ইনানী সৈকতে ভেসে এল আরও দুটি মৃত ডলফিন

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৫৫
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৪০

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে এল আরও দুটি মৃত ডলফিন। এর মধ্যে একটি ইরাবতী ও একটি ইন্দো প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিন বলে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

আজ শুক্রবার সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে দুটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ইনানী, হিমছড়ি, সোনারপাড়া ও সুগন্ধা পয়েন্টে তিনটি ডলফিন, একটি বিপন্ন পরপইস ও দুটি অলিভ রিডলি প্রজাতির মা কচ্ছপের মরদেহ ভেসে এসেছে। 

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তরিকুল ইসলাম জানান, আজ সকালে জেলেদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভেসে আসা ডলফিন দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। ইনানী সৈকতে আসা মরা ডলফিনটি ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এই প্রজাতির ডলফিন প্রথম ভেসে এসেছে। 

হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিনটির কঙ্কাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য বোরিতে হ্যাম্পব্যাকের কঙ্কাল সংরক্ষণ করা হবে। উদ্ধার করা ইন্দোপ্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাকের ওজন ২৪০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। তিনি বলেন, সোনারপাড়া সৈকতে আসা ইরাবতী ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। এটির ওজন ৭০ কেজি। দুটির নমুনা সংগ্রহের পর সৈকতের বালিয়াড়িতে মাটিচাপা দেওয়া হবে। এরপর এক থেকে দেড় বছর পর দুটির কঙ্কাল উত্তোলন করে বোরিতে সংরক্ষণ করা হবে। 

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা মৃত ডলফিন। ছবি: আজকের পত্রিকাকক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন সাংবাদিক আহমদ গিয়াস। তিনি বলেন, দুই দিনের মধ্যে একসঙ্গে দুই প্রজাতির ডলফিন, পরপইস ও সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মরদেহ ভেসে আসার বিষয়টি অনুসন্ধান জরুরি। কেন বা কীভাবে সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণী দুটির মৃত হলো তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন মনে করছি। স্তন্যপায়ী ইরাবতী ডলফিন ও পরপইস ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। 

প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ। 

এই অধ্যাপক বলেন, নানা কারণে সাগরে এসব প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। তবে প্রাণীগুলোর আবাসস্থলে কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধানে বোরির বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন। সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করে সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

এর আগে গত বুধবার কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি বিপন্ন স্তন্যপায়ী পরপইসের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের রেজুখালের মোহনায় একটি মা কচ্ছপ ও বিকেলে হিমছড়ি সৈকতে একটি ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন ভেসে এসেছিল। এ ছাড়া বোরির হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া সৈকতে অন্তত ২০টি মরা সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে এসেছে। 

গত বছরের ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ-সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এ ছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুই দিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত