স্ট্যান্ডিং কমিটি ছাড়া যেভাবে চলছে বিসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৫০

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিসিবিতে নতুন সভাপতি হিসেবে যাত্রা শুরু করা ফারুক আহমেদ বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েছেন ২৪ দিন হলো। তিন সপ্তাহেও এখনো পুনর্গঠিত হয়নি বিসিবির ২৩টি স্ট্যান্ডিং কমিটি (স্থায়ী কমিটি) ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

স্ট্যান্ডিং কমিটির পুনর্গঠন ছাড়াই স্থায়ী কমিটির দাপ্তরিক কাজগুলো চলছে মূলত ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে। তাঁরাই দাপ্তরিক কাজ শেষ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরাসরি বিসিবি সভাপতির কাছে যাচ্ছেন। ক্রিকেট বোর্ডে এ দৃশ্যও কিছুটা বিরল। আগের বোর্ড সভাপতিরা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই যথেষ্ট প্রতাপশালী হতেন। দাপ্তরিক কাজে তাই হুটহাট সরাসরি তাঁদের কাছে যাওয়ার সুযোগ কমই ছিল বিসিবির বেশির ভাগ ম্যানেজারের। কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাই (সিইও) হতেন বিসিবি সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের সেতু।

বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রমের বাধ্যবাধকতা আছে। স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনে দেরি হওয়ায় প্রশ্নও উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির একজন কাউন্সিলর কাল বললেন, ‘বোর্ড সভাপতি কেন স্ট্যান্ডিং কমিটি দিতে কালক্ষেপণ করছেন, তা বোধগম্য নয়। বিসিবিতে এমনিতেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরিচালনা পরিষদের পরিধি কমে গেছে। নানা কাজ ঝুলে আছে লোকবলের অভাবে। দ্রুতই নির্বাচন আহ্বান করে পরিচালনা পরিষদের পরিধি বাড়িয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠনে হাত দেওয়া উচিত সভাপতির।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিসিবির পরিচালনা পরিষদে যোগ দেওয়া নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন, যেহেতু একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাঁরা জরুরি কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নিচ্ছেন। তবে পরিচালক হিসেবে তাঁর নিশ্চয়ই কোনো না কোনো স্থায়ী কমিটির প্রধান হতে হবে। কোন কোন বিভাগের দায়িত্ব তিনি পাচ্ছেন, সেটা পরিষ্কার না হলে কাজের গতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

ফাহিম বিষয়টি নিয়ে গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে এখন একটা বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আবার অনেকে আসছেন না। যোগাযোগই করা যাচ্ছে না। যখন যে কাজটা সামনে আসছে, সেটা নিয়েই এগোচ্ছি।’

আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিভাগের দায়িত্ব না পেলেও ফাহিম বোর্ডের কাজ কীভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন, সেটি সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমি খেলাধুলাসংক্রান্ত দপ্তরগুলো (টুর্নামেন্ট কমিটি, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল, নারী বিভাগ ইত্যাদি) দেখছি। তা ছাড়া ব্যবস্থাপকেরা তো আছেই। তারাও কাজ করছে। আরও লোক বাড়লে হয়তো ভালো হতো। দায়িত্বগুলো ভাগাভাগি করা সহজ হতো। এত অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করাটা কঠিন। এখন ভাগ করে দুই দিন পর আবার ভাগটা পরিবর্তন করা হয়তো ঠিক হবে না। সে কারণেই হয়তো সময় নেওয়া। হয়তো হয়ে যাবে সামনের বোর্ড সভায়।’

ফাহিম মনে করেন, পরিচালনা পরিষদের সদস্য কম থাকলেও কেউ কারও দাপ্তরিক কাজে হস্তক্ষেপ করছেন না। এখন সিদ্ধান্তগুলো নির্দিষ্ট দপ্তর থেকে ব্যবস্থাপকেরাই নিতে পারছেন। শুধু সভাপতির চূড়ান্ত অনুমোদনটা লাগছে।

সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার সাত দিনের মধ্যে গত ২৯ আগস্ট প্রথম বোর্ড সভা ডেকেছিলেন। যেহেতু পরিচালনা পরিষদের পরের সভাটা নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বোর্ড সভাপতি একটু সময় নিচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ দল ভারতে যাওয়ার পর বোর্ড সভা হতে পারে।

সামনে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি শুরু হচ্ছে। যার শুরুটা হবে অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) দিয়ে। এরপরই বিপিএল। এর মাঝে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (আরব আমিরাতে হলেও আয়োজক স্বত্ব বিসিবির), আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—সব মিলিয়ে বোর্ডের কাজের গতি বাড়াতেই দ্রুত স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠন করা জরুরি বলে মনে করছেন ক্রিকেট সংগঠকেরা। বিসিবির কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম টিটো বলেন, ‘বিসিবিতে দ্রুতই স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠিত হওয়া জরুরি। এরই মধ্যে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন মোহামেডানের ক্লাবের পরিচালক বিসিবির কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান। আমরা অপেক্ষা করছি বাকি কমিটি পুনর্গঠনের জন্য।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত