বর্ষার শুরুতেই টেঁটার কদর

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২২, ০৮: ২০
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৩: ২৬

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আগৈলঝাড়া উপজেলায় মাছ শিকারের টেটা বিক্রির ধুম পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে টেটা কেনার জন্য ছুটছেন শৌখিন শিকারিরা।

আদিকাল থেকেই মাছ শিকারিদের কাছে টেটা নামক যন্ত্রটি খুবই জনপ্রিয়। টেটা একটি দীর্ঘ বর্শার মতো যা দিয়ে সহজেই নিক্ষেপ করে ছোট-বাড় মাছ শিকারে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক যুগেও মাছ শিকারিদের কাছে টেটার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আষাঢ়ে এই অঞ্চলের খাল, বিল, পুকুর, নদী নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়গুলোতে ইতিমধ্যেই জোয়ারের পানিতে থইথই করছে। অতি বৃষ্টি ও নদীর ঘোলা পানির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও আসতে শুরু করেছে। এতে শিকারিরা স্থানীয় দোকানগুলোতে টেটা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। অন্যদিকে টেটা শ্রমিকদের কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে।

বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে দেখা গেছে টেটা, বাঁশের কুড়া ও বড়শির ছিপ কিনতে মানুষ ভিড় করছেন। এসব টেটা ও অন্যান্য সামগ্রী আকার অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখানে পাইকারি ও খুচরাভাবে এসব বিক্রি করা হয়।

গৈলা বাজারে টেটা ক্রয় কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে হাটের দিন টেটার দোকান বেশি মেলে। এখানে বিভিন্ন আকারের টেটাসহ মাছ শিকারের সব ধরনের উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই এখানে প্রায়ই আসছি।

টেটা তৈরির কারিগর হেলাল সিকদার বলেন, বছরের এ সময়ে টেটা তৈরিতে ব্যস্ততা বাড়ে। এলাকায় বর্ষার পানি থাকাকালীন পর্যন্ত কয়েক মাস টেটা তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন তাঁরা। এখন বর্ষা মৌসুম, তাই মাছ শিকারিদের কাছে টেটার চাহিদা বেড়েছে।

মাছ শিকারে ব্যবহার করা টেটাকে গ্রামাঞ্চলের ভাষায় বলা হয় ফুলকচি। বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর থাকা নদনদী, ধানের জমি ও খালবিলে মাছ শিকারের জন্য শিকারিরা বছর বছর নতুন টেটা কেনেন। আবার জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনও নানা পদ্ধতিতে মাছ শিকারের পাশাপাশি টেটা ব্যবহার করে থাকেন বর্ষা মৌসুমে।

রাত নামলেই বাতি নিয়ে পেশাজীবী মৎস্য শিকারিসহ শৌখিন মানুষজন নেমে পড়েন মাছ শিকারে। দিনের বেলাতেও অনেককে দেখা যায় জমিতে ওঠা বর্ষার নতুন পানিতে দেশীয় মাছ শিকার করতে। আবার কেউ কেউ শহর ছেড়ে গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেও শখের বসে মাছ শিকার করেন।

টেটা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর টেটা বিক্রি তুলনামূলক ভাবে কম হলেও দাম গত বছরের মতোই। টেটা তৈরি করতে বাঁশের চিকন কঞ্চি (কুড়া), ফুলকচি ও নাইলন সুতার প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ শুধু ফুলকচি কিনে বানানোর ঝামেলা এড়াতে বিক্রেতাদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে তৈরি করিয়ে নেন সম্পূর্ণ টেটা।

আবার কোনো কোনো শিকারি শুধুই ফুলকচি ও কুড়া কিনে নিয়ে বাড়িতে নিজেরাই বানিয়ে নিচ্ছেন সম্পূর্ণ টেটা। একটি টেটা সম্পূর্ণ তৈরি করতে ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে টেটা বিক্রির অস্থায়ী দোকান লক্ষ্য করা যায়।

আগৈলঝাড়া সদর বাজারে টেটা বিক্রেতা হাফিজ উদ্দিন জানান, তিনি ১০-১২ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এ টেটা বিক্রি হয়। একটি ফুলকচি, টেটা ২৫০ থেকে এক হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেন এবং কুড়ার ক্ষেত্রে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত রাখেন। কেউ যদি সম্পূর্ণ টেটা তৈরি করিয়ে নেন, তবে ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে।

টেঁটা কিনতে আসা মিনাল সমদ্দার জানান, তাঁর পেশাই মাছ ধরা। তিনি টেটা দিয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ বছর টেটা ও কোচের দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত