Ajker Patrika

বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীদের এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে লবণাক্ততা: গবেষণা

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ২১
বাংলাদেশের গর্ভবতী নারীদের এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে লবণাক্ততা: গবেষণা

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছোট্ট জনাকীর্ণ এক ওয়ার্ডে শুয়ে আছেন প্রসূতি মা ও অন্য গর্ভবতী নারীরা। মাথার ওপর সশব্দে ঘুরছে বহু পুরোনো ফ্যান। এক ঘরেই ২০ জনের বেশি নারী রয়েছেন গাদাগাদি করে। মাঝে নেই কোনো পর্দা। খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডে গেলেই এমন চিত্র চোখে পড়বে।

ওয়ার্ডের এক শয্যায় আছেন ২৩ বছর বয়সী সুপ্রিয়া রায়। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম গর্ভাবস্থায় বেশ জটিলতা ছিল। সময়ের দুই মাস আগেই সন্তান প্রসব করতে হয়েছিল। তাই আমি এবারের সন্তান নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়েছে, ডাক্তার প্রস্রাবে প্রোটিন পেয়েছেন। তাই এবার আমাকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমার কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা শুরু করার ব্যবস্থা করতে হতে পারে বা সিজার করতে হতে পারে।’

সুপ্রিয়ার প্রি-এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা রয়েছে। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ থেকে বা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই কিছু নারীর মধ্যে এ ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়া পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ বা ৩৮ সপ্তাহ থেকেই এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও আগে থেকেও শুরু হতে পারে।

তবে সুপ্রিয়া একা নন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা দাকোপে আশঙ্কাজনক হারে গর্ভবতী নারীদের প্রি-এক্লাম্পসিয়া, এক্লাম্পসিয়া ও উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, খাওয়ার পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

পরিবেশগত মহামারিবিদ্যার গবেষক আনির খান বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। এটি গর্ভবতী নারীদের বিশেষ করে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। এতে নারীর গুরুতর মাথাব্যথা, অঙ্গহানি এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’

২০০৮ সালে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং খাবার পানির উৎস থেকে লবণ গ্রহণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন আনির খান।

২০১১ সালে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সঙ্গে দ্বিতীয় গবেষণা পরিচালনা করেন খান। এ গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, দাকোপের নারীদের মধ্যে লবণ গ্রহণের পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নিরাপদ মানের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিবেদনটি লবণ গ্রহণ এবং প্রি-এক্লাম্পসিয়া ও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির ঝুঁকির মধ্যে বেশ দৃঢ় সম্পর্ক নিশ্চিত করেছে।

দাকোপ দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু সংকটের প্রভাবের সামনের সারিতে রয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী রান্না, খাওয়ার পানি এবং গোসলের জন্য নদী, পুকুর এবং ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লবণাক্ত পানি প্রবেশের কারণে এই প্রাকৃতিক উৎসগুলো বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় দূষিত হচ্ছে।

হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সন্তোষ কুমার বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে তখন ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়, বাঁধ ভেঙে যায় ও পুরো এলাকা লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ মিঠাপানির অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলো খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবের মাত্রা এখন মাত্র ধরা পড়া শুরু করেছে।’

আনির খানের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা দাকোপের পানিতে লবণাক্ততা কমানোর জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বিপরীত অভিস্রবণ (রিভার্স অসমোসিস), বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভে পানি সংরক্ষণ। অ্যাকুইফার রিচার্জ বা ভূগর্ভে পানি সংরক্ষণ এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের পানি ভূগর্ভে পাঠিয়ে অ্যাকুইফারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, যা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করা হয়। এটি প্রাকৃতিকভাবেও ঘটে। আবার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কৃত্রিম উপায়ে করা হয়।

এই নতুন পদক্ষেপগুলো কার্যকর কি না তা দেখতে ২০১৯ সালে আবার দাকোপে ফিরে যান আনির খান। গবেষণার জন্য প্রায় ৭৪০ নারীর সাক্ষাৎকার নেন খান। স্থানীয়দের মধ্যে এখনো উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখেন তিনি। তবে কোভিডের স্বাস্থ্যবিধির কারণে সমীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। খান এখন ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের সঙ্গে একটি নতুন গবেষণার পরিকল্পনা করছেন। এতে পদক্ষেপগুলো বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে কি না তা মূল্যায়ন করা হবে।

এদিকে দাকোপে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করছেন ড. সন্তোষ কুমার। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ভবিষ্যতে এখানে লবণাক্ততার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এ অঞ্চলের সব নারী ও মেয়ে শিশুরা হুমকির মুখে আছে। নিরাপদ খাবার পানির অভাবে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে।’ 

প্রায় ২০ বছর ধরে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করছেন নির্মলা সরকার (৫৬)। প্রতিদিন তিনি দাকোপের বিভিন্ন গ্রামে সুপেয় পানি পান করার গুরুত্ব বোঝাতে দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত উচ্চ উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, এখানকার বেশির ভাগ মানুষ ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়।

দাকোপে প্রায় পাঁচ হাজার গর্ভবতী নারীকে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ ও সেবা দিয়েছেন নির্মলা সরকার। তিনি তাঁদের নিয়মিত চেকআপ করেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত সেশন করে থাকেন। এ সেশনে নারীরা স্বাস্থ্যগত যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

নির্মলা বলেন, ‘মূল সমস্যা হচ্ছে, সচেতনতার অভাব। গর্ভকালীন সঠিক যত্ন এবং নিরাপদ খাওয়ার পানি পানের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ালে স্বাস্থ্যগত উন্নতি করা সম্ভব হবে, যা সরাসরি মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি করবে।’ সহজে গ্রামে বিতরণ করা যায় এমন তথ্য ও উপকরণ তৈরি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনাগত শিশুর ওপরও প্রভাব ফেলে প্রি-এক্লাম্পসিয়া। আক্রান্ত মায়েদের গর্ভেই সন্তানের মৃত্যু ঘটার ঝুঁকি থাকে, সন্তান কম ওজনের হতে পারে বা ভ্রূণের বিকাশে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে। জন্মের আগেই অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তৈরি হয় এবং তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়।

দাকোপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে একটি ব্যস্ত বাজারে ছোট ভ্যানে করে খালি ব্যারেল ও কনটেইনার নিয়ে বসে লোকেরা। বেশ কয়েকটি দোকানে গ্যালনে করে পরিষ্কার ও ফিল্টার করা পানি বিক্রি করা হয়।

এখানে অনেক পরিবারই ফিল্টার করা পানি বা বড় পানির ট্যাংকি কেনার জন্য ঋণ নিয়ে থাকেন। বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা যায়, তবে এর জন্য বাসা বাড়িতে বড় ট্যাংকির প্রয়োজন। দাকোপে বেশির ভাগ পরিবারের জন্য এটি সম্ভব নয়। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে খড়ের চালা। বাংলাদেশ সরকার ওই অঞ্চলের স্কুল ও অন্যান্য ভবনের ছাদে ট্যাংকি স্থাপন করেছে। কিন্তু মানুষকে পানি সংগ্রহ করতে দূর-দূরান্তে যেতে হয় এবং লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

ড. সন্তোষ কুমার বলেন, ‘পরিষ্কার ও নিরাপদ সুপেয় পানি সবার মৌলিক অধিকার। কারওরই লবণাক্ত পানি পান করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নেওয়া উচিত না।’ এরপরও বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার শেষ সীমায় পৌঁছে যাওয়ায় দাকোপের পানি সংকট আরও বাড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে পারব না। তাই আমাদের অবশ্যই বিকল্প হিসেবে আরও টেকসই উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ সকালে তাপমাত্রা ১৬.৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আকাশ আজ বুধবার ভোর থেকে ছিল হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে হাড়কাঁপানো শীত পড়েনি।

আজ সারা দিন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত