পাটের দাম নিয়ে চিন্তায় চাষি

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ০৭: ১৮
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১২: ০০

ফরিদপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। চাষিরা বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন তাঁদের উৎপাদিত পাট। তবে বাজারে যে দর পাচ্ছেন, এতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। চাষের খরচ তোলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। তবে পাটের ক্রেতারা বলছেন, পাটের গুণগত মান সঠিক না থাকায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাটের আবাদের মৌসুমে এ জেলায় ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পাট।

জেলার সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাটেই উঠতে শুরু করেছে পাট। পাটের দাম না পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। কারণ, সময়মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায় অধিক মূল্যে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। এতে বেড়েছে তাঁদের খরচ।

পাটের বাজার হিসেবে জেলায় প্রসিদ্ধ হাট কানাইপুর। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার বসে এই বাজার। এখানে প্রান্তিক চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। এখানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পাটকল কর্তৃপক্ষের পাট ক্রয়ের সেন্টার রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাজারে পাট মৌসুমে প্রতি হাটে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে পাটের দর রয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। চাষিরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত দর না পেয়ে হতাশ। তবে পাটের ক্রেতারা বলছেন, পাটের গুণগত মান সঠিক নেই। পানির সমস্যার কারণে পাটের রং এবার নষ্ট হয়েছে। যে কারণে প্রকৃত মূল্যে পাট কিনতে পারছেন না তাঁরা।

কানাইপুর বাজারে পাট নিয়ে আসা চাষি সত্তার মাতুব্বর বলেন, যে দরের আশায় পাট নিয়ে হাটে এসেছি, তা মিলছে না, পাটের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, নিত্যপণের দাম বেড়েছে, কীভাবে সংসার চলবে।

কালাম মোল্লা বলেন, পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যাচ্ছে না। খরচের টাকাও উঠবে না।

এই বাজারের পাট বিক্রেতারা বলেন, ‘যেকোনো মৌসুমের চেয়ে এবারের পাটে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। পাট জাগ দেওয়ার পানিসংকটের জন্য আমরা বিপদে পড়েছি।’

কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পাটের বাজারের জন্য কানাইপুরের বেশ সুনাম রয়েছে, প্রান্তিক চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পাট সরাসরি নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য। কিন্তু এবারের পানিসংকটে পাটের সোনালি রং আসেনি, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।’ তিনি বলেন, এই বাজারে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল কর্তৃপক্ষের এজেন্ট রয়েছে, তারা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এবারের পাটের ভালো রং না থাকায় চাষি পর্যায়ে দর পাচ্ছেন না।

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পাট উৎপাদনের সেরা ফরিদপুর। গোল্ডেন ফাইবারটি এ জেলায় হয়। চাষিরা আবাদ ভালো করেছেন, উৎপাদনও ভালো হয়েছে, কিন্তু পাটের জাগ দেওয়ার সমস্যার কারণে রং আসেনি, যে কারণে চাষি পর্যায়ে দর ভালো পাচ্ছে না। এতে শুধু চাষি নন, পাটের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত (ব্যবসায়ী, মিল কারখানা), সবাই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত