দেশের কাস্টমস বিভাগ পুরোপুরি অটোমেশন করে শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করতে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি কাস্টমস আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। জনস্বার্থে প্রণীত এই আইনের খসড়া প্রায় আড়াই বছর ধরে পড়ে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। একইভাবে সুদের পরিমাণ নির্ধারণ ও ঋণখেলাপি চিহ্নিত করতে ২০২১ সালের ৩১ মে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সেটিও দুই বছর ধরে পড়ে আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এমন অন্তত ৪১টি আইনের খসড়া ২৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আটকে ছিল। এসবের মধ্যে ১৭টি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত এবং ২৪টির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, এসব আইনের খসড়া চলতি বাজেট অধিবেশনেই যাতে বিল আকারে উত্থাপন করা যায়, সে জন্য প্রক্রিয়া শেষ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাগিদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সামরিক সরকারের আমলের অনিষ্পন্ন ৩১টি অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এগুলো নিষ্পন্ন করতে হবে। গত ২৪ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার পর পারিবারিক আদালত আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, চিড়িয়াখানা আইন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইনসহ কয়েকটি আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপনও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দেখতে বলেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, যেন চলতি বাজেট অধিবেশনেই এগুলো উপস্থাপন করা যায়।’

এর আগে ১৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সেগুলো জাতীয় সংসদে পাঠায়নি। ফলে বাস্তবায়নের হার কম হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বাজেট অধিবেশন চলাকালে সংশ্লিষ্ট আইন সংসদে পাঠাতে এবং সামরিক সরকারের আমলের অনিষ্পন্ন অধ্যাদেশগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনা দেন। এরপরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

জানা গেছে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ৪১টি খসড়া আইনের মধ্যে ৪টি করে আছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের। ৩টি করে আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের। ২টি করে আছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; জননিরাপত্তা বিভাগ; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগ; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; জনপ্রশাসন; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের। এ ছাড়া ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১টি করে আইন আছে।

মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়া খসড়া আইনের মধ্যে যেগুলো এখনো সংসদে পাঠানো হয়নি, সেগুলোর মধ্যে আছে—কাস্টমস আইন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন, দ্য স্টেট একুইজেশন অ্যান্ড টেনেনসি (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্টস, বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন, সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন এবং বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পাঠানোর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকলেও দ্রুতই পাঠানো উচিত। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাধারণত চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দ্রুত প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে বিল আকারে সংসদে পাঠানোর নিয়ম।’