অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, তদারকি নেই

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৩
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৪৮

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বেকারির পণ্য। নামসর্বস্ব এসব বেকারির কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করে বাজারজাত করা হলেও নজরদারি নেই প্রশাসনের। এতে কোনো নিয়ম মানার প্রয়োজন মনে করেন না বেকারির মালিকেরা।

নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ছোট-বড় প্রায় ৩০টি বেকারির কারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কারখানার নেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন। তারপরও এসব কারখানায় খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিএসটিআইয়ের মনোগ্রাম ব্যবহার করে এসব পণ্য প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের তেল এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দ্বারা উৎপাদিত এসব পণ্য গ্রহণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, ‘পেটের পীড়াজনিত রোগগুলো ভেজাল খাবারের কারণে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা চায়ের দোকানে বেকারির খাবার খান। এতে গ্যাস্ট্রিক-আলসার, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। এসব সস্তা খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে খাদ্যপণ্য তৈরি করত, তাহলে রোগ থেকে কিছুটা মুক্তি পেত সাধারণ মানুষ।’

সরেজমিন গতকাল বুধবার দুপুরে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলাল হাটসংলগ্ন নিউ আজমিরী বাড়িতে দেখা গেছে, বেকারির কর্মচারীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করছেন খাবার। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ছিল বেকারির পণ্য তৈরির পাত্রগুলো। সেসব পাত্রে জমেছে ময়লার আস্তরণ।

কারখানায় তৈরি করা খাবারগুলোও মেঝের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ছিল। কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালি গায়ে কাজ করছিলেন শ্রমিক রুহুল আমিন। ময়লাযুক্ত কড়াই থেকে খালি হাতে ট্রেতে সাজাচ্ছিলেন বিস্কুট তৈরির উপকরণ।

আলাপকালে শ্রমিক রুহুল আমিন জানান, তাঁরা এভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত। দীর্ঘদিন একই পরিবেশে তাঁরা খাদ্যপণ্য তৈরি করছেন। খালি হাতে খাদ্যপণ্য তৈরি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কারখানার মালিক তাঁদের কখনো হ্যান্ডগ্লাভস কিংবা মাথার ক্যাপ দেননি। তাই তাঁরা প্রতিদিন খালি হাতেই খাদ্যপণ্য তৈরি করেন।

পৌর সদর নামার বাজারের তিতাস বেকারির মালিক মো. মাসুদ বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন প্রতি মাসে আসে। দেখে চলে যায়। কেন আসে এবং যায় তা নিশ্চয় বোঝেন। এ কারণে লাইসেন্স ও আইন-কানুন ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে এসব বেকারির কারখানা।’

উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ফাতেমা বেগম জানান, তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিয়োজিত আছেন। সেখান থেকে ফেরার পর অসাধু ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় অভিযানের ব্যবস্থা করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসনিক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। শিগগির সময় বের করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বেকারি কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত