সুচরিতা-রুবেলের সদস্যপদ বাতিল, জায়েদ খানের স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ৫৯
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৩: ৪৭

কয়েক দিন আগেই চলচ্চিত্রপাড়ায় খবর চাউর হয়েছিল, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারাতে চলেছেন জায়েদ খান। সেই শঙ্কাই সত্যি হয়ে ধরা দিল গতকাল রোববার। তবে বাতিল নয়, আপাতত জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।

শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির নবম মিটিং শেষে বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনটির সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক। তিনি বলেন, ‘মাননীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে আজ আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির নবম মিটিং হয়েছে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমিতির গঠনতন্ত্রের ৭(ক) ধারার আলোকে আমাদের সম্মানিত সদস্য জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করা হলো। সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলী এবং আইনজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর সদস্যপদ বাতিল প্রসঙ্গে পরবর্তী মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করায় জায়েদ খানের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান সাইমন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি লিখিত নোটিশ পাঠানো হয় জায়েদের ঠিকানায়। যেখানে বলা হয়, নিপুণকে নিয়ে ‘মানহানিকর’ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ৭ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হলেও সেই উত্তর আজকে তাঁরা পেয়েছেন বলে জানান সাইমন। তবে মিটিংয়ে সেই চিঠি পড়ার আগ্রহ কেউ দেখাননি বলে জানান তিনি। এ দিন কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে সুচরিতা ও রুবেলের সদস্যপদ বাতিল প্রসঙ্গে সাইমন সাদিক বলেন, গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে তাঁদের (সুচরিতা ও রুবেল) বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৩১ জানুয়ারি রুবেল ও সুচরিতার নামে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় শিল্পী সমিতি। ৬ ফেব্রুয়ারি জবাব দেন সুচরিতা ও রুবেল। তবে উত্তর মনঃপূত হয়নি জানিয়ে তাঁদের কার্যকরী সদস্যপদ বাতিল করে সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠায় শিল্পী সমিতি।

তবে গতকাল বিকেলে জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করার জন্যই কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য অরুণা বিশ্বাস। মিটিং থেকে বেরিয়ে অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘জায়েদ খানের সদস্য পদ স্থগিত করার পরিকল্পনা করেই তারা কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছিল। তাদের উদ্দেশ্যই হলো জায়েদ খানের সদস্যপদ স্থগিত করা। কিন্তু আমরা কঠোরভাবে এর প্রতিবাদ করেছি। কেননা, সাধারণ সম্পাদকের পদটি এখনো বিচারাধীন।’

অন্যদিকে, সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেব। আগামী নির্বাচনে আমাকে আটকানোর জন্যই তারা এসব পরিকল্পনা করছে। আমি কোনো আইন পরিপন্থী কাজ করিনি।’

জায়েদ আরও বলেন, ‘নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েও আমাকে এসব দেখতে হচ্ছে। আরেকজন নির্বাচনে হেরেও জোর করে চেয়ার দখল করে আছে। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে! ধারায় আছে সর্বসম্মতিক্রমে সদস্যপদ বাতিল করা যেতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করে সর্বাধিকজনের সম্মতি নিয়ে সুচরিতা ও রুবেলের মতো সিনিয়র শিল্পীদের সদস্যপদ বাতিল করেছে। এটা অন্যায়।’

এদিকে জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে, এমন খবরে গতকাল দুপুর থেকেই উত্তাপ বিরাজ করছিল এফডিসিতে। জায়েদ খানকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন বেশ কয়েকজন শিল্পী।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এতে সভাপতি পদে জয়লাভ করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। প্রথমে নির্বাচন কমিশন সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এরপর নিপুণ আক্তারের অভিযোগে নির্বাচনের আপিল কমিটি জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণকে বিজয়ী করেন। এরপর তা গড়ায় আদালতে। হাইকোর্ট প্রথমে জায়েদ খানের পক্ষে রায় দেন। সেই রায়ের বিপক্ষে আবার আপিল করে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন নিপুণ। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে চূড়ান্ত রায় এখনো হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত