সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও আ.লীগের নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১১: ০৮
Thumbnail image

মফিজ উদ্দিন কবিরাজ রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। টানা ১৫ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও তিনি। অথচ এটি সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও দলীয় পদে থাকা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেরও পরিপন্থী। সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মফিজ উদ্দিন দুই পদে বহাল রয়েছেন, প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

অবশ্য অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিনের দাবি, তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি বলেই একটা পয়সা খরচ না করে এই কলেজ সরকারি হয়েছে। কলেজের উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও আমি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্র জেলা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছে কি না, আমি জানি না।’

তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘মফিজ উদ্দিন কবিরাজ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, তা আমি জানি না। কোনো পদত্যাগপত্র আমি দেখিনি। পদত্যাগ করলে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হতো, সেটাও হয়নি।’ তিনি বলেন, দলীয় পদে থেকে সরকারি চাকরি যেমন চাকরিবিধির লঙ্ঘন, তেমনি দলের গঠনতন্ত্রেরও পরিপন্থী। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কলেজ ও দলীয় সূত্র বলেছে, টানা ১৫ বছর মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। এর মধ্যেই ২০১৮ সালে তাঁর কলেজ সরকারীকরণ হয়। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের মার্চ থেকে বেতন পাচ্ছেন সরকারি কলেজের স্কেলে। সরকারীকরণের পর রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকেরা দলীয় পদ ছাড়লেও মফিজ উদ্দিন কবিরাজ ছাড়েননি। বরং কলেজ সরকারীকরণের পরও ২০২২ সালের মে মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারও সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

দলীয় নেতা-কর্মী ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও মফিজ উদ্দিন কবিরাজকে দলীয় পদ দেওয়া আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। আবার এটি গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯-এর ২৫ ধারারও পরিপন্থী। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার দাপটে আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ উদ্দিন কবিরাজ নিয়মিত কলেজে যান না। কলেজের চেয়ে তিনি রাজনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। 

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের অত্যন্ত আস্থাভাজন অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েন উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পাননি। এরপর থেকে রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় আয়েনের দুলাভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে মফিজ উদ্দিন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সবশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ব্যানার আগে দেখিনি। পরে দেখেছি। আর মাত্র কয়েক মাস চাকরি আছে। এই সময়ে এসব প্রশ্ন করে কষ্ট না দিলেই খুশি হতাম।’ 

জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পদে থাকতে পারবেন না। এটা চাকরিবিধির লঙ্ঘন। অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত