ভদ্রা নদীর সেতুতে ফাটল তিন বছরেও নেই সংস্কার

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৬
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৩৪

ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে ভদ্রা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি তলদেশ থেকে মাঝ বরাবর ফাটল ধরে ২০১৮ সালের শেষের দিকে। এ ফাটলের কারণে সে সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। সে সময় সেতুর দুই মাথায় মাঝ বরাবর পিলার দেওয়াসহ সাইন বোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণ কোনোটাই হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরের ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইউএস এইডের সহযোগিতায় আমেরিকান সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজি রিলিফ ডিপার্টমেন্ট মাত্র ৫ টন মালামাল বহন ক্ষমতা সম্পন্ন এই সেতুটি নির্মাণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেতুটি ব্যবহারে উক্ত নিয়ম মানা হলেও সোলগাতিয়া সেতুটি নির্মাণের পর নওয়াপাড়া থেকে বড় বড় সার, সিমেন্ট, রড বোঝাই গাড়ি, বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে বড় বড় পাথর বোঝাই গাড়ি, ক্লিনকারবাহী গাড়ি, পেঁয়াজ রসুন বোঝাই গাড়ি এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ টন পর্যন্ত মালামাল বোঝাই গাড়ি এ সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। কিন্তু তাঁরা অনেকেই জানেন না যে সেতুটির তলদেশে ফাটল ধরেছে।

বর্তমানে সেতুটি চরম বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ২০১৮ সালে সেতুর দুই মাথায় দেওয়া বিপদসীমার চিহ্নও আর নেই। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনগুলো সেতু পার হচ্ছে। যে কোনো সময় সেতুটির মূল অবকাঠামো নদীতে ভেঙে পড়তে পারে।

এদিকে প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শিল্পনগরী নওয়াপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তবে সেতুটি ধীরে ধীরে নড়বড়ে হয়ে পড়ায় অনেকেই নিরুপায় হয়ে যশোর দিয়ে মালামাল আনা নেওয়া করছেন। এতে অতিরিক্ত খরচ পড়ছে। লাভের পরিবর্তে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে সেতুটি ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে চুকনগরের সঙ্গে শিল্পনগরী নওয়াপাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যশোর জেলার ব্যবসায়ীদের (তিন জেলার মানুষের) ব্যবসায়িক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে উভয় জেলার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩ বছর আগে সেতুটির তলদেশ মাঝ বরাবর ফাটল ধরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুরুলকে আমি ডেকে আনি। তখন আমি দাবি জানিয়েছিলাম সেতুটি সংস্কার করার জন্য। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো কর্ণপাত না করায় আজ সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি এই সেতু দিয়ে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরার এই ৩ জেলার ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করেন। তাই এখানে একটি বড়, টেকসই ও মানসম্পন্ন সেতু অনতিবিলম্বে করতে হবে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘সেতুটির তলদেশে ফাটলের বিষয়টি জানি। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জোর দাবি যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি ভেঙে নতুন একটি সেতু তৈরি করা হোক।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত