Ajker Patrika

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা প্রতিবেদন ২০২৪

পরিবেশের এত ক্ষতি দেখেনি বাংলাদেশ

  • দেশের উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৪ সাল।
  • গত বছর ৩৫ দিন টানা তাপপ্রবাহ চলে।
  • জলবায়ু নীতি গ্রহণের পরামর্শ বিজ্ঞানীদের।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ২৩: ৩৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৪ সাল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে গত বছরের এপ্রিলে তাপমাত্রা ছিল ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে টানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহ চলে। এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোয় এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, যা অতীতে দেখা যায়নি।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) আজ বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’ এই শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৭৫ বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সাল ছিল উষ্ণতম বছর।

বিশ্ব হিমবাহ দিবস (২১ মার্চ), বিশ্ব পানি দিবস (২২ মার্চ) এবং বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে (২৩ মার্চ) সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউএমও। সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতি গরম ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে গত বছর।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এই প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশের দুজন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে হারে ক্ষতি হচ্ছে, তা ঠেকাতে, জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ও জলবায়ুবিজ্ঞানী ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কম ক্ষতি করেও বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী, আবার বৈশ্বিক ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ফলে নিজের জনগণকে রক্ষায় নিজস্ব জলবায়ু নীতি থাকতে হবে।

বিশেষ করে ক্ষতিকর জ্বালানির পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই পথ খুঁজতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরি বনায়ন; দ্বিতীয়ত, মিঠাপানির উৎস সংরক্ষণ; তৃতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এর জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।

ডব্লিউএমওর প্রতিবেদন বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিবছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের তলদেশে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির ঘটনা এমন রেকর্ড ছাড়িয়েছে যে এর প্রভাব শত শত বছর, এমনকি হাজার বছরও বয়ে বেড়াতে হতে পারে।

এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ১০৫টি দেশ ও অঞ্চলের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে। প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও), শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। প্রতিবেদনটি তুলে ধরে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাপরিচালক ও আর্জেন্টিনার আবহাওয়াবিদ সেলেস্তে সাউলো বলেন, ২০২৪ সাল জুড়ে আমাদের মহাসাগরগুলো উষ্ণ হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে, সাগরের অম্লত্ব বেড়েছে। এই সময় বরফ আচ্ছাদিত এলাকাগুলো থেকে বরফ গলেছে উদ্বেগজনক হারে, হিমবাহ এখনো গলছে। এদিকে অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর পৃষ্ঠে ভাসমান বরফ কমে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। এ ছাড়া বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গোটা বিশ্বই ভুগেছে ভয়ংকরভাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত