বিতর্কমুক্তির কমিটিও বিতর্কে

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩২

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আলোচিত আহ্বায়ক কমিটি প্রায় এক বছরের মাথায় আবারও পূর্ণাঙ্গ হলো। তবু বিতর্ক ছাড়েনি দলটির নেতৃত্ব নিয়ে। গতকাল সোমবার ঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে যেমন ইয়াবাসহ ধরা পড়া ব্যক্তিও পদ পেয়েছেন, তেমনি ৬০ লাখ টাকা পদ বাণিজ্য করা নেতাকেও ঠাঁই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কমিটিতে পোড় খাওয়া অনেক নেতার নাম ফেলে রাখা হয়েছে আনাড়ি নেতাদের নিচে। আবার অমাবস্যা চাঁদ হিসেবে বিএনপিতে ছিলেনই না, এমন কর্মীকেও এক লাফে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। কমিটি থেকে সাবেক আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব সিটকে পড়েছেন। এ নিয়ে দলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মজিবর রহমান নান্টু এবং আক্তার হোসেন মেবুল। তাঁরা মাসের মাথায় ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি ৪৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। নানা বিতর্ক জন্ম নেওয়ায় ওই কমিটি বিলুপ্ত করে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও আবুল কালাম শাহিনকে সদস্যসচিব করে ফের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত বছরের ১৫ নভেম্বর সেই কমিটি গতকাল সোমবার ৫১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ হয়। তবু বিতর্ক ছাড়েনি বিএনপিকে।

দলের একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেছেন, হাইকমান্ড বিতর্কিত কমিটি ভেঙে যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁরা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিলেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত ৫১ সদস্যের কমিটিতে ৪৪ নম্বর সদস্য রিয়াজুল ইসলাম সবুজ সম্প্রতি ইয়াবাসহ ডিবির হাতে ধরা পড়েন। তিনি কেন্দ্রীয় এক নেতার ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় মাদকসেবী সত্ত্বেও পদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে ৬০ লাখ টাকায় পদ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠা বাকেরগঞ্জের মো. হারুন অর রশিদকেও পদ দেওয়া হয়।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে জ্যেষ্ঠ নেতা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম সেলিম (৩৫ নম্বর সদস্য), বানারীপাড়ার সাবেক সভাপতি মাহবুব মাস্টার (৩৩ নম্বর সদস্য), বাবুগঞ্জের সাবেক সভাপতি সুলতান আহমেদ খানকে (১২ নম্বর সদস্য) তালিকার নিচে স্থান দেওয়া হয়। অথচ নিষ্ক্রিয় এস এম আব্দুল্লাহ, সাব্বির নেওয়াজ সাগরকে প্রথম সারিতেই (৭ ও ১৫ নম্বর সদস্য) হিসেবে রাখা হয়। সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর এই দুজনকে বিএনপির রাজনীতিতে দেখা যায়নি। আব্দুল্লাহ এবং সাব্বির বিএনপির কেন্দ্রীয় এক সাংগঠনিক নেতার অনুসারী হওয়ায় অপ্রত্যাশিতভাবে দলের মূল্যবান পদে স্থান পাওয়ায় বিস্মিত অনেকেই। কমিটিতে ৩৬ এবং ৩৭ নম্বরে রাখা হয়েছে দুই নারী নেত্রী যথাক্রমে ফারজানা রোজী এবং মারিয়া মুন্নীকে। অভিযোগ উঠেছে, রোজী দলের কোনো পদে নেই। আর মুন্নী মূল দলএখন পর্যন্ত ছুঁতেই পারেননি।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফাতেমা বেগম বলেন, ‘প্রটোকল অনুযায়ী আমি আগেও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলাম।নারীদের ৩০ ভাগ কোটায় আমাকে রাখতেই হবে। সেখানে আমার স্থান না থাকলেও ৩৬ নম্বর সদস্য হিসেবে ফারজানা রোজীকে রাখা হয়েছে।’ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, ‘কমিটি হলে নানা তদবির হয়। যে দুই নারী নেত্রী পদ পেয়েছেন, তাঁরা তদবিরে ঢুকে গেছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত