বাঙালির পাতে ফিরবে নারিকেলি চেলা ও তিতপুঁটি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১৮: ১২
Thumbnail image

নারিকেলি চেলা ও তিতপুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজননকৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। প্রথমবারের মতো তাঁরা মিঠাপানির এই দুই বিপন্ন প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা পেলেন।

চলতি বছরের মে মাসে এ সফলতা অর্জিত হয়। ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র থেকে নারিকেলি চেলা এবং ময়মনসিংহে স্বাদুপানি কেন্দ্র থেকে তিতপুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজননকৌশল উদ্ভাবন করা হয়।

চেলা মাছের প্রজনন গবেষণায় ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাশরিফ মাহমুদ মিনহাজ, শ্রীবাস কুমার সাহা, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান বলেন, ‘মলা, ঢেলা, পুঁটি ইত্যাদি মাছ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অন্যতম উৎস হিসেবে একসময় বিবেচিত হতো। পরে প্রাকৃতিক জলাশয় কমে যাওয়ায় এসব মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এমন পুষ্টি থেকে সাধারণ ভোক্তারা বঞ্চিত হতে থাকেন। এসব মাছ মানুষের পাতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএফআরআই কাজ করছে।’

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, নারিকেলি চেলা অঞ্চলভেদে কাটারি ও নারকালি চেলা নামে পরিচিত। মাছটি নদী, পুকুর, বিল, হ্রদ ও খালের তলদেশে বসবাস করে। সুস্বাদু হওয়ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছটি খুবই জনপ্রিয়। মাছটিতে মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান ভিটামিন ‘এ’ ও জিংক রয়েছে।

প্রজাতিটিকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা ২০২১ সালে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও চিকলী নদী থেকে ৫-৭ গ্রাম ওজনের নারিকেলি চেলা সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। গবেষণার ফলস্বরূপ সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেন। 

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম বলেন, ‘তিতপুঁটি মাছটি একসময় বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, বাঁওড় ও পুকুরে পাওয়া যেত। তিতপুঁটি মাছের চচ্চড়ি অনেকেরই প্রিয় পদ। মাছটি বাংলাদেশসহ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। আইইউসিএন ২০১৫-এর তথ্য অনুযায়ী মাছটি বিপন্ন প্রজাতির। তিতপুঁটির শরীর রূপালি রঙের ও বক্ষ পাখনার ওপরে একটি এবং পুচ্ছ পাখনার গোড়ায় একটি গোলাকার কালো ফোঁটা রয়েছে।’ 

এ মাছে মানবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ লবণ রয়েছে। শৌখিন লোকেরা মাছটি অ্যাকুরিয়ামেও রাখেন। 

এ ছাড়া সিঁদল ও শুঁটকি তৈরিতে তিত পুঁটি প্রচুর ব্যবহৃত হয়। মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ২০২১ সালে স্বাদুপানি কেন্দ্র, ময়মনসিংহের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এবং ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগ্রহ করে কেন্দ্রের পুকুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। চলতি বছরের মে মাসে দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তিতপুঁটি মাছের পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জিত হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘দেশীয় ছোট মাছ বাঙালির সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এরই আওতায় ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে দেশে বিপন্ন প্রজাতির ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে নারিকেলি চেলা ও তিতপুঁটিসহ মোট ৩৬ প্রজাতির মাছের জিনপুল সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন অবশিষ্ট সব দেশীয় বিপন্ন মাছকে পর্যায়ক্রমে চাষের আওতায় এনে সুরক্ষিত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত