আন্তর্জাতিক নারী দিবস

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৮: ৩১

আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আজকের বিশেষ দিনে সারা বিশ্বের নারীসমাজের প্রতি রইল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। যদিও এই একটি দিনে পুরুষের সঙ্গে নারীর সমতার কথা ঘোষণা করলে হবে না, বছরের প্রতিটি দিনই নারীর অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন, তবু বিশেষ একটি দিনে সেই অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার তাৎপর্য এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অধিকার রক্ষা করা খুবই কঠিন। নারী ও পুরুষ উভয়ের মস্তিষ্কেই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই গভীরে শিকড় গেঁথেছে যে, অনেক সময় উপলব্ধিও করা যায় না, নারীর প্রতি কতটা বৈষম্য এই সমাজে বিদ্যমান।

১৯০৯ থেকে ১৯১১ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে দিবসটি পালিত হতে থাকে। পরে তৎকালীন বামপন্থী শিবিরের সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও দিনটি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করতে শুরু করে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে দিবসটি উদ্‌যাপন করে আসছে।

আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন আছে বটে, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ঘটে না। ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনসহ নানা রকমের সহিংসতা ঘটেই চলেছে। জনসচেতনতা গড়ে তোলার নানা চেষ্টা থাকলেও তা জনমনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারছে না। ফলে নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানেও বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রায় তলানিতে।

বাংলাদেশের নিচে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। ‘নারী ব্যবসা ও আইন’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে অবাধ চলাচল, কর্মক্ষেত্র, মজুরি, বিয়ে, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, ব্যবসার উদ্যোগ, সম্পদ ও অবসর ভাতা ছিল মাপকাঠি। আইনে অধিকার কতটা আছে আর কতটা প্রয়োগ করা যাচ্ছে—এ দুটি সূচকের প্রথমটিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯.৪ নম্বর। দ্বিতীয়টিতে পেয়েছে ৩২.৫ নম্বর। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান সবচেয়ে ভালো নেপালের। এরপর যথাক্রমে রয়েছে ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান।

এখন ভাবার সময় এসেছে, সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেওয়ার কথা আছে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই কেন? দেশের আইনকানুনেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের প্রশ্নটি এলেই হতাশ হতে হয়।

আশার দিক একেবারে নেই, তা নয়। উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে, অনলাইন ব্যবসায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ়। দেশের খেলাধুলায় পুরুষের পাশাপাশি নারীর সাফল্য ঈর্ষণীয়। পোশাকশিল্পের মূল ভিত্তিই গড়ে উঠেছে নারী শ্রমিকদের মাধ্যমে। আবার এটাও দেখা গেছে, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্র নারীর জন্য অনায়াস নয়। শ্রমজীবী পুরুষ শ্রমজীবী নারীর চেয়ে এখনো বেশি মজুরি পান।

নারীর সম-অধিকার প্রশ্নের সঙ্গে জাতির অগ্রগতির প্রশ্ন সরাসরি যুক্ত। নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হলে পশ্চাৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমেই নারী দিবসকে তাৎপর্যময় করে তুলতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত