ইশতিয়াক হাসান
সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।
সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।
এবারের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনকে ‘কপ অব দ্য ফিন্যান্স’ বা অর্থায়নের কপ বলা হলেও সেটি কেবল কাগজে-কলমেই ঠেকেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বার্ষিক ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ক্ষতিপূরণের যে দাবি জানিয়েছিল, সম্মেলনের ১১তম দিনেও সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। এমনকি বিগত বছরগুলোর ক্ষতিপূ
৭ ঘণ্টা আগেকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। বাতাসের মান সূচকে আজ ঢাকা দূষণের মাত্রা ১৯৫, যা অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে একদিন পরই আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এর পরে আছে পাকিস্তানের লাহোর। এ ছাড়া শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে ইজিপট ও চীন...
৮ ঘণ্টা আগেপাঁচ বছর আগে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক জোট গড়ে তুলেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল ও রাসায়নিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, তা তাদের অপসারিত বর্জ্যের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।
১ দিন আগেঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক কমলেও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। বাতাসের মান সূচকে আজ ঢাকা দূষণের মাত্রা ১৮১, অবস্থান ষষ্ঠ। অন্যদিকে দুদিনের ব্যবধানে আবারও পাকিস্তানের লাহোর বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। এরপরে আছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এ ছাড়াও শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলিয়া ও ই
১ দিন আগে