Ajker Patrika

ট্যানারি স্থানান্তরেও নদী দূষণ কমেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৮
ট্যানারি স্থানান্তরেও নদী দূষণ কমেনি

নানা শর্ত দিয়ে ট্যানারি কারখানাগুলোকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও নদী দূষণ কমেনি। আগে শুধু বুড়িগঙ্গা দূষিত হলেও এখন বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী—দুটি নদীই দূষণের শিকার হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ট্যানারি শিল্প ও নদী দূষণ’ শীর্ষক সংলাপে আলোচকেরা এ কথা বলেন। 

ট্যানারি শিল্পের দূষণে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার বুড়িগঙ্গা ছিল এক সময় বিপর্যস্ত। সেই দূষণ থেকে নদীকে রক্ষা করতে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সরিয়ে সাভারে নেওয়ার প্রকল্প হাতে নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন গড়িমসির পর ২০১৭ সালে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে সাভারে যেতে বাধ্য করা হয়। ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও নদী দূষণ কমেনি; বরং দূষণের এলাকা আরও বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্যানারিতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) চালু থাকার কথা থাকলেও তা এখন কার্যকর নেই। ফলে নদী দূষণ বন্ধ হচ্ছে না। 

মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই সংলাপের আয়োজন করে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ। এতে ট্যানারি শিল্প ও নদী দূষণ নিয়ে গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম। 

অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, নদীর পানির মান যাচাইয়ের জন্য ঢাকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। স্থানগুলো হচ্ছে হেমায়েতপুরের নতুন চামড়াশিল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদী, হাজারীবাগের পুরাতন চামড়াশিল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা নদী, সদরঘাটের পাশের বুড়িগঙ্গা নদী এবং শ্যামপুর রঞ্জনশিল্প এলাকার বুড়িগঙ্গা নদী। চারটি স্থানের মধ্যে পানির মান সবচেয়ে দূষিত অবস্থায় রয়েছে হেমায়েতপুরের ধলেশ্বরীতে, যেখানে বর্তমানে ট্যানারি শিল্প রয়েছে। দূষণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হাজারীবাগের পাশের বুড়িগঙ্গা নদী। ট্যানারি স্থানান্তরের পরও সেখানে নদীর পানি দূষণ কমেনি। আগে শুধু বুড়িগঙ্গার হাজারীবাগ এলাকায় হলেও এখন ধলেশ্বরী নদীও অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে। হেমায়তপুরের ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গার উপনদী। ফলে ধলেশ্বরীর দূষিত পানি পরবর্তীতে বুড়িগঙ্গা নদীতে চলে আসে। 

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এ বি এম মাসুদ বলেন, ‘সিইটিপি চালু হয়েছে, তবে কার্যকর হয়নি। এই সিস্টেম তিনটি ধাপে সচল করতে হয়। একটি ধাপ সচল করলে, আরেকটি ধাপ বন্ধ হয়ে যায়। এসব কারণে সিইটিপির সুফল ট্যানারি ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না। ফলে ট্যানারি বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। দূষণ বন্ধ হোক—এটা আমরাও চাই। এর জন্য ট্যানারিতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার কার্যকরভাবে চালু করতে হবে।’ 

ওয়াটারকিপার্সের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুর নিয়ে গেলাম। তাতে কি আমরা দূষণের মাত্রা কমালাম, নাকি আরও ছড়িয়ে দিলাম? আমরা ট্যানারি শিল্পকে ধ্বংস হতে দিতে চাই না। আমরা চাই দূষণ বন্ধ করে পরিবেশসম্মতভাবে এই শিল্পের কলেবর আরও বাড়ুক। ট্যানারি শিল্পের দূষণের সমস্যার সমাধান আমাদের সবাই মিলে করতে হবে। এর জন্য সরকারকে রোডম্যাপ করতে হবে।’ 

আলোচনায় অংশ নেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান বাবুল, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লইমেট চেঞ্জ এক্সপার্ট মনির হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জোহরা, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোলায়মান, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রাকিবুল ইসলাম, বারসিকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ, সিইউপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রুমানা আফরোজ দীপ্তি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ