত্তরে যেকোনো অঞ্চলের জানা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গত বছর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ছিল খুবই অস্বাভাবিক। এর সঙ্গে ছিল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। সব মিলিয়ে গোটা অঞ্চলে একের পর এক বন্যা, ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যা প্রচুর প্রাণহানির কারণ হয়েছে। বহু দেশে প্রচুর মানুষকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। সমুদ্র ও সমুদ্র উপরস্থিত তাপমাত্রায় বড় হেরফের হয়েছে এই সময়, যা সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে এনেছে বড় বদল। ২০২০ সালে ভারত, প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরের গড় তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এটা অবশ্য গোটা বিশ্বেই হয়েছে। তবে এশিয়ায় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যেমন আরব সাগরের তুলনায় এ অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে তিনগুণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কতটা, তা বোঝার অন্যতম বড় মানদণ্ড হচ্ছে সাগরের বরফের উচ্চতা। কারণ, এটি শুধু ওই নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বের জলবায়ুর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গত বছর আর্কটিক সাগরের বরফের উচ্চতা ছিল ১৯৭৯ সালের পর সর্বনিম্ন। এর প্রভাব পড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ওপরও। ১৯৯০-এর দশক থেকে প্রতি বছর গড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার করে বাড়ছে। বৈশ্বিক এই গড়ের চেয়ে এই অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
সমুদ্রের বরফ গলার মতো করে একইভাবে গলেছে হিমবাহ। এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে ১ লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত হিমবাহ, যার কেন্দ্র বলা যায় তিব্বত ও হিমালয়। মেরু অঞ্চলের বাইরে এখানেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি বরফ, যা এশিয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস। গত বেশ কয়েক বছর ধরে গলে যাচ্ছে এসব অঞ্চলের হিমবাহ। এর গতি এখন যা, তাতে এই অঞ্চলের মোট হিমবাহের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ আগামী ২০৫০ সারের মধ্যে গলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমও-এর গবেষণা প্রতিবেদনে, যা এই অঞ্চলের অন্তত ৭৫ কোটি মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে।
এ তো গেল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হওয়া সরাসরি প্রভাবের বিষয়টি। রয়েছে আবহাওয়াগত পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সংকট। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে শুধু বন্যায় এশিয়ার ৫ কোটি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ৫ হাজারের বেশি মানুষ। গত দুই দশকের তুলনায় গড়ে ক্ষতি কমে এলেও এখনো অনেক কিছু করার আছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণে প্রতি বছর এই অঞ্চলগুলোয় বছরে গড়ে কয়েক শ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আওতাধীন সংস্থা এসকাপ। উদাহরণ হিসেবে তা চীনে এই ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮০০ কোটি, ভারতে ৮ হাজার ৭০০ কোটি ও জাপানে ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কথা উল্লেখ করে। গড়ে প্রতিটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশই চলে যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
এই যাবতীয় সংকট সবচেয়ে বেশি যেটি বাড়িয়ে তুলছে, তা হলো খাদ্য ও পুষ্টি সংকট। বৈরী আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পথ দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৪ কোটি ৮৮ লাখ, দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ এবং পশ্চিম এশিয়ার ৪ কোটি ২৩ লাখ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অপুষ্ট জনসংখ্যার অর্ধেকই এশিয়ার বাসিন্দা।
এই পুরো সময়ে একদিকে কোভিড মহামারি, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এশিয়াকে বারবার পর্যুদস্ত করেছে। ২০২০ সালের মে মাসে ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে এই অঞ্চলের এ যাবৎকালে হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এমন বহু ঝড়কে বুক দিয়ে ঠেকাতে ঠেকাতে সুন্দরবনও তার শক্তি হারাচ্ছে ক্রমশ। এর সঙ্গে রয়েছে মানবসৃষ্ট আরও নানা কারণ। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিশেষত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সতর্ক হয়নি বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হ্রাসের হার বেড়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভুটান, চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম তাদের বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ তো বটেই মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কমেছে বনাঞ্চল।
এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, জলবায়ু খাতে বিনিয়োগের প্রতিদান অনেক বড়। বিশেষত কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
পাঁচ বছর আগে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক জোট গড়ে তুলেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল ও রাসায়নিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, তা তাদের অপসারিত বর্জ্যের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।
১০ ঘণ্টা আগেঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক কমলেও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। বাতাসের মান সূচকে আজ ঢাকা দূষণের মাত্রা ১৮১, অবস্থান ষষ্ঠ। অন্যদিকে দুদিনের ব্যবধানে আবারও পাকিস্তানের লাহোর বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। এরপরে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এ ছাড়াও শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলিয়া ও ই
১৯ ঘণ্টা আগেভারতের রাজধানী দিল্লি এবং এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ আজও ভয়াবহ মাত্রায় রয়েছে। আজ বুধবার সকালে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা দিল্লি শহর, দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ার ফলে পরিবহন ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে। এর পরে আছে পাকিস্তানের শহর লাহোর...
২ দিন আগেভারতের রাজধানী দিল্লি এবং এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এটি চলতি মরসুমে সর্বোচ্চ এবং ‘অতি ভয়ানক’ পর্যায়ে রয়েছে।
৩ দিন আগে