বিচারকের কাছে ২ কোটি টাকা ঘুষ দাবি: রাজউক পরিচালকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ৪৮
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২: ১৮

পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামকে অফিস সময়ে দপ্তরে পাওয়া কঠিন। বেশির ভাগ সেবাপ্রত্যাশী তাঁকে দপ্তরে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। সংস্থাপ্রধান বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রয়োজনে তাঁকে খুঁজে পান না। কিন্তু রাজউক কর্তৃপক্ষ তা দেখেও নিশ্চুপ থাকে। কারণ, শেখ শাহীনুল ইসলাম নিজ জেলার পরিচয় দিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ থাকার কথা বলে সবাইকে তটস্থ রাখেন। রাজউক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি ছাড়াও টাকার জন্য নিজ দপ্তরে লোকজনকে মারধর করার অভিযোগও আছে। ভুক্তভোগী একজন বিচারক ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার তদন্তে নেমেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-২) মো. হামিদুর রহমান খানকে আহ্বায়ক এবং উপসচিব (প্রশাসন-৩) মো. মনিরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করে গত ৭ আগস্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ১৩ আগস্ট তদন্ত দল রাজউকে গিয়ে শেখ শাহীনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের লোকজন এসেছিলেন। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পাওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামের দপ্তরে ঘুরেও কোনো সেবা পাচ্ছিলেন না। ওই মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগে জানান, একপর্যায়ে তাঁর কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চান পরিচালক শেখ শাহীনুল। একইভাবে বিচারক আবুল হোসেন খন্দকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে জানান, পূর্বাচল প্রকল্পে ৫ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পেয়ে তিনি বিধি অনুযায়ী টাকাও জমা দেন। একপর্যায়ে জানতে পারেন, তাঁকে দেওয়া প্লটটির নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পর নথিটি খুঁজে পাওয়ার দাবি করা হলেও তাতে দেখা যায়, প্লটটির বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামের সঙ্গে তিনি দেখা করলে নথি ঠিক করে দেওয়ার নাম করে ২ কোটি টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। ওই টাকা না দেওয়ায় শেখ শাহীনুল ইসলাম তাঁর নথিটি দেড় বছরের বেশি সময় আটকে রাখেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কিছু অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রণালয় তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা রাজউকে গিয়ে কিছু নথিপত্র চেয়েছি, তারা সেদিন দিতে পারেনি। সময় দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী তারিখে সেই কাগজপত্র উপস্থাপন করবে।’

রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, পূর্বাচল সেলটি পরিচালক নিজের খেয়ালখুশিমতো চালান। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য দুই ব্যবসায়ীকে আলাদাভাবে নিজ দপ্তরে ডেকে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ আছে শেখ শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে রাজউক পরিচালকের দপ্তরে ঘটনা দুটি ঘটে। এ নিয়ে দুই ব্যবসায়ী প্রথমে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে শাহীনুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়। দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন একটি কেমিক্যাল কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক। তিনি রাজউক চেয়ারম্যানের কাছেও এ নিয়ে অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়, শেখ শাহীনুল ইসলাম ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ৩০ শতাংশ সুদে ৫০ লাখ টাকা দেন তাঁকে। কিস্তি আকারে সুদাসলসহ ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা তিনি শাহীনুলকে দিয়েছেন। কিন্তু কোভিডের কারণে ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি পরে নিয়মিত কিস্তি দিতে পারেননি। তাই তাঁকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে হোক। তদন্তে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সত্যতা পাবে না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত